
ঢাকা দখলের পরিকল্পনায় আওয়ামী লীগ
- আপলোড সময় : ২২-০৪-২০২৫ ১১:৪৩:৫৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২২-০৪-২০২৫ ১১:৪৩:৫৮ পূর্বাহ্ন


* গোপনে ঢাকামুখী হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা
* নাশকতার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
* পুলিশের মধ্যে এখনো ভয় কাজ করছে : সাবেক আইজিপি
ছাত্র-জনতার গণ অভ্যূত্থানে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নেয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গোপনে দলবদ্ধভাবে ঢাকামুখী হচ্ছেন! গোয়েন্দা সংস্থার হাতে এসেছে এই তথ্য। ধারণা করা হচ্ছে, তারা রাজধানীতে অস্থিরতা তৈরি কিংবা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় পুলিশ প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে গেছে। যদিও স্বেচ্ছায় কারাবরনের জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী আদালতে আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করছেন। তবে বরাবরের মতো শুনানি শেষে তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।
সরকার পরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। পুলিশের মনোবলে ধস নামার সুযোগে বাড়ছে নানা অপকর্ম। এরই মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে এসেছে তথ্য পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গোপনে দলবদ্ধভাবে ঢাকামুখী হচ্ছেন। তাদের মূল টার্গেট এখন পুলিশ। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করা পুলিশবাহিনীর মনোবল ভেঙে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে ফ্যাসিস্টের দোসররা।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের মূল লক্ষ্য পুলিশকে সঠিকভাবে কাজ করতে না দেয়া। এর ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভঙ্গুর হবে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে গত সাত মাসে সারা দেশে পুলিশের ওপর পাঁচ শতাধিক হামলা হয়েছে। পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, সাত মাসে পুলিশের ওপর সর্বোচ্চ হামলার ঘটনা ঘটেছে মার্চে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মব সৃষ্টি করে পুলিশের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এছাড়া ফ্যাসিস্টের দোসররা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতারে তৎপর থাকা পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে মনোবল ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যাসহ পাঁচ মামলার আসামি পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা। ১২ মার্চ তাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু গ্রেফতারের পর তাকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা করে গোলাম মোস্তফার সহযোগীরা। এরপর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সহিদুল ওসমান মাসুম মামলা করেছেন। তবে হামলাকারী কাউকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ২৩ মার্চ হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় স্বজনগ্রাম পুলিশ তদন্তকেন্দ্র এলাকায় পুলিশকে মারধর করে হাতকড়াসহ আশিক মিয়া নামের এক আসামিকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ সময় পুলিশের দুই সদস্যকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনায় লাখাই থানায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হলেও আশিক ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশে একইভাবে পুলিশকে টার্গেট করে হামলা চালানো হচ্ছে। এসব হামলার ঘটনায় আহত হচ্ছেন অনেক পুলিশ সদস্য। পুলিশকে হামলার মূল লক্ষ্য তাদের মনোবল ভেঙে দেয়া। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য বলছে, প্রায় দিনই দেশের কোথাও না কোথাও হামলার শিকার হচ্ছে পুলিশ। গত ৭ মাসে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মোট ৩২২টি মামলা হয়েছে। বেশির ভাগ হামলা হচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি)। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সাত মাসে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় ৬৩টি মামলা হয়েছে।
সূত্র বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ২৪টি, অক্টোবরে ৩৪টি, নভেম্বররে ৪৯টি ও ডিসেম্বরে ৪৪টি মামলা হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৮টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭টি এবং মার্চে ৯৬টি মামলা হয়েছে। অর্থাৎ পুলিশ সব থেকে বেশি হামলার শিকার হয়েছে মার্চে। মার্চে ডিএমপিতেই ২৩টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে গোয়েন্দা সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে থেকে দেশকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরাও কূটকৌশলের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করছে। তাদের মূল লক্ষ্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে বিঘ্ন ঘটানো। বিষয়টি নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সব বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো হয়েছে। সামনে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে বলে মনে করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঠ পুলিশে দায়িত্ব পালনকারীদের মধ্যে বিরাজ করছে ‘মব’ আতঙ্ক। আসামি ধরে থানায় আনার পর থানাতেও হামলার ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে বেশি মব আতঙ্কে আছেন রাজধানীতে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশের সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। তা না হলে এ ধরনের হামলা চলতেই থাকবে। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা যুগান্তরকে বলেন, পুলিশের কাজটাই অপ্রীতিকর। এসব ঘটনা (পুলিশের ওপর হামলা) ঘটতেই পারে। অপরাধী সুযোগ নেবেই। তবে এটা প্রতিরোধ করতে হবে। স্ট্রং অ্যাকশন হলে এগুলো কমে আসবে।
এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ বলেন, পুলিশ একটি অস্বাভাবিক সময় পার করছে। তাদের ওপর দিয়ে সাত-আট মাসে যে ধকল গেছে, তা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে, এখনো ট্রমায় আছে অনেকে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, পুলিশের ওপর হামলাকারীরা গ্রেফতার হচ্ছে। আর যারা এখনো গ্রেফতার হয়নি, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। পুলিশের ওপর হামলার বিষয়ে কোনোভাবেই আমরা ছাড় দেব না। তবে অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের অবস্থানে না ফেরার অন্যতম কারণ পুলিশের ওপর হামলা। আবার এসব অপকর্মে জড়িতদের বেশির ভাগই পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে পুলিশের অনেক সদস্য প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকছেন। বিশেষ করে অভিযানে গিয়ে তাদের বেশি সতর্ক থাকতে হচ্ছে।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামে সহিংসতা, দখল, সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। একদিকে রাজনৈতিক শূন্যতা, অন্যদিকে পুলিশের দুর্বল মনোবলের সুযোগে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশের একটি গোপন রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় শেখ হাসিনাকে ফেরানোর দাবিতে শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের সমবেত হতে বলা হয়েছে। এই তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামের সব থানাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। গত ৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিএসবি) থেকে সব থানায় একটি চিঠি পাঠানো হয়। এতে অস্থির পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সদস্যদের জন্য ৮ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়, যার মধ্যে রয়েছে সন্দেহভাজনদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, যাদের নামে মামলা আছে তাদের মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতার, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসানো, নৌঘাট, রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে নজরদারি বাড়ানো, বিএনপি ও জামায়াতপন্থি স্থানীয় নেতাদের সহায়তায় ঢাকামুখী যাত্রা প্রতিহত করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি করে উসকানিদাতাদের শনাক্তকরণ, অর্থদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, ভাড়ায় চালিত গাড়ি ও স্ট্যান্ডগুলোর ওপর নজর রাখা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) মোহাম্মদ রাসেল বলেন, সরকার পরিবর্তনের সময় কিছুটা ধাক্কা খেলেও এখন পুলিশের মনোবল পুনরুদ্ধার হয়েছে। আমরা নিয়মিত অভিযানে আছি এবং অপরাধে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মাহমুদা বেগম বলেন, নগরীতে পুট ও নাইট পেট্রোল, নতুন নতুন চেকপোস্ট, এবং মিনি টিম গঠন করে কাজ করা হচ্ছে। যেসব এলাকা অস্থিরতার ঝুঁকিতে আছে, সেখানে বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জুনায়েত কাউছার বলেন, আমি নির্দিষ্ট কোনো চিঠির বিষয়ে নিশ্চিত নই, তবে হুমকি বা গুজব পেলে আমরা নিয়মমাফিক প্রস্তুতি নিই, যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে। পুলিশ সবসময় সচেতন ও সতর্ক রয়েছে।
রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গোলাগুলির মামলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ১০ নেতাকর্মীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ১৫ এপ্রিল দুপুরে তারা রাজবাড়ী সদর আমলী আদালতে আত্মসমর্পণ করে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তামজিদ আহমেদ তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কারাগারে পাঠানো নেতাকর্মীরা হলেন-রাজবাড়ী জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও মিজানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আজম আলী মণ্ডল, চন্দনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রব, যুবলীগ নেতা মো. গোলাম মালেক রিংকু, আবু বক্কর সিদ্দিক, মো. আবির শেখ, মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মুহাম্মদ ফিরোজ উদ্দিন, সাম্পা নিয়োগী, কাজী রাফি আহম্মেদ সৌরভ ও মো. মানিক সরদার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা মামলায় রাজবাড়ীতে আওয়ামী লীগের ২০ নেতাকর্মী গত ১৩ এপ্রিল দুপুরে আত্মসমর্পণ ক?রেন রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। পরে বিচারক তাম?জিদ আহ?মেদ তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন-রাজবাড়ী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দীন আহম্মেদ সুজন, সাজ্জাদুল কবির জিম, ইব্রাহিম মণ্ডল, দেলোয়ার হোসেন রনি, সোহরাব রিপন মোল্লা, রনি, আমিরুল ইসলাম, আইয়ুব শেখ, পান্নু সরদারসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ২০ নেতাকর্মী। মামলাটি করেছেন শিক্ষার্থী রা?জিব মোল্লা। এতে সাবেক এম?পি কাজী কেরামত আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলীসহ ১৭০ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৩০০ জন?কে আসামি করা হয়। ৩০ আগস্ট রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা?টি হয়। তবে রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদাল?তের সরকারি কৌঁসুলি (পি?পি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, আসামিরা হাইকো?র্টের আদেশ অমান্য ক?রে?ছেন এবং জজ?কো?র্টে হা?জির হ?ননি। আজ ম্যাজিস্ট্রেট কো?র্টে হা?জির হলে উচ্চ আদাল?তের আদেশ অমান?্য করায় বিচারক সবাইকে কারাগারে পাঠান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার পৃথক তিনটি মামলায় নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল লিওনসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৪৮ নেতা-কর্মীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ১০ এপ্রিল দুপুরে লোহাগড়া আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাবরিনা চৌধুরী এ আদেশ দেন। এ সময় আদালত চত্বরে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। নড়াইল জজকোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট এস এম আব্দুল হক বলেন, গত বছরের ৪ আগস্ট নড়াইলের লোহাগড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৪৮ আসামি আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। আদালতের বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের আদালত থেকে কারাগারে নেয়া হয়। বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে হামলা ও নাশকতার মামলায় জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ৮ নেতাকর্মীকে ৬ জানুয়ারি দুপুরে জামালপুর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আত্মসমর্পণ করেন। পরে জামিন আবেদন করলে বিচারক মাহমুদা আক্তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে প্রত্যেককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আত্মসমর্পণ করা নেতাকর্মীরা হলেন-জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ গোলাম রব্বানী, চরপাকেরদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মঞ্জুরুল করিম মঞ্জু, বালিজুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইত্রাজুল ইসলাম মহির, উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আতোয়ার হোসেন, শহর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ইকবাল হোসেন, সিধুলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিব হাসান বাবু, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার তানভীর সম্পদ ও ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সদস্য মতিউর রহমান মতি। এ সময় আদালত থেকে কারাগারে নেয়ার সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জয়বাংলা সেøাগান দেন। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। এটি ছিল প্রথম ধাপ। পর্যায়ক্রমে অনেক নেতাকর্মী এভাবেই আত্মসমর্পণ করবেন। গত ২২ যশোর জেলা জজ আদালতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৬৯ জন নেতাকর্মী আত্মসমর্পণ করেছেন। পরে আদালতের বিচারক আত্মসমর্পণকারীদের জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এদিন দুপুরে যশোরের সদর উপজেলা, বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা থেকে আদালতে উপস্থিত হয়ে স্বেচ্ছায় আত্মসর্ম্পণ করেন আওয়ামী লীগের ওইসব নেতাকর্মী। এদিন একযোগে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ প্রভৃতি সেøাগান দিয়ে তারা আদালতের এজলাসে প্রবেশ করেন। বিচারকের আদেশের পরও তারা সেøাগান দিতে দিতে পুলিশের প্রিজন ভ্যানের দিকে এগিয়ে যান।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ