
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাভোগী ও সুবিধাবাদী দল নয় - জিএম কাদের


বিশেষ প্রতিবেদক
জাতীয় পার্টি (জাপা) কোনো সুবিধাবাদী দল নয় বলে দাবি করেছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, আমাদের নামে অনেক ধরনের অপপ্রচার করা হচ্ছে। কিছু মানুষ আমাদেরকে নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে জানাশোনা কথাকে তারা ভুলভাবে তুলে ধরছেন। তাদের কথা হলো-আমরা সুবিধাবাদী, সুবিধাভোগী। কিন্তু আমরা বলতে চাই জাতীয় পার্টির সিংহভাগ মানুষ সব সময় জনগণের পাশে ছিল। জনগণের স্বার্থে তারা সংগ্রাম করেছে। আগামীতেও তারা জনগণের পাশেই থাকবে।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত বর্ধিত সভায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরিফা কাদের।
জাতীয় পাটির চেয়ারম্যান বলেন, একটা কথা আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আর কোনো সুবিধাভোগী, সুবিধাবাদী রাজনীতি জাতীয় পার্টি আমার নেতৃত্বে কখনো আর করবে না। কেউ যদি করতে চান, তাদেরকে দলে স্থান দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আমরা যাতে কাউন্সিল করতে না পারি তার বন্দোবস্ত হচ্ছে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে। আমরা যখন হল ভাড়া করতে যাচ্ছি, কেউ আমাদের হল দিতে চাচ্ছে না। এই পথ দেখিয়ে লাঙল কেড়ে নেয়া, আমাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এগুলোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। মাঠে থাকতে হবে, যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়া যাবে না। আমরা মাঠে থাকব। জি এম কাদের বলেন, এমপি হওয়ার জন্য আমরা রাজনীতি করি না। জনগণের জন্য আমরা মাঠে থাকবো। আমরা লোভ লালসার রাজনীতি করি না। আমরা ব্যবসার রাজনীতি করি না। জনগণ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন দাবি করেন জাপা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, সংসদে দাঁড়িয়ে কোটা আন্দোলনের সমর্থন করেছিলাম। সরকারকে বলেছিলাম মেনে নেন। আমরা আন্দোলনকারীদের পক্ষে ছিলাম। সরকার নিজেরাই দল ঘোষণা করছেন মন্তব্য করেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। আমরা এখন অশুভ ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছি। ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে দেশ চলে যেতে পারে। এসব সমস্যার সমাধানের প্রথম ধাপ হলো নির্বাচন। আমরা নির্বাচন চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ডিসেম্বরের আগে বা পরে হলেও আপত্তি নেই। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হতে হবে।
২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করে জাতীয় পার্টি মোট চারটি নির্বাচন করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অতীতের এই সিদ্ধান্তের কারণে এখন তারা চাপে আছে। সরকার পতনের পর বিভিন্ন মহল থেকে দলটিকে আওয়ামী লীগের দোসর বলা হচ্ছে। যদিও জি এম কাদের বার বার এই অভিযোগ অস্বীকার করে শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনা করেছেন বলে বক্তব্য দিয়েছেন। দেশে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই মন্তব্য করে জি এম কাদের বলেন, মানুষের জান-মাল এবং ইজ্জতের কোনো নিরাপত্তা নেই। আপনি আজকে কোথাও যাচ্ছেন, কেউ আপনাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে না, গুলি করে মেরে ফেলবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা কোথাও নেই। এখন দেশে একটা কঠিন সময় পার করছি আমরা। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ হতাশ এবং আতঙ্কগ্রস্ত; এটাই হল বাস্তবতা। বেশিরভাগ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিষ্পেষিত। স্বাভাবিকভাবে তাদের যে অধিকার, তারা সেটা ভোগ করতে পারছেন না এবং এ বিষয়ে তারা কোনো বিচারও কারো কাছে তারা দিতে পারছেন না।
মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, আপনার বাড়িঘর এবং ব্যবসাকেন্দ্র হঠাৎ করে কেউ এসে সরাসরি আক্রমণ করবে না, লুটতরাজ করবে না, এটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আপনাকে যেকোনো জায়গায় অপমানিত করার জন্য যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে। আপনার পরিবার নিয়ে আপনি সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারবেন, তার নিশ্চয়তা আজ বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নেই।
তিনি বলেন, এই প্রেক্ষিতে আমরা বিশ্বাস করি, নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষ আমাদের উপর ভরসা করতে চায়। এখন এই সিংহভাগ মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর মতো লোক, দল বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে উঠতে পারছে না। অত্যাচার-নিপীড়ন তাদের উপর হচ্ছে। আমরা দাঁড়িয়ে আছি এবং দাঁড়িয়ে থাকব।
দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে জিএম কাদের বলেন, আমি মনে করি এখনই সময়। আল্লাহ আমাদেরকে এই সুযোগ দিয়েছেন। আপনারা দাঁড়িয়ে যাবেন, নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের পাশে। কোনোরকম ভয়-ভীতি, শঙ্কিত হবেন না। আপনারা যদি জনগণের কথা বলেন, জনগণ আপনাদের সমর্থন দেবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ