ঢাকা , শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫ , ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
গোপালগঞ্জে হামলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়-আইএসপিআর সারাদেশে মবোক্রেসির রাজত্ব হচ্ছে-সালাহউদ্দিন আহমদ পোরশায় ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের উপজেলা কাউন্সিল গঠিত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা কথাই বলছেন পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ : বিএনপি আবার গোপালগঞ্জ যাবো, জেলার মানুষকে মুজিববাদ থেকে মুক্ত করবো -নাহিদ গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা তদন্তের দাবি আসকের গোপালগঞ্জে নিহত চার জনের দাফন ও সৎকার সম্পন্ন এসএসসিতে অকৃতকার্যদের মার্চ টু সচিবালয় কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা ড্রিমলাইনার রক্ষণাবেক্ষণে বাড়তি নজর দিচ্ছে বাংলাদেশ বিমান উদীচী সভাপতি বদিউর রহমান না ফেরার দেশে দুদকের মামলায় সম্রাটের বিচার শুরু, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ২১ আগস্টের মামলায় তারেক ও বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি ২৪ জুলাই সমাগমে দুর্ভোগের আশঙ্কায় আগাম দুঃখ প্রকাশ জামায়াতের ভেঙে ফেলা বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা নয়-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ পূর্বপরিকল্পিত রাবিতে তিন কর্মকর্তাকে পুলিশে দিলো সাবেক শিক্ষার্থীরা কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫ ইউনিট সচল, উৎপাদন বেড়ে ২১৮ মেগাওয়াট নোয়াখালীতে বাসে যাত্রীকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল গ্রেফতার ২
* অনুমোদহীন ভূঁইফোঁড় ওসব কিন্ডারগার্টেনে কোমলমতি শিশুরা যথাযথ শিক্ষা পাচ্ছে না * অনেক শিক্ষার্থীই উচ্চস্তরে গিয়ে ঝরে পড়ছে

মানহীন কিন্ডারগার্টেনে ধ্বংস শিশুর ভবিষ্যৎ

  • আপলোড সময় : ১৮-০৪-২০২৫ ১১:১০:৫৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৮-০৪-২০২৫ ১১:১০:৫৪ অপরাহ্ন
মানহীন কিন্ডারগার্টেনে ধ্বংস শিশুর ভবিষ্যৎ
দেশজুড়ে অনুমোদনহীন হাজার হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল কার্যক্রম চালাচ্ছে। করা হচ্ছে না নিয়মনীতির তোয়াক্কা। রাজধানীসহ সারা দেশে পাড়া-মহল্লার অলিগলি, ফ্ল্যাট বাড়ি বা ছাদে ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গড়ে উঠেছে হাজার হাজার বেসরকারি প্রাক-প্রাথমিক ও কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুল। কিন্তু অনুমোদন রয়েছে প্রায় ৪শ কিন্ডারগার্টেনের। বাকিগুলো অনুমোদনহীন। আর ওসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২ কোটি শিশু পড়াশুনা করছে। কিন্তু অনভিজ্ঞ শিক্ষক, সঠিক সিলেবাসের অভাব এবং উপযুক্ত গাইডলাইন না থাকায় শিক্ষার্থীরা ওসব প্রতিষ্ঠান থেকে মানসম্মত শিক্ষার ছিটেফোঁটা পাচ্ছে না। অথচ নেয়া হচ্ছে ইচ্ছেমতো ভর্তি ফি, টিউশন ফি ছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষার নামে ফি। এমনকি নোট-গাইড ফি দিতেও বাধ্য করা হচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ছোট পরিসরে শুরু করলেও এখন স্কুল অ্যান্ড কলেজ নাম দিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনে ওসব কিন্ডারগার্টেনের অনুমোদন না থাকায় তারা অন্য স্কুলের নামে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিজেদের শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষায় বসাচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) এবং শিক্ষাখাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে কর্মরত অনুমোদনহীন অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ইংরেজি মাধ্যমেও শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। সেখানে প্লে-গ্রুপ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে। অথচ অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানেরই পড়ানোর কথা সর্বোচ্চ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু অবৈধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পাড়া-মহল্লায় চটকদার ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। আর ওসব বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে অভিভাবকরাও তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অবৈধ কিন্ডারগার্টেনগুলোর হাতে তুলে দিচ্ছেন। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই অস্বাস্থ্যকর ঘিঞ্জি ও সংকীর্ণ পরিবেশে ক্লাস ও পরীক্ষা চলে। শরীরচর্চার আলাদা জায়গা নেই; শ্রেণিকক্ষেই জাতীয় সংগীত এবং শপথ পাঠ হয়। এমনকি প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন অনেক প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ। দিনের বেলায় বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হয়। তাছাড়া নেই পর্যাপ্ত শিক্ষকও। যারা ওসব কিন্ডারগার্টেনে পাঠদান করাচ্ছেন তাদের অধিকাংশই কলেজপড়ুয়া। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা বলে দিনের পর দিন তাদের দিয়েই ক্লাস-পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, অনুমোদহীন ভূঁইফোঁড় ওসব কিন্ডারগার্টেনে কোমলমতি শিশুরা যথাযথ শিক্ষা পাচ্ছে না। তাতে অনেক শিক্ষার্থীই উচ্চস্তরে গিয়ে ঝরে পড়ছে। ওসব প্রতিষ।ঠানে নার্সারি ও কেজির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের পাশাপাশি প্রায় এক ডজন বই পড়তে হয়। অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুলে প্লে-গ্রুপে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কোনো বই না থাকলেও ওই স্তরের শিশুদেরই বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি, বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি ব্যাকরণ, জ্যামিতি, অ্যাকটিভ ইংলিশ, ধর্ম, সাধারণ জ্ঞান, পরিবেশ পরিচিতি, ওয়ার্ড বুক, ড্রয়িং বুকসহ ১৪টি ডায়েরি কিনতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তী ক্লাস নার্সারিতেও ১২টি বই ও ১৫টি ডায়েরি, কেজিতে এনসিটিবির তিনটি বইসহ ১২টি বই পড়ানো হচ্ছে। এভাবে প্লে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তকের বাইরে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত বইয়ের  বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। তাতে শিক্ষার্থীর একদিকে যেমন মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত বইয়ের চাপে বিবর্ণ হচ্ছে শৈশব। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত এ-সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন না হলে কিন্ডারগার্টেনের নামে লাগামহীন শিক্ষাবাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। অন্যগুলো কিন্ডারগার্টেনসহ বেসরকারি বিদ্যালয়। কিন্তু বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশের নিবন্ধন নেই। ইচ্ছেমতো চলছে। আগে একটি বিধিমালা থাকলেও সেটি বাস্তবে কাজে আসেনি। এখন সেটিকে আরো যুগোপযোগী করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যত্রতত্র অনুমোদহীনভাবে গড়ে তোলা প্রাক-প্রাথমিক ও কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর লাগাম টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সব স্কুলকে এক ছাতার নিচে আনতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। ওসব প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করতে আগের নীতিমালা কিছুটা সংশোধন আনতে একটি সাব-কমিটি করা হয়েছে।
এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী ভাড়া কিংবা স্থায়ী ভবনে হোক, মহানগর এলাকায় ন্যূনতম ৮ শতক, পৌরসভায় ১২ শতক এবং অন্য এলাকায় ৩০ শতক জমিতে কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয় হতে হবে। তাছাড়া শিক্ষকদের পৃথক রুম, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি ও সুপেয় পানির সুব্যবস্থাসহ ছেলেমেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অধিকাংশ স্কুল ওসব নিয়ম না মেনেই গড়ে উঠেছে। তাছাড়া কিন্ডারগার্টেনে যে মানের শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছে তাদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে সবসময়ই প্রশ্ন উঠেছে। তারা না বুঝেই বাচ্চাদের অতিরিক্ত চাপ দেয়। মুখস্থ বিদ্যার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ’
অন্যদিকে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনে সংশ্লিষ্টদের মতে,, কিন্ডারগার্টেন মূলত প্রাথমিক শিক্ষার জন্য। অথচ সেখানে অবৈধভাবে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে। সরকারি নজরদারি না থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক জন কর্মকর্তা জানান, এনসিটিবি আইন-২০১৮ অনুযায়ী বাংলাদেশে পরিচালিত সব স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রম এনসিটিবির নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হবে। একই সঙ্গে যারা বিদেশি কারিকুলামে পাঠদান করছেন তাদেরও এনসিটিবির অনুমোদন নিতে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু কোনো কিন্ডারগার্টেন স্কুলই এ নিয়ম মানছে না।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ