
প্লট দুর্নীতিতে শেখ হাসিনা-জয়সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
- আপলোড সময় : ১৬-০৪-২০২৫ ০৩:৩০:১৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৬-০৪-২০২৫ ০৩:৩০:১৬ অপরাহ্ন


তথ্য গোপন করে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের করা মামলায় ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করতে পারে ইন্টারপোল। বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারির হুমকি দিয়েছে ঢাকা।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিব মামলার অভিযোগ পত্র আমলে গ্রহণ করে এ আদেশ দেন। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৯ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়েছে। এ নিয়ে দুদকের করা ৬ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
গ্রেফতারি পরোয়ানা দেয়া অন্য আসামিরা হলেন-গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন ও সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সাবেক সদস্য শফি উল হক, পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম, পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা, পূরবী গোলদার, আনিছুর রহমান, নাসির উদ্দীন, সামসুদ্দীন, নায়েব আলী খুরশীদ আলম, শরীফ আহমেদ, শহীদ উল্লা, ওয়াছি উদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম দুই মামলায় রয়েছে। এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক এস.এম রাশেদুল হাসান বাদী হয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রধান ও শেখ হাসিনাকে সহযোগী আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় আরো ১৩ জনকে আসামি করা হয়। তদন্ত শেষে ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করে দুদক। গত ১৪ জানুয়ারি দুদকের উপ পরিচালক মো. সালাউদ্দিন বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করে দুদক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা নিজের মালিকানায় ও তার ছেলে, মেয়ে, বোন এবং বোনের দুই ছেলে-মেয়ের নামে ঢাকা শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরেও সেই তথ্য গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এতে বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার দফতরসহ প্রকল্পের বরাদ্দ বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মচারীদের প্রভাবিত করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এ ছাড়া এর আগে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা ও ছেলে জয়, মেয়র পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের নামে থাকা জমিসহ বাড়ি ও ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন একই আদালত। এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টে থাকা ১৬ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফ্রিজ করারও আদেশ দিয়েছেন আদালত।
অপরদিকে যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করতে পারে ইন্টারপোল। এ ব্যাপারে ডেইলি মেইলে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর একটি আদালত গত রোববার টিউলিপ ও তার পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। আগামী ২৭ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে তাকে জামিন চাইতে বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তিনি আদালতে হাজির না হলে ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তাকে খুঁজে বের করে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, যদি অভিযুক্ত টিউলিপ আদালতে আত্মসমর্পণ না করেন, তাহলে বাংলাদেশ পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে।
দুদকের অভিযোগ, টিউলিপ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চাপ দিয়ে রাজধানীর অভিজাত এলাকা পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে তার মা, ভাইবোনের নামে ৩টি প্লট বরাদ্দ নেন। এসব ব্যক্তি বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ জাকির হোসেন এ মামলার চার্জশিট গ্রহণ করেন এবং টিউলিপকে আদালতে পলাতক হিসেবে ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে তার মা শেখ রেহানা (৬৯), ভাই রাদওয়ান (৪৪) ও বোন আজমিনা (৩৪)-র বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিউলিপ ও তার পরিবার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, এটা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি এই ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগকে কোনো মর্যাদা দিতে চাই না। আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই, আমি কিছু ভুল করেছি। এর আগে জড়িত জানুয়ারিতে সিটি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ। ওই সময়ে ডেইলি মেইল প্রকাশ করে, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশে রাশিয়া-নির্মিত পারমাণবিক প্রকল্প থেকে তিন দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও তিনি এই অভিযোগও অস্বীকার করেন।
টিউলিপের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি লন্ডনের কিংস ক্রসে যে ফ্ল্যাটে থাকেন, সেটি তিনি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এক ডেভেলপারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছেন। যদিও এর আগে বাবা-মা কিনে দিয়েছেন বলে দাবি করেছিলেন তিনি। ডেইলি মেইল জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার যদি ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করে, তবে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী ও বিচারকদের কাছে পরিষ্কার প্রমাণ পেশ করতে হবে। কারণ যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে ২-বি শ্রেণির প্রত্যর্পণযোগ্য দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ