
হেফাজত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির মতবিনিময়
আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়ে ঐকমত্য হেফাজত-এনসিপি
- আপলোড সময় : ১০-০৪-২০২৫ ০২:২৬:০৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১০-০৪-২০২৫ ০২:২৬:০৫ অপরাহ্ন


হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির বৈঠকে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছেন নেতারা। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে উভয় দলের নেতারা গণহত্যার দায়ে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার, বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল এবং রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা, নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের বিচারের পদক্ষেপ দৃশ্যমান করা এবং আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণার দাবির বিষয়ে একমত হন। মতবিনিময়কালে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সময়ে হেফাজতে ইসলাম ও অন্যান্য দলগুলোর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মিথ্যা হয়রানিমূলক ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার ও নিষ্পত্তি বিষয়ে একমত পোষণ করেন দুই পক্ষের নেতারা। এ ছাড়া সমসাময়িক রাজনৈতিক ও চলমান সংস্কার বিষয়েও আলোচনা করেন তারা। বৈঠকে এনসিপির সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবে বহুত্ববাদ নিয়ে আপত্তি জানায় হেফাজতে ইসলাম। বহুত্ববাদকে অস্পষ্ট ও ধোঁয়াশাপূর্ণ কথা বলে আখ্যায়িত করেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। তারা সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস এবং আস্থা ফিরিয়ে আনার মতামত দেন। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার কথা জানিয়েছে এনসিপি। এর আগে সংবিধান সংস্কার কমিশনে দেয়া সংস্কার প্রস্তাবে সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদের প্রস্তাব দিয়েছিল এনসিপি।
এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের পক্ষে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, নায়েবে আমির আহমেদ আবদুল কাদের, মাওলানা আহমেদ আলী কাসেমী ও মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী। আর এনসিপির পক্ষে অংশ নেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী, সংগঠক মো. সানাউল্লাহ ও রফিকুল ইসলাম আইনী।
বৈঠক শেষে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম বলেন, গণহত্যার দায়ে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার, বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের বিচারের দৃশ্যমান তৎপরতা এবং আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা এসব বিষয়ে বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে। তবে নির্বাচনের বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনী বলেন, নির্বাচন নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। তবে নির্বাচনের আগে যেন বিচার-সংস্কারের যেন একটি রোডম্যাপ পাওয়া যায় সে বিষয়ে কথা হয়েছে। গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং হেফাজতে ইসলামের নানা পর্যায়ের নেতাদের ওপর দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, হেফাজতের পক্ষ থেকে সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জানানো হয়েছে। সংবিধানে বহুত্ববাদ শব্দটা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। এনসিপি এটি পুনর্বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ শাসনামলে আলেম ও বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহারের বিষয়ে সবাই যেন একসঙ্গে কাজ করে, সে বিষয়েও হেফাজতের নেতারা আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরের নৃশংসতাসহ আওয়ামী লীগ আমলে গুম, খুনের বিচার ও সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আগামী ৩ মে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের প্রসঙ্গেও কথা বলেন হেফাজত নেতারা। এছাড়া সংস্কার বিষয়ে নিজেদের প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা করে হেফাজত ও এনসিপি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ