ঢাকা , সোমবার, ১২ মে ২০২৫ , ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সাতাশ পর্যন্ত টাইগারদের দায়িত্ব পাচ্ছেন টেইট ক্ষমা চাইলেন রিশাদ হোসেন টেস্ট থেকে অবসর নিলেন বিরাট কোহলি কোহলির পর অবসরের ইঙ্গিত দিলেন রোহিত আইপিএল শুরু হলেও ফিরছেন না অষ্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা রিয়ালের সাথে জয় পেলো বার্সা ইয়ামালের প্রশংসায় ফ্লিক ওয়েস্টহ্যামের কাছে হারের স্বাদ পেলো ম্যানইউ অভিযোগ-দুর্নীতির তথ্য জানাতে নতুন ব্যবস্থা সহযোগী শাহরিয়ার বিপ্লব এখনও অধরা রংপুরে ২৯ হাজার গ্রাহকের ১২১ কোটি টাকা লোপাট জাতীয় পার্টির নিবন্ধন বাতিল দাবি গণঅধিকার পরিষদের নতুন সংবিধান প্রণয়ন হতে অনেক সময় লাগবে-আসিফ নজরুল পুঁজিবাজার পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচ নির্দেশনা অনলাইনেও নিষিদ্ধ হচ্ছে আ’লীগ, বন্ধ সব পেজ ৭৮ জনকে পুশইন ভারতের নৌবাহিনীর আওয়ামী লীগকে স্থায়ী নিষিদ্ধসহ ৩ দাবি তীব্র তাপদাহে দুর্বিষহ জনজীবন আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে আমরা আনন্দিত-ফখরুল একদিনে বজ্রপাতে শিশুসহ প্রাণ গেলো ১০ জনের
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধে ফেঁসে যাচ্ছে অ্যাপল

  • আপলোড সময় : ০৬-০৪-২০২৫ ০২:৩৫:৪৫ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৬-০৪-২০২৫ ০২:৩৫:৪৫ অপরাহ্ন
চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধে ফেঁসে যাচ্ছে অ্যাপল
একসময় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সেতুবন্ধ হিসেবে দেখা হতো টেক জায়ান্ট অ্যাপলকে। অনেকে আশা করেছিলেন, প্রতিষ্ঠানটি হয়তো দুই পরাশক্তির মধ্যে সংঘাত এড়াতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুরু করা বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে সবচেয়ে বড় আঘাতটি যেন পেতে যাচ্ছে অ্যাপল। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি শুল্ক প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে চীনের পাল্টা প্রতিক্রিয়া অ্যাপলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজারে পণ্য বিক্রিতে ধস নামাতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী টিম কুকের জন্য রীতিমতো ভূরাজনৈতিক দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে এটি। গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প যখন সব বড় বাণিজ্য অংশীদারের ওপর ‘পারস্পরিক’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, তার পরদিনই শেয়ারবাজারে অ্যাপলের মূল্য ৩১১ বিলিয়ন ডলার কমে যায়। ৪ এপ্রিল চীন পাল্টা জবাবে সব মার্কিন পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক ও দুর্লভ খনিজ পদার্থ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে অ্যাপলের শেয়ারের দর আরও পড়ে যায়। হার্ডওয়্যারের ওপর নির্ভরতা থাকায় এই ধাক্কা অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অ্যাপলের জন্য অনেক বেশি। টিম কুক এর আগেও ট্রাম্পকে খুশি করার চেষ্টা করেছেন শপথ গ্রহণের পরপরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চার বছরে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল মূলত ট্রাম্পকে খুশি করে শুল্ক থেকে রেহাই পাওয়ার কৌশল। প্রথম মেয়াদে যেমনটা হয়েছিল। কিন্তু এবার সেই কৌশল কাজ করেনি। বর্তমানে ট্রাম্প চীনের ওপর ৫৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যেখানে অ্যাপলের প্রায় ৯০ শতাংশ আইফোন উৎপাদিত হয়। এই শুল্ক যুক্ত হয়েছে আগের শুল্কের সঙ্গে। এছাড়া ভারতে ২৬ শতাংশ ও ভিয়েতনামে ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে যেখানে অ্যাপল বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিল। এখন সেই পরিকল্পনাও ঝুঁকির মুখে। ইউবিএসের বিশ্লেষক ডেভিড ভগট জানান, প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া প্রায় সাত কোটি আইফোন চীনে তৈরি হয়। উৎপাদন খরচের ওপর প্রযোজ্য শুল্ক প্রতিটি আইফোনে প্রায় ৩৩০ ডলার বাড়তি ব্যয় সৃষ্টি করতে পারে। গ্রাহকের কাঁধে এই বোঝা চাপানো কঠিন, কারণ আগে থেকেই আইফোনের বিক্রি স্থবির হয়ে পড়েছে। এর দাম আরও বাড়লে গ্রাহক হারানোর ঝুঁকি বাড়বে। আবার শেয়ারহোল্ডার ও সরবরাহকারীদের ওপর চাপ দিলেও মুনাফার মার্জিন ৪৬ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে নেমে যেতে পারে এবং প্রতি শেয়ারে আয় ২০ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন ভগট। অন্যদিকে, চীনের বাজারেও শঙ্কা রয়েছে। সেখানে অ্যাপলের রাজস্ব গত বছর ৮ শতাংশ কমেছে। দেশটির ভোক্তারা হয়তো অ্যাপলকে ট্রাম্পের প্রতীক হিসেবে দেখছেন। এর মধ্যে হুয়াওয়ে, অপ্পো, শাওমির মতো দেশীয় ব্র্যান্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চীন সরকারও হয়তো অ্যাপলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে যেমন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রক সংস্থা অ্যাপ স্টোরের ফি নিয়ে তদন্তের চিন্তা করছে। এখন প্রশ্ন চীন এবং দক্ষিণ এশিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় অ্যাপলের অন্য বিকল্প কোথায়? ট্রাম্প প্রশাসনের উত্তর যুক্তরাষ্ট্র। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ নয়। ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি অনেকটাই প্রচারণামূলক। এর আগে অ্যাপল ৩৫০ বিলিয়ন বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাস্তবায়ন করেনি। উচ্চ প্রযুক্তি ও শ্রম খরচের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন উৎপাদন করা প্রায় অসম্ভব। টিএসএমসির অ্যারিজোনায় চিপ উৎপাদন কেন্দ্র চালু করতেই অনেক বছর লেগেছে। এখন যদি আইফোন উৎপাদনের যাবতীয় সরবরাহকারীদের যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়, তাতে বিশাল ব্যয় ও সময় লাগবে। কোনো প্রণোদনা ছাড়াই সেটি হয়তো সম্ভব নয়। জিরো ১০০’র বিশ্লেষক কেভিন ও’মারাহ বলছেন, অ্যাপল যদি আগে থেকেই রোবটিক উৎপাদনে বিনিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন শুরু করতো, তবে এতটা চাপ হতো না। এখন প্রতিষ্ঠানটি সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। ওয়েডবুশের বিশ্লেষক ড্যান আইভসের মতে, মার্কিন আইফোনের দাম গিয়ে দাঁড়াতে পারে ৩ হাজার ৫০০ ডলারে! সব মিলিয়ে টিম কুকের জন্য সময়টা অত্যন্ত কঠিন। এক সময় তিনি ছিলেন ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার আদর্শ সিইও। এখন তার সামনে হয়তো একমাত্র ভরসা ট্রাম্পের কাছ থেকে শেষ মুহূর্তে কোনো ছাড় আদায় করে নেয়া। কিন্তু বর্তমান বাণিজ্য যুদ্ধের বাস্তবতায় বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতি দয়া দেখানো হবে এমনটা বলা কঠিন। দু’টি বড় বাজারেই অ্যাপলের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে এবং তাদের প্রধান পণ্যও পুরোনো হয়ে পড়ছে। যদি শিগগির চমকপ্রদ কোনো পরিবর্তন না আসে, তাহলে টিম কুকের ১৪ বছরের নেতৃত্বও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠতে পারে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স