জনতা ডেস্ক
বোমা সরবরাহ স্থগিত রাখলেও ইসরাইলকে আরও ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র দেয়ার নতুন পরিকল্পনা করছে ?যুক্তরাষ্ট্র। গত মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসকে বিষয়টি জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। সরকারি এক সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছে, বাইডেন প্রশাসন অনানুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসেকে এই অস্ত্র প্যাকেজের বিষয়টি জানিয়েছে। ইসরাইলকে এ সহায়তা দেয়ার জন্য মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। কংগ্রেসের এক সহকারী বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নির্মাতাদের কাছ থেকে কেনা এই অস্ত্রের মূল্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। ইউক্রেন, ইসরাইল ও তাইওয়ানের জন্য মার্কিন কংগ্রেসে পাস হওয়া ৯৫ বিলিয়ন ডলারের বিলের মধ্য থেকেই এই অস্ত্র আসবে। কেননা, বাইডেন প্রশাসন বারবারই বলে আসছে, তারা মার্কিন অস্ত্র নির্মাতাদের কাছে থেকে কেনার মধ্য দিয়ে এই সহায়তা প্যাকেজ এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছেন। গত সপ্তাহে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে বলেন, তারা যদি রাফাতে হামলা চালায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলে বোমার চালান স্থগিত করে দেবে। এর এক সপ্তাহ পরেই এ তথ্য সামনে আসলো। অন্যদিকে গত সপ্তাহে মার্কিন প্রশাসন নিশ্চিত করেছে তারা প্রথমবারের মতো ইসরাইলে ২০০০ পাউন্ডের একটি বোমার চালান আটকে দিয়েছে। মূলত রাফাতে ইসরাইলের হামলা চালানোর উদ্বেগে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মার্কিন সংবাদমধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই সহায়তার আওতায় ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্র যেসব অস্ত্র দিতে চাচ্ছে তার মধ্যে ট্যাংক খাতে রয়েছে ৭০০ মিলিয়ন ডলার, আরও ৫০০ মিলিয়ন ডলার রয়েছে কৌশলগত যানবাহনে এবং ৬০ মিলিয়ন ডলার রয়েছে মর্টার শেলে। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে শেষ হয়ে আসা ইসরাইলি অস্ত্রভাণ্ডার পূর্ণ করতে এসব অস্ত্র দেয়া হচ্ছে। অবশ্য, সবকিছু ইসরাইলে পৌঁছাতে কয়েক বছর লেগে যাবে।
এদিকে অবরুদ্ধ গাজার লাইফলাইন খ্যাত দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় বিমান হামলা জোরদার করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এরই মধ্যে নির্বিচার বোমা বষর্ণের মুখে শহর ছেড়ে পালিয়েছেন সাড়ে ৫ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি। শহরটির উত্তরাঞ্চল থেকেও এক লাখ লোক পালিয়েছেন। জাতিসংঘ জানায়, এখন পর্যন্ত রাফার দক্ষিণাঞ্চল থেকে সাড়ে ৫ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি পালিয়ে গেছে। আর শহরটির উত্তরাঞ্চল থেকে জীবন বাঁচাতে আরও এক লাখ লোক পালিয়েছেন। ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত বোমা হামলার মুখে রাফায় ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সসহ সেবাদানকারীরা। এতে স্বাস্থ্যসেবা দিতে গাজার ৮০ শতাংশ হাসপাতাল ব্যর্থ হচ্ছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবারও গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলা চালায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এতে হতাহত হন বেশ কয়েকজন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশ কয়েকটি স্থাপনা। এদিন গাজার উত্তরাঞ্চলে জাবালিয়ায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় নেতানিয়াহু বাহিনী। এদিকে, অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে খাবার, পানি ও বাসস্থানের মতো জনজীবনের মৌলিক উপাদানের সংকট। নতুন করে দেখা দিয়েছে নগদ অর্থের অভাব। এ অবস্থায় ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গেলো কেটে রাখা হচ্ছে বাড়তি ট্যাক্স। এতে শোচনীয় অবস্থায় দিন পার করছেন নিরীহ বাসিন্দারা। তারা জানান, বোমা বর্ষণে কারণে ধুলোয় মিশে গেছে গাজার এটিএম বুথগুলো। হাতে গোনা কয়েকটি রয়েছে দক্ষিণের শহর রাফায়। সেখান থেকে টাকা উত্তোলন করতে গেলেও কেটে রাখা হয় বিশাল একটি অংক।
অন্যদিকে, এখনো অচলাবস্থায় রয়েছে হামাস-ইসরাইলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির আলোচনা। এ বিষয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘ইসরাইল অবাস্তব লক্ষ্য নির্ধারণ করছে এতে সংঘাতের সমাপ্তির কোনো উপায় পাওয়া যাচ্ছে না।’ তবুও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে জানায় কাতার।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
