জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. আনু মুহাম্মদ বলেছেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশন করেছে। কিন্তু নদীর ক্ষেত্রে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের নদ-নদীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এ আয়োজন করে। ড. আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আমরা জানি, নদী কারা দখল করেছে এবং এর জন্য কী করতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন করেছে, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে। কিন্তু নদীর ক্ষেত্রে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে না। নয়তো গত আট মাসে কেন তারা জাতিসংঘের পানি আইনে অনুস্বাক্ষর করলো না। ১৯৯৭ সালে যখন জাতিসংঘ এই আইন করলো তখন সেই কমিটিতে বর্তমান সরকারের দুজন উপদেষ্টা ছিলেন। তবুও কেন এখনও এটি হলো না? সরকার কেন দেরি করছে? তাহলে বুঝতে হবে স্বৈরাচারের দোসরদের দ্বারা এই সরকার পরিচালিত হচ্ছে।’ নদী বিপন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে কারা দায়ী তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারত, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং ক্ষমতাশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী নদী বিপন্নের কারণ। তাই নদী রক্ষায় অবিলম্বে জাতিসংঘের পানি আইনে অনুস্বাক্ষর, ডেল্টা প্ল্যানের পর্যালোচনা এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে।’ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারি বিভিন্ন পরিকল্পনায় প্রসারিত নদীকে সরু করা হচ্ছে, বিভিন্ন নদীবিনাশী প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে। একইভাবে দেশের মানুষের ক্যানসারসহ বিভিন্ন যে মারণঘাতি রোগ হচ্ছে, এর জন্যেও নদীদূষণ দায়ী। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বিগত সরকারের সময় অনেক এমপি, উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তি নদী দখলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। তখন না হয় আমরা পারিনি, তাহলে এই যে নতুন বাংলাদেশে এসে ২০২৫ সালে আমাদের কেন বলতে হচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানের পর নদীতে দখল বেড়েছে, খাল দখল বেড়েছে! তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছিল বাংলাদেশের শুদ্ধির জন্য, সেই শুদ্ধির সঙ্গে কারা আপোস করলো? যারা দখলদার, ব্যবসায়ী তারা নিজেদের জিডিপির কনট্রিবিউটর নাম দিয়ে যেভাবে দূষণ করেছে, সেই দূষণের যদি আমরা অর্থনৈতিক হিসেব করি তাহলে তা তাদের কন্ট্রিবিউশানের থেকে অনেক বেশি। তারা পরিবেশ প্রতিবেশ হত্যার সঙ্গে জড়িত। আদিল মুহাম্মদ বলেন, ‘আমরা দেখছি, নতুন দখলদাররা বিপুল উৎসাহে এখন দখল করছে। কারণ এখন প্রসাশন দুর্বল, পুলিশ কাজ করে না। নতুন রাজনৈতিক বন্দবস্ত তৈরি হয়েছে। তারা এখন নতুনভাবে দখলে নেমেছে। আর সরকার তাদের অসহায়ত্ব দেখাচ্ছে। তারা (সরকার) বলছে তাদের লোকবল নাই। এই ২০ কোটি মানুষের দেশে নদী কমিশন চালানোর মতো কোনও যোগ্য লোক নাই! সেক্রেটারি দিয়ে চালাতে হয়। এ জন্য কী বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে? এই সরকার কেন এই কমিশনকে রক্ষার জন্য একজন যোগ্য লোক পেলো না? নাকি তারা দখলদারদের উৎসাহিত করতে চায়? ধরার সহ-আহ্বায়ক এম এস সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও সচিব শরিফ জামিলের সঞ্চালনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। এ সময় আরও ছিলেন– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মোশাইদা সুলতানা, পশুর নদী রক্ষাকারী মো. নূর আলম এসকে প্রমুখ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
