ঢাকা , শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫ , ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
স্থানীয়দের বাধায় পিছু হটলো বিএসএফ মৌলভীবাজারে সীমান্তে ১৫ জনকে ‘পুশইন’ বিএসএফের আমতলীতে দুই বছরে অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা নৌ পুলিশের অভিযানে ২৭৬ জন গ্রেফতার, ১০ মরদেহ উদ্ধার চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে আইনজীবীর লাশ উদ্ধার আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন চয়নিকা চৌধুরী রিমান্ড শেষে কারাগারে পলক ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৫ জনের যাবজ্জীবন শেখ হাসিনাসহ ইসি কমিশনারদের বিরুদ্ধে মামলা সংস্কারের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে চায় ভাসানী অনুসারি পরিষদ ওসি আলিমের দখল ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ভয়ঙ্কর তথ্য ফাঁস রাখাইনে মানবিক করিডোর প্রক্রিয়ায় চীন যুক্ত নয় : রাষ্ট্রদূত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার-আহতদের ফ্ল্যাট দেবে সরকার সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ভারতের ১৫ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষার মানোন্নয়নে বিনিয়োগে আগ্রহী জাইকা গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত হলে পোশাক শিল্পে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি সম্ভবÑ আইটিইটি ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে অ্যাম্বুলেন্সে বাসের ধাক্কা নিহত ৫ ৩ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে : আশিক চৌধুরী স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে মন্ত্রণালয় ঘেরাও
বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয়শিবিরে লাখো রোহিঙ্গারা ইফতার পার্টিতে যোগ দিবেন

রোহিঙ্গাদের সাথে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব

  • আপলোড সময় : ১২-০৩-২০২৫ ০৩:৩৪:১৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১২-০৩-২০২৫ ০৩:৩৪:১৭ অপরাহ্ন
রোহিঙ্গাদের সাথে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামী ১৪ মার্চ শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন। ওই দিন ক্যাম্প পরিদর্শন এবং একাধিক বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় লাখো রোহিঙ্গাকে নিয়ে ইফতার করবেন দু’জন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এর জন্য ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে নানা প্রস্তুতিও। দু’জনের এই সফরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আশার আলো সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গারা বলছেন, আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আছে এবং তারা স্বদেশে ফিরতে পারবেন। এসব দাবি সহজেই বলতে পারবেন দুই জনকে। একই সঙ্গে সম্প্রতি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) খাদ্য সহায়তা কমিয়ে নেয়ার বিষয়েও এটা সমাধান হবে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে বলা হয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয়শিবির। যেখানে বসবাস করছে ১৩ লাখের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। উল্টো গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন ৬০ থেকে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা। এ অবস্থায় আগামী শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শনে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘ মহাসচিব এর আগেও আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেছেন। তবে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে প্রধান উপদেষ্টার এটিই প্রথম সফর। আশ্রয়শিবিরে তাদের সফর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে অগ্রগতি আসবে মনে করছেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতারা। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, মিয়ানমার ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেয়ার পর বাংলাদেশে এসে জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের সঙ্গে কথা বলেছিল। এখন এই মাসের ১৪ তারিখ আবার তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে ক্যাম্প আসছেন শুনে খুব খুশি লাগছে। আন্তোনিও গুতেরেসকে একটা কথায় বলব, বাংলাদেশ আমাদের দেশ নয়। এই ক্যাম্পে আর দীর্ঘ সময় থাকতে চাই না। এখন ক্যাম্প জীবনের ৮ বছর চলছে। আমাদের দেশ আছে, রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব হচ্ছে জাতিসংঘের। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আরাকানে নিরাপদ জোন করে দেন, আমরা স্বদেশে এখনি চলে যেতে চাই এটাই অনুরোধ করব জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে। প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের পাশাপাশি একাধিক বৈঠকে অংশ নিবেন। এরপর সন্ধ্যায় ইফতার করবেন লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে। তাই কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আগামী শুক্রবার জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজার আসছেন। আশ্রয়শিবিরে যে কার্যক্রমগুলো হবে তা তত্ত্বাবধান করছেন সেনাবাহিনী। পুলিশ কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ক্যাম্প পর্যন্ত নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখছি। কয়েক স্তরের বলয় থাকবে। মূলত এসএসএফ কক্সবাজার চলে এসেছেন, তারা সব বিষয় সমন্বয় করছেন। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। প্রধান উপদেষ্টার কক্সবাজার শহর কেন্দ্রিক কিছু ভেন্যু রয়েছে, এসব ভেন্যুতেও কয়েক স্তরের নিরাপত্তার বলয় থাকছে। রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে দু’জনের সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আগামী শুক্রবার জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটতে চলেছে। বাংলাদেশের জন্য এবং রোহিঙ্গাদের জন্যও তো অবশ্যই। এটির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যে বিশ্ব সম্প্রদায় পাশে আছে এবং বাংলাদেশ যে তাদের পাশে রয়েছে এটি প্রমাণিত হচ্ছে। এটি ঐতিহাসিক একটি বড় ঘটনা। মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে পৌঁছাবেন। পরিদর্শনের সময় একটি ওয়াচ টাওয়ারে উঠে আশ্রয়শিবিরের বর্তমান চিত্র পর্যবেক্ষণ করবেন। সেখানে আশ্রয়শিবিরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করা হবে। এ ছাড়া জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাসহ (আইওএম) বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও সেবা কার্যক্রমের হালচাল তুলে ধরবেন। বিশেষ করে, খাদ্য সহায়তা কমে আসা এবং খাদ্য সংকট তৈরি হওয়ার বিষয়টি বলা হবে। তিনি আরো বলেন, পরিদর্শনকালে জাতিসংঘের মহাসচিব বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৮) একটি লার্নিং সেন্টার, ইউএনএইচসিআর এবং ডব্লিউএফপির সেবা ও ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে যাবেন। পাশাপাশি পৃথক তিনটি বৈঠকে রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা, তরুণ ও নারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বিকেলে কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-২০ বর্ধিত) হেলিপ্যাডের কাছে একটি সেন্টারে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক ও নারীদের সঙ্গে কথা বলবেন। সবশেষ তিনি ইফতার করবেন, এটি হবে বিরল ঘটনা। যেখানে ধারণা করা যায়, ১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা একসঙ্গে ইফতার করবেন। এর আগে ২০১৮ সালের ২ জুলাই নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে আসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা নিজের চোখে দেখেন তিনি। নজদেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে আশায় বুক বেঁধে আছেন বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা। টেকসই প্রত্যাবাসন, নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবিও জানাবেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গা নেতারা জানান, আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের সময় টেকসই প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেফ জোন (নিরাপদ অঞ্চল) প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের মহাসচিবের হস্তক্ষেপ চাইবেন রোহিঙ্গারা। রাখাইন রাজ্যে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ও সরকারি বাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের বিবরণও তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যসহায়তা সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নিয়ে আসার প্রভাব, তহবিল সংকটের কারণে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়া, স্বাস্থ্যসেবা থেকে রোহিঙ্গাদের বঞ্চিত হওয়ার কথাও তুলে ধরা হবে। আশ্রয়শিবিরে সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানাবেন রোহিঙ্গারা। উখিয়ার ৪ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা হোসেন জোহান বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ক্যাম্পে আসবে শুনে খুবই খুশি লাগছে। তাকে সব দুঃখ-কষ্টের কথা শোনাতে পারব এটার জন্য আরো বেশি খুশি লাগছে। আর ডব্লিউএফপি আমাদেরকে খাদ্য কমিয়ে দিচ্ছে এটা বলতে পারব। বর্ধিত ৪ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আন্তোনিও গুতেরেসকে আমরা বুঝাবো, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদেরকে নিরাপত্তা দিয়ে যেন রাখাইনে ফেরত পাঠায়। ফেরত পাঠানোর ক্ষমতা জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে রয়েছে। কারণ আমরা জাতিসংঘের অধীনে রয়েছি। লম্বাশিয়া ১ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মো. তৈয়ব বলেন, আমাদের দেশে আমরা ফিরে যেতে চাই। ২০১৭ সালে আমরা যারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি সবারই দেশে ধন-সম্পত্তি রয়েছে। এখন জাতিসংঘ রাখাইনে নিরাপত্তা দিলে এক্ষুনি স্বদেশে চলে যেতে রাজি। কারণ এটা আমাদের দেশ নয়। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আশ্রয়শিবিরে আসার খবরে সাধারণ রোহিঙ্গারা খুবই উৎফুল্ল। বৈঠকে আমরা মহাসচিবের কাছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আরাকান রাজ্যে সেফ জোন প্রতিষ্ঠার দাবি জানাব। খাদ্যসহায়তায় কাটছাঁট করার ফলে শরণার্থীদের জীবনে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তা-ও তুলে ধরা হবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার-আহতদের ফ্ল্যাট দেবে সরকার

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার-আহতদের ফ্ল্যাট দেবে সরকার