ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫ , ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
পুলিশের জন্য বিপুলসংখ্যক গাড়ি কেনার উদ্যোগ ১৫ বছরের নিচে কেউ হজে যেতে পারবে না আবাসন ব্যবসায়ীদের দুর্দিন কাটছে না যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইউক্রেন আলোচনায় বসবো না যা ইচ্ছা করুন মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানে কিল সুইচ সংঘাত থেকে বাঁচতে লেবাননে পালাচ্ছেন সিরীয়রা ইউক্রেনের পর ৩ দেশে হামলা করবেন পুতিন বিপরীতমুখী অবস্থানে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র নিহত ২৭ সশস্ত্র হামলাকারী উদ্ধার ১৫৫ যাত্রী অনুপ্রবেশে ৫ বছর কারাদণ্ড লিভারপুলকে কাঁদিয়ে কোয়ার্টারে পিএসজি লেভারকুজেনের সাথে জয় পেলো বায়ার্ন বেনফিকার বিপক্ষে সহজ জয় পেলো বার্সা আফগানিস্তান সিরিজ বাতিল করলো আয়ারল্যান্ড জানা গেলো যে জন্য কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নেই শামীম তামিমের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, বড়ো ব্যবধানে জয় পেলো মোহামেডান কোন ম্যাচ না খেলেই দেশে ফিরছে বাংলাদেশ টাইগার্স আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আফগানিস্তানকে নিষিদ্ধের আহ্বান রোহিঙ্গাদের সাথে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ

শ্রমিকদের ওপর হামলার বিচার ও বেতনের দাবি

  • আপলোড সময় : ১২-০৩-২০২৫ ০৩:২৪:২০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১২-০৩-২০২৫ ০৩:২৪:২০ অপরাহ্ন
শ্রমিকদের ওপর হামলার বিচার ও বেতনের দাবি
গাজীপুর প্রতিনিধি গাজীপুরে ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন ও শ্রমিকদের ওপর হামলা, নারী শ্রমিকদেরকে নির্যাতন এবং কারখানার মালিকসহ তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে লাকড়ি ও আবর্জনায় আগুন দিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। অবরোধে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে সড়কের উভয়পাশে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে মহানগরীর বাসন থানার কড্ডা নান্দুন (কড্ডা বাজার) এলাকার কেমিও ইউএসএ নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা এসব দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, প্রতিমাসের ১০ তারিখের মধ্যে তাদেরকে পূর্ববর্তী মাসের বেতনসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধের কথা রয়েছে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রতিমাসেই তাদের বেতন নিয়ে টালবাহানা করে। কোনও মাসেই সঠিক সময়ে বেতন দিতে পারে না। গত সোমবার ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন দেওয়ার কথা ছিল। ওই দিন সকাল ৭টায় কারখানায় প্রবেশ করে শান্তিপূর্ণভাবে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কাজ ডিউটি করেন। পরে তিনটার মধ্যে তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও না দিয়ে কারখানার সকল কর্মকর্তা পালিয়ে যায়। আন্দোলনরত শ্রমিকরা দাবি করেন, বিকাল সোয়া ৩টার দিকে বাইরে থেকে মালিকের পালিত ক্যাডার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্য লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে এসে শ্রমিকদের মারধর করে। তাদের মারধরে ৫-৭ জন শ্রমিক আহত হয়। এ সময় হামলাকারীরা অনেক নারী শ্রমিককে নির্যাতন করেছে বলেও অভিযোগ করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টায় শ্রমিকরা কাজ করার জন্য কারখানায় প্রবেশ করে উৎপাদন ফ্লোরে গিয়ে নিজ নিজ মেশিনে শান্তিপূর্ণভাবে বসে থাকে। তবে তারা কাজ না করে ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করে। একপর্যায়ে মালিকের বহিরাগত ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে কারখানায় প্রবেশ করে নারী শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন এবং পুরুষ শ্রমিকদের মারধর শুরু করে। পরে শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে কারখানার বাইরে এসে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা মহাসড়কে লাকড়ি ও আবর্জনা রেখে আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে সড়কের উভয়পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে চালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শ্রমিকেরা দাবি করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের মালিকসহ কারখানা কর্তৃপক্ষ এসে তাদের দাবি না মানবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা মহাসড়ক থেকে সরবেন না। বহিরাগত যেসব ক্যাডার নারী শ্রমিকদের নির্যাতন করছে এবং পুরুষ শ্রমিকদেরকে মারধর করছে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) বাসন থানার ওসি কায়সার আহমেদ বলেন, বেলা ১১ টা ৪০ মিনিটে জিএমপি, শিল্পপুলিশ এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করছে। এদিকে, জেলার কালিয়াকৈরে এক শ্রমিককে মারধরের প্রতিবাদ ও পোশাক কারখানা খোলার দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শ্রমিকরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টায় শ্রমিকরা মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় অবস্থান নেন। তারা মিছিল নিয়ে বিভিন্ন কারখানার গেটে গেলে তাদের আন্দোলনে আশপাশের সাদমা, কোকোলা, মন্ট্রিমস, লিভাসসহ ১৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সকাল ১০টায় যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছলে শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে দিয়ে পাশেই অবস্থান নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আবদুল সেলিম জানান, শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন স্থানে থানা-পুলিশের পাশাপাশি শিল্পপুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গাজীপুরের জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশন ইনচার্জ আব্দুস সামাদ জানান, গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় আগুন দিয়েছে শ্রমিকরা। ভোগড়া ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে যাওয়ায় চেষ্টা করছে। টঙ্গীতে সড়ক অবরোধ: এদিকে, গাজীপুরের টঙ্গীতে কারখানা গেটে অনির্দিষ্টকালের বন্ধের নোটিশ দেখে শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও চালকরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে টঙ্গীর দত্তপাড়া (হোসেন মার্কেট) এলাকার বিএসআইএস কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। গাজীপুর শিল্পপুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। শ্রমিকদের দাবি, ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন গত ৯ মার্চ দেওয়ার কথা ছিল। গত সোমবার সকালে কারখানায় প্রবেশ করে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে কারখানার অভ্যন্তরে অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেন। ওই দিন কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন না দিলে বিকালে শ্রমিকরা চলে যায়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে গেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখতে পয়। পরে শ্রমিকরা সকাল ৮টা থেকে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। শ্রমিকদের দুই মাসের বেতন বকেয়া মার্চ মাসে পরিশোধের কথা থাকলে কর্তৃপক্ষ বেতন না দিয়েই কারখানায় বন্ধের নোটিশ টানিয়ে দিয়েছে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের হোসেন মার্কেট (ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের) সামনের অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এতে ওই মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল থেকে দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। খবর পেয়ে শিল্প ও থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়কে থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করছিলেন। অনির্দিষ্টকালের বন্ধের নোটিশে কারখানা কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেন, গত সোমবার সকাল সোয়া ১০টায় কর্মী ও কর্মচারীগণ নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ বন্ধ করে কারখানার অভ্যন্তরে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। বারবার কর্মী ও কর্মচারীগণকে কাজে যোগদানের জন্য অনুরোধ করলেও তারা কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকে। তাদের এ ধরনের আচরণ অবৈধ ধর্মঘটের শামিল। কর্তৃপক্ষ মনে করছে উচ্ছৃঙ্খল কর্মী-কর্মচারীগণ কারখানাতে যেকোনও ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে। এ পরিস্থিতিতে কারখানা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ শ্রম-আইন ২০০৬-এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক গতকাল মঙ্গলবার হতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে। কারখানা খোলার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে পরবর্তীতে কারখানা খোলার তারিখ নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে। তবে নিরাপত্তা সেকশন ও অন্যান্য জরুরি সেবা প্রদানকারীগণ সেকশন উক্ত বন্ধের আওতাবহির্ভূত থাকবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য