ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকার সংস্কার কমিশন করলেও নদীর ক্ষেত্রে প্রতিফলন নেই-আনু মুহাম্মদ বাড্ডায় কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষে নিহত ১ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল খরচেও কমানো যাচ্ছে না নানামুখী আতঙ্ক রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা সেই শিশু আছিয়া না ফেরার দেশে ধর্ষণে আতঙ্ক -উদ্বেগ ভারতকে অযাচিত বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বলল ঢাকা প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে যাচ্ছেন ২৬ মার্চ সালমান এফ রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা খরায় পুড়ছে চা-বাগান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ইফতারিতে দই-চিড়ার জাদু একরাতে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা এলাকায় আতঙ্ক স্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, সংকট সয়াবিনে মামলা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ ছেঁউড়িয়ায় শুরু লালন স্মরণোৎসব দোহাজারীতে বাসচাপায় ৩ জন নিহত হেনস্তার পর ছাত্রীকে ফেলে দিলো দুর্বৃত্তরা ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ভ্যাট দেয় না বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন

রোখা যাচ্ছে না সন্ত্রাস

  • আপলোড সময় : ০২-০৩-২০২৫ ১২:১৬:৪৬ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০২-০৩-২০২৫ ১২:১৬:৪৬ পূর্বাহ্ন
রোখা যাচ্ছে না সন্ত্রাস
* শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ১১৫ জন-ই জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার জড়িয়েছে অপরাধে
* গত আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ডাকাতি ও দস্যুতায় মামলা ১১৪৫টি
* দুই মাসে রাজধানীতে ২৮৯টি মামলায় গ্রেফতার ৭৫৮ ছিনতাইকারী
* দেশে কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ছড়িয়েছে আতঙ্ক ও উদ্বেগ


রাজধানীসহ সারাদেশে ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, খুন ও ধর্ষণসহ একের পর এক নানা অপরাধ ঘটে চলেছে। সারা দেশে চলমান ‘ডেভিল হান্ট’ ও ব্লক চেকে বিশেষ অভিযানেও থেমে নেই অপরাধচক্রের এসব অপকর্ম। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনোভাবেই রুখতে পারছে না সরকার। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নানাভাবে চলছে চাঁদাবাজি। গত কয়েক মাসে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ১১৫ জন-ই জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অপরাধে। গত আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ডাকাতি ও দস্যুতায় মামলা ১১৪৫টি। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীতে ২৮৯টি মামলায় গ্রেফতার ৭৫৮ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রাজধানীর উত্তরায় এক দম্পতিকে কোপানো ও টাঙ্গাইলে বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানির ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত রোববার রাতে রাজধানীর বনশ্রীতে বাসায় ফেরার সময় এক জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে গুলি ও কুপিয়ে জখম করে ১৬০ ভরি স্বর্ণালংকার ও এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। চাঞ্চল্যকর এমনসব কয়েকটি ঘটনায় ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
জানা গেছে, অপরাধীরা কাউকেই তোয়াক্কা করছে না; বরং দিনে দিনে তারাও আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অব্যাহত এমন কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ভোর রাতে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের লক্ষণের বাধা এলাকায় শিক্ষাসফরের তিনটি বাসে ডাকাতি ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত বুধবার ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কের লক্ষণের বাধা এলাকায় পাহারা দিয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসী। এর আগে ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে নওগাঁর পত্নীতলায় সড়কে গাছ ফেলে একটি বাস ও একটি মাইক্রোবাসে ডাকাতি হয়। একই রাতে ঢাকার আশুলিয়ার জিরানীতে নিজ বাসায় ডাকাতের গুলিতে আহত হন অভিনেতা আজিজুর রহমান আজাদ। ডাকাতিতে বাধা দেওয়ায় তার পায়ে তিনটি গুলি করা হয়। তার মা ও স্ত্রীও আহত হন। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় তিনজনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দায় স্বীকার করে একটি মেসেজে লেখা ছিল ‘কালু, জাসদ গণবাহিনী’। এর আগে গত রোববার রাতে রাজধানীর বনশ্রীতে গুলি করে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ২০০ ভরি স্বর্ণ ও এক লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। মোহাম্মদপুর এলাকায় রিকশা থামিয়ে এক নারীর কাছ থেকে ছিনতাই, হাজারীবাগ এলাকায় ডাকাত পড়ার ঘটনাসহ প্রতিদিনই এ রকম আরো বহু ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় রাজধানীসহ সারা দেশে।
পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, সাম্প্রতিককালে ডাকাতি ও দস্যুতার (ছিনতাই) ঘটনায় মামলা বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে দেশে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৪২টি, যা গত বছর ২০২৪ সালের একই মাসের তুলনায় ৯৯টি বা ৬৯ শতাংশ বেশি। ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় গত ডিসেম্বরে মামলা হয়েছে ২৩০টি, যা গত ২০২৩ সালের একই মাসের তুলনায় ৯৫টি বা ৭০ শতাংশ বেশি। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে এক হাজার ১৪৫টি, যা ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের তুলনায় ৩৮২টি বা ৫০ শতাংশ বেশি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ধানমন্ডির একাংশ ও মোহাম্মদপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বেশি অবনতি হয়।  
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য। কেবল নীরব সড়কে নয়, যানজটে আটকে থাকা যানবাহনেও হচ্ছে ছিনতাই। যাত্রাবাড়ীর কাজলা পেট্রোলপাম্প এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রাতে জটে আটকে পড়া যানবাহনের যাত্রী-চালক মাঝেমধ্যে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ছেন। পথচারীরাও বাদ যাচ্ছেন না। এছাড়া কিছু সড়কে বাতি নষ্ট থাকায় অন্ধকারাচ্ছন্ন সড়কে হচ্ছে ছিনতাই।
পুলিশের ভাষ্যমতে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বেশ কিছু থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়াসহ লজিস্টিকস ঘাটতিতে স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। নতুন সরকারের অধীনে পুলিশের কার্যক্রম এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি। এই সীমাবদ্ধতা অপরাধীরা কাজে লাগাচ্ছে। এ সুযোগে কিশোর গ্যাং ও সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রগুলো আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বেকারত্বের কারণে কিছু মানুষ অপরাধের পথে পা বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে রাতের শেষ ভাগে পুলিশের টহল কম থাকায় ছিনতাইকারীরা এ সময় টার্গেট করে অপরাধ করছে। অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ ও অপরাধীদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেয়ার তৎপরতায় ঘাটতি রয়েছে।
দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, এমন পরিস্থিতির নেপথ্য কারণ পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্তদের একটি বড় অংশ পুলিশ বাহিনীতে রয়েছে। তাদের গা-ছাড়া ভাব রয়েছে। এছাড়া ওই সময়ে পুলিশে সুবিধাভোগীদের একটি অংশও রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ অনেক অপরাধী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। পুলিশের যথাযথ টহল, নজরদারি, সক্রিয়তা না থাকার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।
পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মূলত এখন কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চান না। কেবল নির্ধারিত সময় ধরে থানায় ডিউটি করাই এখন তাদের প্রধান কাজ। দৈনিক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করা এবং থানার ভেতরে টেবিলওয়ার্কের দিকেই তাদের বেশি মনোযোগ। বাইরে ডিউটি করতে গেলে নানান ধরনের অপরাধের শিকার হয়ে ভুক্তভোগীরা তাদের কাছে আসেন। কিন্তু তাদের জন্য তেমন কিছুই করার থাকে না। ছিনতাইকারীকে ধরতে গেলেও হামলার শিকার হতে হয় তাদের। এমন পরিস্থিতিতে নিয়মিত টহল এবং তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা-ই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীতে ২৮৯টি মামলায় ৭৫৮ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১১৫ জন-ই জামিনে বেরিয়ে গেছেন। অনেক ক্ষেত্রে জামিন পেয়ে যাচ্ছেন অল্প দিনের মধ্যে। যেমন গত ১৬ জানুয়ারি সূত্রাপুর থানার দস্যুতার এক মামলায় ফাইম খান নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি পরদিন-ই জামিন পেয়ে যান।
আইনশৃঙ্খলার এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগ দাবিতে গত রোববার গভীর রাতে বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয়ে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এরপর রাত ৩টায় বারিধারায় নিজ বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগের দোসররা। তাদের হাতে প্রচুর টাকা রয়েছে। সেসব টাকা দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। কিন্তু সেই সুযোগ তারা পাবে না। তাদের সবার ঘুম হারাম করে দেব। নিজের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষার্থীরা চায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হোক। সেটাই করার চেষ্টা করছি। সফল হলে পদত্যাগের প্রসঙ্গ আসবে না। একই সুরে কথা বলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও। তিনি বলেন, দেশের পরিস্থিতি খারাপের পেছনে রাজনৈতিক দলের প্রচেষ্টা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতিতে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। রাজশাহীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাকা থাকলে, বদ মতলব থাকলে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার মতো অনেক কিছু করা যায়। আমাদের ব্যর্থতা আছে, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সরকারপক্ষের আইনজীবীদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও অনুরোধ জানিয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, আদালতে ছিনতাইকারীদের কার্যকলাপ ও এর ভয়াবহতা, জনজীবনে কী পরিমাণ অশান্তি তৈরি করছে তা তুলে ধরেন, যাতে আদালত জামিন দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র সব সময় বোঝা যায় না। যে ঘটনাগুলোর অভিযোগ পুলিশে কাছে যায় সেগুলোই মামলা বা সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নথিবদ্ধ করে। অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী পুলিশের কাছে যান না ঝামেলার ভয়ে। গণঅভ্যুথানের ছয় মাস পরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি না হওয়ায় মানুষের মনে নিরাপত্তা প্রশ্নে ভয়ের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, শীর্ষ অপরাধী থেকে শুরু করে যারা নানান ধরনের অপরাধ করছে তাদের অপারেশন ডেভিল হান্টের আওতায় আনা প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ যাতে স্বস্তি নিয়ে নিরাপদে কর্মস্থলে যেতে পারেন এবং তার প্রিয়জনের কাছে ফিরতে পারেন সেই নিশ্চয়তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাশিত মাত্রায় ঘুরে দাঁড়াতে হবে। অন্যথায় এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি খারাপ হবে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, রাতে ছিনতাই বেড়েছে। দিনেও ছিনতাই বেড়েছে। ছিনতাই প্রতিরোধে মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাব ও অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট যৌথ অভিযান শুরু করেছে। আমরা দেখি এভাবে উন্নতি হয় কি না। না হলে আমাদের অন্য পরিকল্পনায় যেতে হবে। আইজিপি বলেন, একটি গোষ্ঠী চায় না বাংলাদেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় থাক। সেটার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ঢাকা শহরে ছিনতাইয়ের প্রবণতা একটু বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং দু’-একটি ঘটনা ভাইরাল হওয়ায় আমরা ছিনতাইকারী এবং চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু করেছি। একটা ঘটনা যখন হয়, সমাজে একটা প্যানিক সৃষ্টি হয়, যা নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করছে। এটা থেকে মানুষকে বের করে আনার জন্য আমরা আরও বেশি অ্যাকটিভ। ছিনতাইকারীদের ধরা এবং তাদের দমন করার জন্য আমাদের ডিএমপির সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র‌্যাব, এপিবিএন, এটিইউ সব এজেন্সি যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিনে কারামুক্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের মনিটরিংয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কী না এবং তাদের সঙ্গে চুরি-ছিনতাইয়ের অপরাধে যুক্ত তাদের কোনো যোগসাজশ থাকতে পারে কী না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, অবশ্যই যোগসাজশ আছে। উনারা (জামিন পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী) বের হয়ে এসে উনাদের গ্রুপগুলো সংঘটিত করে আবার অ্যাক্টিভ (সক্রিয়) হয়েছে। আমরা অনেক চাঁদাবাজ ধরেছি।
অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নৃশংস হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য অপরাধের মাত্রা কমাতে হলে প্রথমে এর পেছনে থাকা কারণগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। খুনসহ অন্যান্য অপরাধের ঘটনা যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য সামাজিক অপরাধ কমে আসবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স