জাতীয় সংসদ কিংবা উপজেলা-পৌরসভা, ইউনিয়ন নির্বাচন আসলেই ১৪দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর গুরুত্ব বাড়ে আওয়ামী লীগে। তবে নির্বাচনের পর আগের মতোই কমতে থাকে জোটের রাজনৈতিক তৎপরতা এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪দলীয় জোটে। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিক দলগুলোর ভরাডুবির পর প্রশ্ন উঠেছে ২০ বছর বয়সী এই জোটের প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও। প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয়নি এমন অভিযোগ জানাতে থাকেন শরিক দলের নেতারা। এবার জোট নেতাদের সঙ্গে বসে সকল মান-অভিমান দূর করতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পর শরিকদের অভিমান ভাঙাতে উদ্যোগী হচ্ছে টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। এতে সভাপতিত্ব করবেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে। সর্বশেষ সোমবার (১৩ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১৪ দলীয় জোট আছে। জোটনেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, জোট আছে এবং যথাসময়ে আলাপ আলোচনার জন্য বসবেন। এর আগে গত ২ মে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৪দল আছে, থাকবে। জোট নেতাদের সঙ্গে বসবো। জানা গেছে, ১৪ দল ভাঙা নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। মান-অভিমান আছে। এটা থাকবে। আবার থাকবেও না। এটা কেটেও যাবে। কী নিয়ে মান-অভিমান, তা আপনারাও (গণমাধ্যমকর্মীরা) ভালো জানেন। তবে আশা করি খুব শিগগিরই এ অভিমান কেটে যাবে। তবে ১৪দলের শরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিক দলগুলোর ভরাডুবির পর প্রশ্ন উঠেছে ২০ বছর বয়সী এই জোটের প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও। প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয়নি এমন অভিযোগ শরিক দলের নেতাদের। সম্প্রতি গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয় আলাদা কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট আছে। আমি খুব শিগগিরই তাদের সঙ্গে বৈঠক করবো। মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক আদর্শকে ভিত্তি করে ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ১৪দলীয় জোট। তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলে এ জোট।
জোট নেতারা জানান, অতীতে বৈঠকে আওয়ামী লীগ একতরফা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেভাবে জোট চলছে। আগামীতেও এটা হলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ১৪ দল বেশ নিষ্ক্রিয়। জোটের অস্তিত্ব নিয়ে ১৪ দলের ভেতর থেকেই ইতোমধ্যে বিভিন্ন কথা উঠেছে। শরিকরা মনে করছেন, তাদের জোটের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। শুধু তাই নয়- জোট আছে কি নেই এ প্রশ্নও উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে জোটকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দ্রুতই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি করা এই জোটের শরিক দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, গণ-আজাদী লীগ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি) ও কমিউনিস্ট কেন্দ্র। এরমধ্যে তিনটি দলের নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। এরা হলো- গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, গণ-আজাদী লীগ ও কমিউনিস্ট কেন্দ্র। শরিকদের মধ্য থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন চারজন, দশম সংসদে সংরক্ষিত দুজনসহ ১৩ জন, একাদশ সংসদে আটজন। কিন্তু দ্বাদশ সংসদে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র দুজনে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের রেজাউল করিম তানসেন না জিতলে এবার মুখ রক্ষা করাই কঠিন হতো ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকেও সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে পারেনি শরিক দলগুলো। আওয়ামী লীগের ওপর অত্যধিক নির্ভরতায় কমে গেছে দলগুলোর জনভিত্তি। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ছোট দলের বড় নেতাদের ভাবমূর্তি। সব মিলিয়ে জোটের শরিক দলগুলো আওয়ামী লীগের জন্য পরিণত হয়েছে বোঝায়। তাদের দাবি, ২০০৮, ১৪ ও ১৮ সালের টানা তিনটি নির্বাচনে দলের সাংগঠনিক অবস্থা ও নিজেদের মাঠের শক্তির চেয়ে ১৪ দলের শরিকরা বেশি সুবিধা পেয়েছে। নির্বাচনের পর জোটগত কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি শরিক দলগুলোকে। হয়নি আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো বৈঠকও।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি তাদের পুরনো ২০দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা নতুন জোট গঠন করে রাজপথে নামলে আওয়ামী লীগও আবার ১৪দলীয় জোট বা মহাজোট সক্রিয় করবে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতে দেখলে ১৪ দলের তৎপরতা দৃশ্যমান করবে আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ১৪ দলের রাজনীতি নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু গত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন আছে। আবার এই সময় সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর যে উত্থান ঘটছে, সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাস্তবেই তারা (আওয়ামী লীগ) ১৪ দলকে রাখতে চায় কিনা, সে ধরনের কোনো উদ্যোগ এলে আমরা চিন্তা করবো। বৈঠকের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি, বললে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। একইসুরে কথা বলেছেন গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদত হোসেন। তিনি বলেন, ১৪ দলীয় জোট হচ্ছে একটি আদর্শিক জোট। আমাদের ঐক্য নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহতের মাধ্যমে সর্বদায় আমরা জোটগতভাবে মাঠে থাকবো।
এ বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা জোটের রাজনীতিকে চাঙ্গা করে তুলবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। নেত্রী বৈঠকের কথা বলেছেন খুব বেশি দিন হয়নি। আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি। এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য কামরুল আহসান বলেন, ১৪ দল যে লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেটাই জরুরি বিষয়। ১৪ দলের এখনকার অবস্থান প্রত্যাশিত না। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলো শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করছে। তাদের তৎপরতা মোকাবিলায় সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ নেই। অতীতে বৈঠকে আওয়ামী লীগ একতরফা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেভাবে চলেছে। আগামীতে এটা হলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। জোটের মুখপাত্র, সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, জোটের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি। জোট আছে, থাকবে। নেত্রী সময় দিলেই আমরা শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসব।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

শরিকদের অভিমান ভাঙাতে শিগগিরই বৈঠকে বসছে আওয়ামী লীগ
- আপলোড সময় : ১৪-০৫-২০২৪ ১১:৩১:৩৯ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৪-০৫-২০২৪ ১১:৩১:৩৯ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ