ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকার সংস্কার কমিশন করলেও নদীর ক্ষেত্রে প্রতিফলন নেই-আনু মুহাম্মদ বাড্ডায় কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষে নিহত ১ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল খরচেও কমানো যাচ্ছে না নানামুখী আতঙ্ক রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা সেই শিশু আছিয়া না ফেরার দেশে ধর্ষণে আতঙ্ক -উদ্বেগ ভারতকে অযাচিত বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বলল ঢাকা প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে যাচ্ছেন ২৬ মার্চ সালমান এফ রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা খরায় পুড়ছে চা-বাগান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ইফতারিতে দই-চিড়ার জাদু একরাতে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা এলাকায় আতঙ্ক স্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, সংকট সয়াবিনে মামলা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ ছেঁউড়িয়ায় শুরু লালন স্মরণোৎসব দোহাজারীতে বাসচাপায় ৩ জন নিহত হেনস্তার পর ছাত্রীকে ফেলে দিলো দুর্বৃত্তরা ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ভ্যাট দেয় না বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন

সবজির দামে ক্রেতা খুশি হতাশ কৃষক

  • আপলোড সময় : ২০-০২-২০২৫ ১০:০৬:১০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২০-০২-২০২৫ ১০:০৬:১০ অপরাহ্ন
সবজির দামে ক্রেতা খুশি হতাশ কৃষক
সবজির বাম্পার ফলনে বেজায় খুশি সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে মূল্য নিয়ে হতাশায় ভুগছেন প্রান্তিক চাষী। লাভতো দূরের কথা উৎপাদন খরচই মিলছে না। ভরপুর ফলনেও হাসি নেই চাষির মুখে। শিম  ১০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটা ২টাকা, মুলা প্রতি কেজি ২-৩ টাকা, লাউ প্রতিটা ৮-১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ‘ফুলকপির হালি বিশ।’ ‘নতুন আলু নেন ২৫-এ, চার কেজি একশ’,  ‘পেঁয়াজ নেন দুই কেজি নব্বই।’ এরকম হাঁকডাক চলতি পথের ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে। রাস্তায় টমেটো ফেলে কৃষকদের প্রতিবাদ সমাবেশ করছে। পত্রিকার পাতায় দেখা গেছে ‘পানির দামে আলু, দিশাহারা কৃষক’ শিরোনাম। বিশেষজ্ঞরা জানান, কৃষক যদি ক্রমাগত লোকসানের সম্মুখীন হন, তাহলে সবজি উৎপাদনে কৃষকের উৎসাহ হ্রাস পাবে। ব্যর্থ হবে সবজি বিপ্লব। উৎপাদন কমে যাবে, ব্যবহার হ্রাস পাবে এবং পুষ্টিনিরাপত্তা হবে বিঘ্নিত। আগামী প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও মেধা বিকাশ হবে চরম হুমকির সম্মুখীন।
খোলাবাজারে আলুর কেজি ২০-২৫ টাকা। ফলে আলুর বাড়তি দামের আশা যারা করেছিলেন, তারা লোকসানের ঝুঁকিতে পড়েছেন। আলুর জন্য বীজ, সার, কীটনাশকসহ সবটার খরচ কিন্তু একই। প্রায় দ্বিগুণ খরচ করেও কৃষক উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না।
ফুলকপির সঙ্গে বাঁধাকপি, মুলা, শিম, লালশাক ও লাউশাকের দামেও ধস নেমেছে। বর্তমানে প্রতিকেজি মুলা ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ভালুকা, ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪-৫ টাকা কেজি দরে, যা এক মাস আগেও ছিল ৩০-৪০ টাকা কেজি। এছাড়া যে বাঁধাকপি প্রতিটি বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ টাকা, এখন সেই বাঁধাকপির জোড়া বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়।
আজ থেকে এক মাস আগে যে শিম বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা কেজিদরে এখন তা বিক্রি হচ্ছে শুধু ২০ টাকা কেজিতে। যে লাউশাক আজ থেকে এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা আঁটিতে, সেই আঁটি বিক্রি হচ্ছে এখন ১০ টাকায়। আর ১০ টাকা আঁটির লালশাক বিক্রি হচ্ছে দুই আঁটি ১০ টাকায়। যে আলু ও বেগুন দুই মাস আগে প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়, সেই আলু ও বেগুন এখন বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা কেজি দরে।
সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষক ফুলকপির চারা তৈরি করেও সময়মতো মূল জমিতে লাগাতে পারেননি। বৃষ্টির পর জমিতে জো আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সব চাষি একযোগে জমিতে ফুলকপির চারা রোপণ করেন এবং কিছুদিন পরই ফুলকপিতে বাজার সয়লাব হয়ে যায়। এ বছর খরিপ-১ ও খরিপ-২ মৌসুমে সবজির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকায় কৃষক বেশি লাভের আশায় রবি মৌসুমে ব্যাপকভাবে চাহিদার তুলনায় বেশি জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লালশাক প্রভৃতি সবজির চাষ করেন।
একই সময়ে বাজারে চাহিদার চেয়ে বেশি সবজির সরবরাহ, ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থা, উচ্চ পরিবহন খরচ ও পথে পথে চাঁদাবাজি এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের কৃষককে ঠকিয়ে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার অসাধুপ্রবণতা সবজির মূল্য পতনের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন অনেকে।
মুন্সিগঞ্জের আলু চাষী আকবর হাওলাদার জানান, অনেক আশা করে আলুর চাষ করেছিলাম দশ বিঘা জমিতে। সার, বীজ, কীটনাশক, শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। একই এলাকার কৃষক ইয়াকুব চৌধুরীও তার সাথে এক মত পোষণ করেন।
রংপুরের চাষী সোবহান মিয়া বলেন, আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। তিন বিঘা চমেটো চাষ করেছি। চাষের খরচ ও গাড়ি ভাড়া বাদ দিলে হাতে কিছুই থাকে না।
শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকার  কৃষক মনোয়ার হোসেন মাঝি বলেন, ‘প্রতিবছরই সবজিতে লোকসান গোনা লাগে। কৃষিকাজ ছাইরা দিমু। হিমাগারের ব্যবস্থা থাকলে আমাগো লেঅকসান হইতো না।’
কৃষিবিদরা  বলছেন, মন্ত্রণালয়ের সঠিক নির্দেশনার অভাব, স্থানীয় পর্যায়ে বাজার ব্যবস্থাপনার অপ্রতুলতা, নিম্নমানের বীজ, সার সরবরাহের সিন্ডিকেট, কৃষি ঋণ-প্রণোদনা প্রভাবশালীদের দখলে নেয়া ইত্যাদিও কারণে সবজির মূল্য পাচ্ছেন না চাষীরা।
কৃষকের দাবি হিমাগার থাকলে তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে লোকসানের মুখে পড়তে হতো না। আলু সংরক্ষণের জন্য দেশে অনেক হিমাগার থাকলেও ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মুলা সংরক্ষণের জন্য কোনো বিশেষায়িত হিমাগার নেই। আবার ফুলকপি-বাঁধাকপি উত্তোলন করে আলু, পেঁয়াজ ও রসুনের মতো দেশীয় পদ্ধতিতে ঘরেও সংরক্ষণ করা যায় না। কারণ এগুলো অত্যন্ত পচনশীল পণ্য। শুধু সংরক্ষণের অভাবে বাংলাদেশে উৎপাদিত সবজির প্রায় ৩০ ভাগ বিনষ্ট হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন প্রান্তিক কৃষক।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সবজি রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করে এক কোটি মার্কিন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। চলতি অর্থবছরে কৃষিপণ্য থেকে ১১২ কোটি ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য খাতের সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক বাজারের আকার ছিল ১৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। গত বছর বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বাজার (দেশীয় চাহিদা ও রফতানি) ছিল ৪৮০ কোটি ডলারের।
কৃষককে তার উৎপাদিত সবজির ন্যায্যমূল্য প্রদান নিশ্চিত করতে হলে সংযোগ চাষির মাধ্যমে উত্তম কৃষিচর্চা অনুসরণ করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন এবং বিদেশে রফতানি করতে হবে। দেশের অর্থনীতির মূল কাঠামো কৃষি খাতের ওপর নির্ভরশীল। তাই এ খাতে সঠিক প্রণোদনা, রফতানি বাড়াতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, তাজা ফলমূল ও শাকসবজি সংরক্ষণে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স