
‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’
তিস্তায় নেমে ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদ
- আপলোড সময় : ১৯-০২-২০২৫ ০২:২৭:১৯ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৯-০২-২০২৫ ০২:২৭:১৯ অপরাহ্ন


তিস্তা নদীর ন্যায্য পানির হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটির উদ্যোগে বিশাল পদযাত্রা শেষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের এই কর্মসূচিতে তিস্তা ব্রিজের লালমনিরহাট সীমান্ত থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কজুড়ে মানুষের ঢল নামে। পরে তারা লালমনিরহাটের তিস্তা রেলসেতুসংলগ্ন নদীতে নেমে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।
এতে অংশ নেন তিস্তাপাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা, বিএনপি নেতাকর্মী ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
তারা দাবি করেন, ভারত বছরের পর বছর তিস্তা নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের পাঁচ জেলার প্রায় দুই কোটি মানুষের জীবনযাত্রার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো পরিবেশ। বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আসাদুল হাবিব দুলু নেতৃত্ব দেন এ পদযাত্রায়।
তিস্তা নদীর পানি ন্যায্য হিস্যা, মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দাবিতে সোমবার রংপুর বিভাগের ৫ জেলায় ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। ওই দিন বিকেলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেলসেতু এলাকায় অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দুইদিন অবস্থানের জন্য তৈরি করা হয় মঞ্চ, রাত্রিযাপনের জন্য প্যান্ডেলসহ রয়েছে নানা আয়োজন। পদযাত্রা, আলোচনা, তিস্তায় দাঁড়িয়ে মশাল প্রদর্শন, ডকুমেন্টরি প্রদর্শনসহ নানা আয়োজন করা হয়।
গতকাল কর্মসূচি আরও ছিল তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির আয়োজনে সকাল থেকেই পাঁচটি জেলার ১১টি স্থানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, সমাবেশ এবং পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের নানা প্রান্তের মানুষ এতে যোগ দেন। তিস্তা নদীর পাড়ে হাজার হাজার মানুষ পতাকা, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকে এক নতুন মাত্রা দেন।
তিস্তা নদী বাংলাদেশের বৃহত্তম আন্তঃদেশীয় নদী হওয়া সত্ত্বেও ভারত একতরফাভাবে তিস্তা নদীর পানি প্রত্যাহার করে আসছে, যা বাংলাদেশের ৫টি উত্তরাঞ্চলীয় জেলার ২ কোটি মানুষের জীবনযাত্রার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বিশেষত শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় কৃষি কাজ ব্যাহত হচ্ছে, আবার বন্যার সময় ভারতের একতরফা পানি ছাড়ে তিস্তা নদীর দুই পাড়ে ভয়াবহ ভাঙন এবং ক্ষয়ক্ষতি বাড়াচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ‘তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা’ দাবির পক্ষে একতাবদ্ধ হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন একমাত্র সমাধান যা উত্তরের মানুষের জীবনমান রক্ষা করতে সক্ষম হবে।
আন্দোলনকারীরা এদিন নদীতে নেমে তাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। লালমনিরহাটের তিস্তা রেলসেতুর কাছে নদীতে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার আন্দোলনকারী বলেন, তিস্তা নদী একসময় অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলেছিল, কিন্তু এখন এটি মরুভূমিতে পরিণত হয়ে গেছে। নেতারা আরও বলেন, আমরা দাবি করেছি, তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আমাদের দেয়া হোক, যাতে উজানের পানি আগ্রাসন বন্ধ হয়।
আন্দোলনকারীরা আন্তর্জাতিক নদী আইনের মাধ্যমে ভারতের কাছে তিস্তার পানি শেয়ার করার দাবি জানান।
আন্দোলনের সমাপনী দিনে বিকেল ৫টায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে গণসমাবেশে বক্তব্য দেন। এছাড়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, হাফিজ উদ্দিন আহমদসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা আন্দোলনে উপস্থিত ছিলেন।
আসাদুল হাবিব (দুলু) বক্তব্যে বলেন, তিস্তা একসময় জীবনদায়ী ছিল, কিন্তু এখন মৃতপ্রায়। তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষের জীবন আজ বিপন্ন। একদিন এই নদী আমাদের জীবন বদলে দিয়েছিল, কিন্তু আজ তা আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একমাত্র তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও পানির ন্যায্য হিস্যা অর্জন করলেই এখানকার মানুষের দুর্দশা কাটানো সম্ভব।
তিস্তা নদীর পানি এখন বাংলাদেশের জন্য এক আশীর্বাদ না হয়ে বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীর পানি সঠিকভাবে শেয়ার না হওয়ার কারণে প্রতিবছর বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য ভয়াবহ পরিবেশের সৃষ্টি হবে।
তিস্তা নদী বাংলাদেশের জন্য একটি জীবনরেখা। উজানে পানি আগ্রাসন এবং নদীর পানি কমিয়ে দেওয়া বাংলাদেশের কৃষি ও পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ইতিমধ্যে তিস্তা নদীর পাড়ে জমি ভাঙন, বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ