চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
চৌগাছায় সরকারি মডেল হাসপাতালের ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবন রোগীদের কোনো কাজে আসছে না। নতুন ভবনের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও প্রশাসনিক অনমোদন না পাওয়ায় ১০০ শয্যার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। ফলে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে পুরাতন ভবনের বারান্দা ও ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে। উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য ভবন নির্মাণ ও অক্রিজেন প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় ১৫ মাস আগে ভবনটির অবকাঠমো নির্মাণ করা হয়েছে। এত ব্যয় হয়েছে ৩৮ কোটি টাকা। কিন্তু প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় ১০০ শয্যার কার্যক্রম এখনও শুরু করা যায়নি। এত নতুন ভবন থাকতেও রোগীদের পুরাতন ভবনের বারান্দা ও ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে হাসপাতালটিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।
যশোর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধীদফতরের তত্ত্বাবধানে তিনটি গুচ্ছে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এ হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে ছয়তলা বিশিষ্ট হাসপাতালের মূল ভবন ২১ কোটি ৪৬ লাখ ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালে ২৯ এপ্রিল এই ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এই নির্মানণ কাজ শেষ হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের পাঁচটি আবাসিক ভবন ১৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। গত ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ২৯ আগস্টে এসব ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এ ছাড়া এ ভবনে অক্রিজেন প্লান্টসহ সরবরাহ লাইন স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চৌগাছা সরকারি মডেল হাসপাতালে কক্ষ সংকটের কারণে পুরাতন ভবনের খোলা বারান্দায় শিশু ডায়রিয়া ওয়ার্ডের কার্যক্রম চলছে। যে বারান্দা দিয়ে এক ওয়ার্ড থেকে রোগী ও রোগীর স্বজনরা অন্য ওয়ার্ডে চলাচল করেন। এ শিশু ডায়রিয়া ওয়ার্ড সব সময় চলাচলকারী লোকজনের ভিড় লেগেই থাকে। ফলে রোগী ও স্বজনদের নাজেহাল অবস্থার শিকার হতে হয়। গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালটিতে গেলে চোখে পড়ে, শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় কয়েকটি শয্যা ফেলে রোগী রাখা হয়েছে। কয়েকজন রোগীকে বারান্দায় কম্বল পেতে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পুরুষ ওয়ার্ডের ভিতরে কম্বল পেতে ও বারান্দায় কয়েকটি শয্যায় চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। মহিলা ওয়ার্ডের বারান্দায় ও ভিতরেও রোগীর ভিড় রয়েছে। ৫০ শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছেন ৮৫ জন। এর মধ্যে বেড ছাড়াই রয়েছেন শিশু ১৪ জন, পুরুষ ৯ জন ও মহিলা ১২ জন। ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সেবীকা তোরানীয়া সুলতানা জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ হাসপাতাল থেকে প্রায় ৩০/৪০ জন রোগী ছুটি নিয়ে চলে গেছে।
শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়া আক্রান্ত দুই বছর বয়েসী নুসরাত জাহান ৩ দিন যাবৎ ভর্তি রয়েছেন। তার মা রুমা খাতুন তাকে কোলে নিয়ে পায়চারী করে বেড়াচ্ছেন। এ সময় রুমা খাতুন বলেন, বারান্দা দিয়ে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা মানুষ চলাচল করেন তাই মেয়েকে নিয়ে বারান্দায় থাকা খুবই কষ্টকর। একটি শিশু ডায়রিয়া ওয়ার্ড থাকলে ভাল হতো। এ সময় চোখে পড়ে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করতে নতুন একটি ছয়তলা ভবনের কাজ শেষ করা হয়েছে। সেটি দীর্ঘ সময় ব্যবহার না হওয়ায় রং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
চুরি হয়ে যাচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র। এ ব্যাপারে চৌগাছা সরকারি মডেল হাসপাতালের টিএইচ এফপিও ডা. আহসানুল মিজান রুমি বলেন, ভবন নির্মাণ শেষ হলেও নতুন ভবনের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় ১০০ শয্যার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। আমরা প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও প্রশাসনিক অনুমোদন চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অতিসম্প্রতি আবারো আবেদন করেছি। এ ব্যাপারে যশোর সিভিল সার্জন ডা. মাছুদ রানা বলেন, চিঠি পাঠনোর পরই তো দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলো। আমরা আবার ২০২৫ সালের জানুয়ারির শেষে নতুন করে আবারো আবেদন করেছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
