ঢাকা , বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ , ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আফগানিস্তানকে নিষিদ্ধের আহ্বান রোহিঙ্গাদের সাথে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব জনগণের সমস্যা সমাধানে রাজনীতিবিদদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে দেশে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে-তথ্য উপদেষ্টা সর্বনিম্ন ফিতরা ১১০ সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০৫ টাকা চলতি বছরের মধ্যে পাচারকৃত অর্থের কিছু অংশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব-অর্থ উপদেষ্টা পদযাত্রায় সংঘর্ষে শিক্ষার্থী-পুলিশ আহত ধর্ষকের শাস্তি জনসম্মুখে করাসহ ৬ দাবি ঈদের পর এনসিপির চূড়ান্ত রাজনৈতিক এজেন্ডা শ্রমিকদের ওপর হামলার বিচার ও বেতনের দাবি ঝিমিয়ে পড়েছে বিদেশী বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুত অর্থছাড় প্রক্রিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোচিং ক্লাস-প্রাইভেট পড়ানো যাবে না ন্যায়বিচার-মানবাধিকার নিশ্চিতের আহ্বান চার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রবাসীদের জন্য ‘প্রক্সি ভোট’ নিয়ে ভাবছে ইসি শেখ পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ট্রেনের যাত্রী জিম্মি উদ্ধারে গিয়ে ২০ সেনা নিহত ট্রেনে জঙ্গি হামলা জিম্মি ৫শ’ যাত্রী পল্লবী থানায় ঢুকে হামলা ওসিসহ আহত ৩ রাখাল রাহার ৪শ’ কোটি টাকা বাণিজ্যের তথ্য ভুয়া ব্যবসায়ী হত্যায় ৪ জনের যাবজ্জীবন
সরকারের হস্তক্ষেপ কামনায় সাংবাদিক সম্মেলন

ইতালির কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে চাওয়া হচ্ছে মুক্তিপণ

  • আপলোড সময় : ১৭-০২-২০২৫ ০৩:০২:৪২ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৭-০২-২০২৫ ০৩:০২:৪২ অপরাহ্ন
ইতালির কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে চাওয়া হচ্ছে মুক্তিপণ
ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন ও মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায়ের পরও ভুক্তভোগীদের না ছেড়ে আবারও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে মধ্যস্থতাকারী মোজাম্মেল হোসেন এবং ‘ঢাকা হাওলাদার ট্রাভেলস’ এর বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার অসহযোগিতাসহ আসামিদের পক্ষে কাজ করছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা। গতকাল রোববার রাজধানীর ক্র্যাব মিলনায়তনে ‘মানবপাচার মামলার তদন্ত নিয়ে পুলিশের গড়িমসি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন এসব কথা জানান ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে ভুক্তভোগী মাসুম মোল্যার ভাই আশরাফুল মোল্যা বলেন, মোজাম্মেল হোসেনের শ্বশুরবাড়ি আমার পার্শ্ববর্তী উপজেলায় হওয়ায় তিনি আমার পূর্ব পরিচিত। ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর মোজাম্মেল আমার বড় ভাইকে ইতালিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন। বৈধভাবে ১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে ‘ঢাকা হাওলাদার ট্রাভেলস’ অফিসের মাধ্যমে ইতালিতে লোক পাঠায়। তার প্রস্তাবে আমি রাজি হই এবং ১১ ডিসেম্বর দালাল চক্রের অন্য সদস্যদের নিয়ে গুলশান অফিসে আসার পর আমার বড় ভাই মাছুমকে ১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে ইতালিতে পাঠানোর জন্য মৌখিকভাবে চূড়ান্ত চুক্তি হয়। ওই দিন আমি পাসপোর্টের সঙ্গে নগদ তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে বাড়িতে চলে আসি। পরে মোজাম্মেল আমাকে ফোন কল করে বলেন যে, আপনার বড় ভাইয়ের ফ্লাইট ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি এবং আমাকে বলেন বাকি ১৫ লাখ টাকা সঙ্গে নিয়ে অফিসে আসবেন। গত ২১ জানুয়ারি মোজাম্মেল আমাকে ব্যাংক হিসাব নম্বর দেন এবং বলেন এক লাখ টাকা পাঠানোর জন্য, আমি ওই দিনই এক লাখ টাকা পাঠিয়ে দেই। পরে বাকি ১৪ লাখ টাকা নিয়ে ঢাকার অফিসে অন্য সব আসামিদের সামনে নগদ ১৪ লাখ টাকা মোজাম্মেলের হাতে বুঝিয়ে দেই। এ সময় মোজাম্মেল ২৮ জানুয়ারি সকাল ৯টার মধ্যে আমার বড় ভাইকে সঙ্গে নিয়ে অফিসে যেতে বলেন এবং সন্ধ্যায় তার ইতালির ফ্লাইট বলেও জানান তিনি। আমি মোজাম্মেলের কাছে বিদেশ যাওয়ার সব কাগজপত্র চাইলে তিনি বলেন, কাগজপত্র লাগবে না। সব কাগজ ফ্লাইটে ওঠার আগে বুঝিয়ে দেবেন। তখন আমি তার কথা বিশ্বাস করি। ২৮ জানুয়ারি বড় ভাইকে নিয়ে তাদের অফিসে যাই। সেখানে আরও পাঁচ থেকে ছয়জনকে দেখি অফিসে, তারাও ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে এসেছেন। পরে ওই দিন রাত ৯টায় দুবাইয়ের উদ্দেশে আমার বড় ভাইসহ আরও পাঁচ থেকে ছয়জনকে পাঠানো হয়। আমার ভাই দুবাই পৌঁছালে আমাকে ফোন কল দিয়ে বলেন যে, আমি এখন দুবাই আছি। পাঁচ দিন পরে ইতালির ফ্লাইট। এ বিষয়ে মোজাম্মেলের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, দুবাই থেকে ইতালির ফ্লাইট হবে। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি আমার বড় ভাই কল দিয়ে বলেন যে, আমিসহ আরও সাত থেকে আটজনকে ইতালির ফ্লাইট না দিয়ে দালালের মাধ্যমে লিবিয়া নিয়ে এসেছে। আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য মোজাম্মেল ও তার স্ত্রী ফারজানাসহ অন্য আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে বলেন ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে তোমার ভাই ইতালিতে যাবেন। আমি তাদের কথা বিশ্বাস করি। এর ১৫ দিন পরে আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে ২৪ মার্চ আমার বড় ভাই কল দিয়ে বলেন যে, দালালরা আমাকে আটকে রেখেছে। পাশাপাশি অমানবিক নির্যাতনের ভিডিও অডিও ক্লিপ আমাকে পাঠায়। আমাকে বলেন ভাইকে ওখান থেকে মুক্ত করতে হলে ২৫ লাখ টাকা দালালদের দিতে হবে। এ কথা শোনার পর দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং ঢাকা অফিসে (ঢাকা হাওলাদার ট্রাভেলস) এসে অফিস বন্ধ পাই। এরপর মোজাম্মেলের কথায় ভাইয়ের জীবন বাঁচানোর জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭ লাখ টাকা দেই। এ নিয়ে দালাল চক্রকে মোট ৩৫ লাখ টাকা দেই। তারপরও তারা আমার ভাইকে ছাড়েনি। টাকা দেয়ার ছয়মাস পার হয়ে গেলেও ভাইয়ের সন্ধান না পেয়ে আমি দালাল মোজাম্মেলসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পরে আমিও আরেক ভুক্তভোগীর বাবা চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি গুলশান থানায় তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করি। আশরাফুল বলেন, মোজাম্মেলকে আটকের পর চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. পলাশ হোসেন মোজাম্মেলকে দুই দিনের রিমান্ডের জন্য থানায় হাজির করেন। গুলশান থানার তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ তুলে ধরে আশরাফুল বলেন, এসআই পলাশ আসামিকে রিমান্ড নিয়ে গড়িমসি করেন ও টাকার জন্য আমাদের হুমকি দেন। টাকা না দেয়ায় মামলার সঠিক তদন্ত নিয়ে টালবাহানা করেন। পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তিনি অন্য আসামিদের গ্রেফতার করছেন না। তিনি বলেন, এসআই পলাশ মামলার ৪ নম্বর আসামি নওশেদ শিকদারকেও গ্রেফতার করতে অনীহা প্রকাশ করেন। তারপর আমরা ৯৯৯ এ কল দিয়ে গুলশান থানার এসআই মশিউরের সহযোগিতায় নওশেদকে গুলশান থানার তাজ উদ্দিন আহমেদ পার্ক থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আসামি নওশেদ, মোজাম্মেল এবং মুন্না হাওলাদার অবৈধভাবে কীভাবে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়াতে লোক পাচার করে সে সম্পর্কে এসআই পলাশের সামনে বিস্তারিত জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি পাওয়ার পরও এসআই পলাশ কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলেও জানান তিনি। মামলার পলাতক আসামি মুন্নাসহ অন্যরা ভুক্তভোগীদের লিবিয়ায় অবস্থানরত চক্রের অন্য সদস্য মো. তারেক (দিপু) এর কাছে আটকে রেখে আমাদের হুমকির পাশাপাশি মুক্তিপণের জন্য আরও ২০ লাখ টাকা দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু পুলিশ কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলেও জানান আশরাফুল। এদিকে আরেক ভুক্তভোগী রিপন শিকদারের বাবা সাদেক শিকদার একই অভিযোগ তুলে বলেন, ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর সময় ২১ লাখ টাকা দালালদের পরিশোধ করেছি। এরপরেও ভুক্তভোগী রিপনকে আটকে পাশবিক নির্যাতন করে সামাজিক যোগাযোগ ইমুর মাধ্যমে নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিও এবং অডিও পাঠিয়ে আরও ২৫ লাখ টাকা দাবি করে। আমি বিভিন্নভাবে আরও ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ করি কিন্তু চার মাস পার হয়ে গেলেও তারা আমার ছেলেকে ছাড়েনি। বরং আরও ২০ লাখ টাকা দাবি করেছে। টাকা না দিলে তারা আমার ছেলেকে মেরে ফেলবেন বলে হুমকি দিচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত গুলশান থানার এসআই পলাশ হোসেন বলেন, অফিসে আসেন। না হয় এবিষয়ে ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স