ঢাকা , বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ , ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
রোহিঙ্গাদের সাথে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব জনগণের সমস্যা সমাধানে রাজনীতিবিদদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে দেশে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে-তথ্য উপদেষ্টা সর্বনিম্ন ফিতরা ১১০ সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০৫ টাকা চলতি বছরের মধ্যে পাচারকৃত অর্থের কিছু অংশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব-অর্থ উপদেষ্টা পদযাত্রায় সংঘর্ষে শিক্ষার্থী-পুলিশ আহত ধর্ষকের শাস্তি জনসম্মুখে করাসহ ৬ দাবি ঈদের পর এনসিপির চূড়ান্ত রাজনৈতিক এজেন্ডা শ্রমিকদের ওপর হামলার বিচার ও বেতনের দাবি ঝিমিয়ে পড়েছে বিদেশী বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুত অর্থছাড় প্রক্রিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোচিং ক্লাস-প্রাইভেট পড়ানো যাবে না ন্যায়বিচার-মানবাধিকার নিশ্চিতের আহ্বান চার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রবাসীদের জন্য ‘প্রক্সি ভোট’ নিয়ে ভাবছে ইসি শেখ পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ট্রেনের যাত্রী জিম্মি উদ্ধারে গিয়ে ২০ সেনা নিহত ট্রেনে জঙ্গি হামলা জিম্মি ৫শ’ যাত্রী পল্লবী থানায় ঢুকে হামলা ওসিসহ আহত ৩ রাখাল রাহার ৪শ’ কোটি টাকা বাণিজ্যের তথ্য ভুয়া ব্যবসায়ী হত্যায় ৪ জনের যাবজ্জীবন ডিএফপি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নতুন কমিটি

রাজধানীতে ফের বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

  • আপলোড সময় : ১৬-০২-২০২৫ ০২:৩৯:১০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৬-০২-২০২৫ ০২:৩৯:১০ অপরাহ্ন
রাজধানীতে ফের বেপরোয়া কিশোর গ্যাং
* কিশোর গ্যাং থেকে রেহাই পাচ্ছে না পুলিশও, নিরুপায় সাধারণ মানুষ * জেল থেকে ছাড়া পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী-মাদক কারবারিদের ছত্রছায়ায় তা-ব * রাজধানীতে অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত ৪০ শতাংশই কিশোর * সারাদেশে ২৩৭টি কিশোর গ্যাং গ্রুপের মধ্যে ঢাকায় ১২৭টি গ্রুপ * মোহাম্মদপুরে অধিকাংশ গণছিনতাই, দখল ও খুনের সাথে জড়িত কিশোর গ্যাং রাজধানীতে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। জেল থেকে ছাড়া পাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিদের ছত্রছায়ায় তা-ব চালাচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। সারাদেশে ২৩৭টি কিশোর গ্যাং গ্রুপের মধ্যে ঢাকায় ১২৭টি গ্রুপ রয়েছে। তবে রাজধানীতে অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত ৪০ শতাংশই কিশোর গ্যাং। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অধিকাংশ গণছিনতাই, দখল ও খুনের সাথে জড়িত রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। সম্প্রতি এই গ্যাংয়ের সদস্য আরও বেড়েছে এবং সারাদেশেই তা-ব চালাচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি তথ্য স্বীকার করেছে। সম্প্রতি ঘটা কয়েকটি ঘটনায় চোখ রাখা যাক। ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হন পুলিশের চারজন সদস্য। হামলার ঘটনার নেপথ্যে রায়েরবাজার বোর্ড ঘাট এলাকার কিশোর গ্যাং ‘পাটালি গ্রুপ’ জড়িত বলে জানায় পুলিশ। নেতৃত্ব দেয় ল্যাংড়া হাসান, ফরহাদ ও চিকু শাকিল। সবমিলিয়ে হামলা চালায় ৩০-৪০ জন। ১ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের দুই পক্ষের গুলিবিনিময়ের মধ্যে এক কলা ব্যবসায়ী ও কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এটা ছিল তাদের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। গত ১২ নভেম্বর শাখাওয়াত হোসেন ও তার বন্ধু মো. আলমগীর হোসেন উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনে থেকে হাউজ বিল্ডিংয়ে যাওয়ার জন্য অটোরিকশা নেন। তখন আটক এক কিশোরও তাদের সঙ্গে একই রিকশায় ওঠে। যাওয়ার পথে কিশোর গ্যাংয়ের ৭-৮ জনের সহায়তায় দুই বন্ধুকে ভয় দেখিয়ে দুটি মোবাইল ও নগদ ১৯ হাজার ৬০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়া নেয়। পরে তাদের আটকে রেখে পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে। এভাবে পুলিশও বাদ যাচ্ছে না ভয়ংকর এ গ্যাংয়ের হাত থেকে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় সমাজের এহেন বাজে কাজ নেই যাতে তারা করছে না। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দফতর সূত্র বলছে, ডিএমপির প্রতিটি থানা এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্য রয়েছে। ঢাকায় অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত ৪০ শতাংশই কিশোর। আগের চেয়ে তাদের দলের সদস্য সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২০ হাজারের বেশি। তাদের হাতে এখন পিস্তলসহ আধুনিক ধারালো অস্ত্রও রয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছে, শুধু রাজধানীতেই নয়, দেশের প্রতিটি থানা এলাকায় কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের সদস্য বেড়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা গ্রামীণ জনপদেও ছড়িয়ে পড়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২৩৭টির মতো কিশোর গ্যাং গ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকায় ১২৭টি। সরকার পরিবর্তনের আগে ঢাকায় এসব গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৩৮২। বর্তমানে তা আরও বেড়েছে। এখন ঢাকার প্রতিটি থানা এলাকায় ৫০০ থেকে এক হাজার সদস্য রয়েছে। চট্টগ্রামে ৫৭টি গ্রুপে সদস্য ৩১৬। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। হঠাৎ সারাদেশে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নানামুখী অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। নিজেদের হিরোইজম জাহির করতে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক কারবার এমনকি খুনোখুনিতে লিপ্ত হচ্ছে এসব কিশোর-তরুণ। এতে আতঙ্কিত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহর-পাড়া-মহল্লার বাসিন্দারা। আওয়ামী লীগের পতন হলেও দল পাল্টে এখনো অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। অতীতের মতো এখনো রাজনৈতিক নেতা কিংবা প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তারা। তবে পুলিশের কাছে শুধু কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধের আলাদা কোনো তথ্য নেই। সদস্য বাড়া ও তাদের সাম্প্রতিক কর্মকা- বিবেচনায় বলছে কিশোর গ্যাং আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, সমাজের বিভিন্ন স্তরে মাদকের আগ্রাসন বেশি। এ আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে কিশোররা। এ কারণে তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- করতে দ্বিধাবোধ করছে না। সম্প্রতি অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। তাদের ছত্রছায়ায় থেকে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা-ব চালাচ্ছে। কিশোর গ্যাং সদস্যদের গ্রেফতারের পাশাপাশি তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও আইনের আওতায় আনতে কাজ চলমান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ডাইল্লা গ্রুপ, এলেক্স গ্রুপ, ইমন গ্রুপ, আনোয়ার ওরফে শুটার আনোয়ার গ্রুপ, আকাশ গ্রুপ, দ্য কিং অব লও ঠেলা গ্রুপ, ডায়মন্ড গ্রুপ, আই ডোন্ট কেয়ার (আইডিসি), মুরগি গ্রুপ, সাব্বির গ্রুপ, শাওন গ্রুপ, ফিল্ম ঝিরঝির, স্টার বন্ড, গ্রুপ টোয়েন্টি ফাইভ, লাড়া দে, লেভেল হাই, দেখে ল-চিনে ল, কোপাইয়া দে গ্রুপ। উত্তরা এলাকার গ্যাংগুলোর মধ্যে রয়েছে নাইন স্টার, পাওয়ার বয়েজ, বিল বস, নাইন এম এম বয়েজ, সুজন ফাইটার, ক্যাসল বয়েজ, আলতাফ জিরো, ভাইপার, তুফান। মিরপুর এলাকায়-সুমন গ্যাং, পিচ্চি বাবু, বিহারি রাসেল, বিচ্ছু বাহিনী, সাইফুল গ্যাং, বাবু রাজন, রিপন গ্যাং, সাব্বির গ্যাং, নয়ন গ্যাং এবং মোবারক গ্যাং। ধানমন্ডিতে একে ৪৭, নাইন এম এম ও ফাইভ স্টার বন্ড। বংশালে রয়েছে জুম্মন গ্যাং, তেজগাঁওয়ে মাঈনুদ্দিন গ্যাং, মুগদায় চান জাদু, ডেভিড কিং ফল পার্টি, ভলিয়ম টু ও ভান্ডারি। পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, কলতাবাজার, পানিটোলা, লালকুঠি, শ্যামবাজার, ইসলামপুর, বাবুবাজারসহ সদরঘাটের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফেরদৌস গ্রুপ, সাজু গ্রুপ, সিনিয়র গ্রুপ, জুনিয়র গ্রুপ, টাইগার গ্রুপ, চিতা গ্রুপের সদস্য অপরাধের শীর্ষে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় বেড়েছে গণছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। কিশোর গ্যাং গ্রুপের মহড়া চলে আদাবরের রাস্তায় রাস্তায়। আধিপত্য বিস্তার বা পূর্বশত্রুতার জেরে জোড়া খুনের ঘটনাও ঘটে মোহাম্মদপুর-রায়েরবাগ এলাকায়। এসব অপরাধে জড়িত একাধিক কিশোর গ্যাং গ্রুপ। চলতি বছরের শুরুতে গত ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আদাবরের মেহেদীবাগ, আদাবর বাজার এলাকায় দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় কিশোর গ্যাং সদস্যরা। এতে বাধা দেয়ায় এলাকাবাসীর ওপর হামলা করে গ্যাং গ্রুপের কয়েকশ সদস্য। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় অর্ধশতাধিক স্থানীয় বাসিন্দা আহত হন। মোহাম্মদপুর স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় কিছুদিন পরপর কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা গণছিনতাই চালায়, আবার দেশি অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। সন্ধ্যার পর বাইরে বের হতে ভয় লাগে তাদের। মহড়া দেয়ার সময় বাসাবাড়ির জানালার গ্লাস ভাঙচুর, লাইট ভাঙচুর করে গ্যাংয়ের সদস্যরা। পুলিশ জানায়, মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিদের নেতৃত্বে চলছে কিশোর গ্যাংগুলো। একসময় স্থানীয় ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসু ও কাসুর কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান ছিলেন ডিবি সুমন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাসু ও কাসু পালিয়ে যাওয়ায় তাদের অনুপস্থিতিতে তার ভাই স্বাধীনের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে সে। স্বাধীনের ইন্ধনে পুরো এলাকায় ত্রাস কায়েম করতে এমন মহড়া দিয়েছে চক্রটি। গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রায়েরবাজারে সাদেক খান কাঁচাবাজার এলাকায় কিশোর গ্যাং ‘ডাইল্লা গ্রুপ’ ও ‘এলেক্স গ্রুপের’ মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে নাসির (৩০) ও মুন্না (২২) নামে দুজন নিহত হন। গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে মাহবুব নামে এক তরুণ স্ত্রী ও মাকে থার্টিফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠান দেখার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। ওই দিন রাত দেড়টার দিকে লালবাগের জেএন সাহা রোডে একটি বাড়ির ভেতরে কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্য মো. মাঈন উদ্দিনসহ ১৩-১৫ জন পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মাহবুবকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে এবং লালবাগের লিবার্টি ক্লাব-সংলগ্ন রাস্তায় তার মরদেহ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। গত ৩ জানুয়ারি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শাখা সংলগ্ন রানীর দীঘির পাড়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয়। এতে ওই এলাকার মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যায়। পুলিশ জানায়, কুমিল্লার আলোচিত কিশোর গ্যাং ‘রতন গ্রুপের’ অন্তত ৩০ সদস্য চাপাতি, চায়নিজ কুড়াল, রামদাসহ দেশি বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনে রানীর দীঘির পাড়ে মহড়া দেয়। ২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর রাতে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় সজীব হোসেন ওরফে বাবু (২২) নামে এক তরুণকে পিটিয়ে ছুরিকাঘাত করা হলে পরদিন সকালে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার নেপথ্যে ছিল কিশোর গ্যাংয়ের মাদক কারবার ছিল বলে জানায় পুলিশ। নিহত সজীবের বড় বোন সনিয়া আক্তার জানান, তার ভাই কুমিল্লা নগরে একটি সুপারশপের কর্মীর ছিল। যারা খুন করেছে, তারা ভয়ংকর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে এ এলাকায় থাকেন। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য বেড়েছে। দিনে-দুপুরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি করছে। প্রায়ই পথচারীদের পথরোধ করে এসব কিশোর গ্যাং ছিনতাই-ডাকাতি করে। নারীরাও কিশোর গ্যাংয়ের শিকার হচ্ছেন। এছাড়া উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা রিয়াজুল হক বলেন, ৫ আগস্টের পর কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ বেড়েছে। বাসা-বাড়ি ও দোকান থেকে অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা নিচ্ছে এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা। মিরপুর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দাও জানান, মিরপুরেও আগের চেয়ে কিশোর গ্যাং সদস্যদের অপরাধমূলক কর্মকা- বেড়েছে। সন্ধ্যা হলেই কিছু সড়ক আছে সেখানে চুরি, ছিনতাই হচ্ছে। পুলিশের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ঢাকার মধ্যে আদাবর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। এ দুটি স্থানে একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের কয়েক হাজার সদস্য রয়েছে। আদাবর এলাকার আলিফ হাউজিং, শ্যামলী হাউজিং, শেখেরটেক ও ঢাকা উদ্যান এলাকার সব ধরনের অপরাধের সঙ্গে এদের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এছাড়া মিরপুর, উত্তরা, পুরান ঢাকার বিভিন্ন মহল্লা, ডেমরাসহ রাজধানীর ৫০টি থানা এলাকায় কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের অপরাধমূলক কর্মকা- আগের চেয়ে বেড়েছে। পুলিশ বলছে, প্রায় প্রতিদিনই কিশোর গ্যাংয়ের নানা অপরাধের তথ্য ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আসছে। মাদকের বিস্তার, অর্থলোভ, আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেকে বড় ভাবার প্রবণতা, বেকারত্ব, অভিভাবকদের দায়িত্বহীনতাসহ বেশ কয়েকটি কারণে বিপথগামী তরুণরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সজাগ রয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর অপরাধের ধরন অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কিশোর অপরাধ কমাতে সামাজিক সচেতনতামূলক নানা কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গত ৬ জানুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পুরাতন বাড়ি ভাঙার সময় দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে চাঁদার জন্য ঠিকদারকে হুমকি দেয় কিশোর গ্যাং চক্রের সদস্যরা। এসময় চাঁদা না পেয়ে শ্রমিকদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তারা। ভুক্তভোগী ঠিকাদার মো. রহিম জানান, তিনি গত ২৭ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর সাতমসজিদ হাউজিং এলাকার ২ নম্বর রোডে একটি পুরাতন বাড়ি কেনেন। ৬ জানুয়ারি ভাঙার কাজ শুরু করা হয়। এসময় কিশোর গ্যাং চক্রের মূলহোতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী বাবু ওরফে তেরেনাম বাবুর নির্দেশে সোহেল ওরফে ইয়াবা সোহেল, ডিশ শাহিন ও তোতা মিয়াসহ ১৫-২০ জনের একটি দল রামদা, চাপাতি, সামুরাই ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে এসে দুই লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে হুমকি দিয়ে যায়। গত ২৮ অক্টোবর মোহাম্মদপুরের নবোদয় কাঁচাবাজারের পাশে মোহাম্মদিয়া হোমস গেট এলাকায় ধারালো দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে দোকানের ভেতরে ঢুকে ব্যবসায়ীকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে যায় কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্য। এমন হুমকির ঘটনায় ওই ব্যবসায়ীর পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীর ভাই হাম্মাদুর রহমান বলেন, একজন এসে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আশপাশে চাঁদা দাবি করে। ওই সময় আশপাশের কয়েকজন মিলে আমরা তাকে আটক করি। সে সময় বেশ কয়েকবার থানা পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীকে বিষয়টি জানাই। এর ঠিক এক ঘণ্টা পরেই ৫-৬ জনের একটি গ্রুপ অস্ত্র-শস্ত্র হাতে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে আমার ভাই ও আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম কিশোর গ্যাংয়ের নতুন তালিকা করে অভিযান চালাতে সারা দেশে পুলিশের সব ইউনিটপ্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ সদর দফতরে গত পাঁচ মাসে দফায় দফায় বৈঠক করে তাদের নিয়ন্ত্রণের পথ খোঁজা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপারদের এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌস বলেন, সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদপুরের ইমন গ্রুপের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে এর আগেও র‌্যাবের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। পটপরিবর্তনের পর থেকে এসব কিশোর গ্যাং গ্রুপ কালচার আবার সক্রিয় হওয়া চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে র‌্যাব। তিনি বলেন, পাড়া-মহল্লার এসব কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা তৈরি ও তাদের শনাক্ত করার বিষয়ে র‌্যাবের সব ব্যাটালিয়নকে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া কিশোর গ্যাং গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকদের শনাক্তেও কাজ করছে র‌্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়ন। ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ৫ আগস্টের পর বেপরোয়া কিশোর গ্যাং সদস্যদের ধরতে ডিবি কাজ করছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্যাং সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে অপরাধমূলক কর্মকা-ে লিপ্ত হবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধমূলক কর্মকা- দমাতে ডিএমপির ৫০ থানা কাজ করছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশও নজরদারি বাড়িয়েছে। ডিমএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় ঢাকায় এলাকাভিত্তিক তালিকা তৈরি করে অপরাধে জড়িত কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের প্রতিদিনই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্টেও’ কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স