ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫ , ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সফর হবে দু’দেশের জন্য মাইলফলক স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হবে আজ স্বরূপকাঠির সুটিয়াকাঠি বলদিয়া সংযোগ সেতুর বেহাল দশা ভারত থেকে এলো সাড়ে ১১ হাজার মেট্রিক টন চাল সাতক্ষীরায় গাছে ঝুলছিল যুবকের লাশ শেখ হাসিনা রাইফেল দিয়ে ইতিহাস পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন- রিজভী শিক্ষার্থীসহ সব ধরনের ভিসা ফি বাড়াচ্ছে যুক্তরাজ্য মাদারীপুরে শ্রমিকদলের একাংশের সভাপতিকে কুপিয়ে হত্যা রাজধানীতে ছিনতাই চাঁদাবাজি অনেকাংশে কমে গেছে : ডিএমপি কমিশনার আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা ও নিবন্ধন বাতিলের দাবি নাহিদের ঐকমত্য কমিশনে প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে নেজামে ইসলাম পার্টি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কারো হস্তক্ষেপ কাম্য নয়- সারজিস ছাত্রনেতারা আগ্রহ নিয়ে তার কাছে গিয়েছিলেন : নুর বর্জ্য পৃথকীকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে-পরিবেশ উপদেষ্টা বিপর্যয়ে ট্রাভেল এজেন্সি খাত সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত না করার আহ্বান জাতীয় পার্টি মহাসচিবের একনেকে ২১ হাজার ১৩৯ কোটি টাকার ১৫ প্রকল্প অনুমোদন জনগণের ইস্যুগুলো নিয়ে কথা বলা উচিত এটাই রাজনীতি-তারেক রহমান ৭১ ও ২৪ এক কাতারে রাখায় দ্বিমত বিএনপির টিক চিহ্ন নয়, সংস্কারের উপযুক্ত পদ্ধতি আলোচনা
* টিটন নিশ্চুপ, পিচ্চি হেলাল আত্মগোপনে, খোঁজ নেই ইমনের * কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে তালিকাভুক্ত ১১ শীর্ষ সন্ত্রাসী

অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণে মরিয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা

  • আপলোড সময় : ১৪-০২-২০২৫ ০৮:১৬:৫৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৪-০২-২০২৫ ০৮:১৬:৫৮ অপরাহ্ন
অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণে মরিয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা
প্রকাশ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জড়িয়ে পড়েছে জমি ও বাড়ি দখল এবং চাঁদাবাজিতে। জুলাই বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরে রাজনৈতিক, হয়রানিমূলক ও গায়েবি মামলার অনেক বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। ওই সময় আইনি এ প্রক্রিয়ায় ফাঁক গলে এ পর্যন্ত সরকারের তালিকাভুক্ত ১১ শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন। এইসব সন্ত্রাসীরাই জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অপকর্মে। চাঁদা না পেয়ে দখলের চেষ্টা করা হচ্ছিল মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার। সেটাও সম্ভব হয়নি ছাত্র-জনতা ও ব্যবসায়ীদের কারণে। ক্ষোভ থেকেই গত ১০ জানুয়ারি রাতে টার্গেট করে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে কোপানো হয় দুই ব্যবসায়ীকে। দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহতের ঘটনায় নতুন করে সামনে এসেছে দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম। যারা একসময় অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক ছিলেন। তারা হলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন ও মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল।
জানা গেছে, এলিফ্যান্ট রোডে দুই ব্যবসায়ীর ওপর হামলার নেপথ্যে রয়েছে দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজির দ্বন্দ্ব। যারা জেলে থাকতেই নিয়ন্ত্রণ করত অপরাধ জগত। গত ৫ আগস্টের পর আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে অন্তত ১১ জন জামিনে মুক্তি পায়। তাদের বেশির ভাগই এক থেকে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে কারাগারে ছিল। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে গত ১৫ আগস্ট দুপুরে মুক্তি পান পুরস্কার ঘোষিত ২৩ সন্ত্রাসীর অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন। আর ১৬ আগস্ট রাতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার-চার থেকে জামিনে মুক্তি পান অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল। কারামুক্তির পর এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০০ সালের ১২ জানুয়ারি গ্রেফতার হন তৎকালীন ছাত্রদলের নেতা পিচ্চি হেলাল। দীর্ঘ ২৪ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পাওয়া শীর্ষ এ সন্ত্রাসীর বড় ভাই ওয়াহিদুল হাসান দীপু। যিনি গত ১০ জানুয়ারি আকস্মিক হামলার শিকার দুই ভুক্তভোগীর এক জন। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ‘কিলার আব্বাস’ হিসেবে পরিচিত মিরপুরের আব্বাস আলী, তেজগাঁওয়ের শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসুও কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কয়েক জন শীর্ষ সন্ত্রাসী এতদিন দেশের বাইরে পলাতক ছিল। তারাও দেশে ফিরেছে। কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য তৎপরতা শুরু করেছে। তাদের মধ্যে পিচ্চি হেলাল ও ইমন অন্যতম। তাদের সংস্পর্শে আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে এসেছে। তারা অপরাধের পুরোনো সাম্রাজ্য ফিরে পেতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দেয়ার পাশাপাশি চাঁদা চেয়ে ব্যবসায়ীদের হুমকি দিচ্ছে। মোহাম্মদপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের তৎপরতা দৃশ্যমান। গত ২০ সেপ্টেম্বর রায়েরবাজারে সাদেক খান আড়তের সামনে জোড়া খুন হয়। ঐ দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় পিচ্চি হেলালের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এলাকার ‘দখল’ নিতে সন্ত্রাসীদের দুই পক্ষের বিরোধ থেকে জোড়া খুনের ঐ ঘটনা ঘটে। তবে ঐ ঘটনার পর পিচ্চি হেলালকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি।
তবে পরিবারের দাবি, জামিনে মুক্তি পাওয়ার ক’দিনের মধ্যে ইমন দেশের বাইরে চলে যান। তবে পুলিশ বলছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন দেশ ত্যাগ করেছেন কি না, ইমিগ্রেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা বের করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। গত ১৮ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ইমনের মা সুলতানা জাহান দাবি করেন, ইমন বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন, তাকে ষড়যন্ত্র করে মাল্টিপ্ল্যানের সামনের ঘটনায় ফাঁসানো হয়েছে। মায়ের দাবি, ছেলে ইমন আওয়ামী নেতা ও মন্ত্রীদের রোষানলে পড়ে একাধিক মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেলখানায় আটক ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইমন জামিনে মুক্তি পেয়ে ইমন বিদেশে চলে গেছেন। তিনি বলেন, মাল্টিপ্ল্যানের সামনে হামলায় আহত ওয়াহিদুল হাসান দিপু শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের আপন বড় ভাই। গত ৫ আগস্টের পর বসিলায় জোড়া খুনের ঘটনা হেলাল নিজের হাতে ঘটিয়েছেন বলে মামলার তদন্তসূত্রে আমরা জেনেছি। 
এলিফ্যান্ট রোডের ঘটনা নিয়ে সুলতানা জাহান জানান, মাল্টিপ্ল্যান মার্কেটের সভাপতি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মার্কেটের সভাপতি পদে বিজয়ী হন ওয়াহিদুল হাসান দিপু। মার্কেটটি নিজের দখলে রাখার জন্য হামলার ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন। 
এদিকে সম্পর্কে ‘আত্মীয়’ শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ও খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন জামিনে মুক্ত হলেও ধানমন্ডি, জিগাতলা ও হাজারীবাগ এলাকায় তাদের দেখা যায়নি বলে জানান স্থানীয়রা। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি তাদের পূর্ব পরিচিতরা জানান, ইমন ও টিটন জামিনে মুক্ত হয়েছেন বলে তারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন। কিন্তু এলাকায় তাদের দেখতে পাননি। আর টিটন জামিনে বেরিয়েই রায়েরবাজারের সুলতানগঞ্জে নিজ বাড়িতে একবার গিয়েছিলেন। এরপর এলাকায় আর তার দেখা মেলেনি। স্থানীয়রা জানান, সম্ভবত টিটন তার গ্রামের বাড়ি যশোরে চলে গেছেন। তিনি নিশ্চুপ রয়েছেন।
সুলতানগঞ্জের স্থানীয় কয়েকজন দোকানি বলেন, ৩৫ থেকে ৪০ বছর আগে ইমন ও টিটন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন। এখন তাদের অনেক বয়স হয়েছে। এলাকার উঠতি বয়সের ছেলেরা তাদের চেনে না। জেলখানায় থাকা অবস্থায় ইমনের নির্দেশে যারা এলাকায় এক সময় ত্রাস সৃষ্টি করতেন তাদেরও বয়স হয়েছে। তাদেরও আর দেখা যায় না। আর মোহাম্মদপুর এলাকায় গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারাগার থেকে বেরোনোর পরপরই পিচ্চি হেলাল তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে শোডাউন দিয়েছিলেন। তার ঘনিষ্ঠ সুমন ও স্বপন মোহাম্মদপুর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। মোহাম্মদপুরের জোড়া খুন এবং এলিফ্যান্ট রোডে দুই ব্যবসায়ীর কোপানোর ঘটনায় পিচ্চি হেলালের নাম এলে সুমন ও স্বপনের উৎপাত অনেকটা কমে যায়। এখন মোহাম্মদপুর এলাকায় তাদের দেখা নেই বললেই চলে। পিচ্চি হেলালকেও আর দেখা যায় না। পুলিশ জানায়, তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
সাম্প্রতিক ঢাকার ব্যবসাক্ষেত্রে আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। নির্মাণ খাতের ঠিকাদারদের হুমকির মুখে বেতন দিতে বা কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হচ্ছে, অন্যদিকে অন্যান্য খাতের ব্যবসায়ীদের অপহরণ বা হামলার শিকার হতে হচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তা এবং ভুক্তভোগীরা বলছেন, গত বছর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কিছু শীর্ষ অপরাধীর মুক্তি উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
চাঁদাবাজির ঘটনায় ২০০১ সালে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত ২৩ জনের মধ্যে সুব্রতের মতো অপরাধীদের নামও উঠে এসেছে। অন্যদের মধ্যে রয়েছে আব্বাস আলী ওরফে কিলার আব্বাস, সানজিদুল হাসান ইমন এবং ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের নাম। সুব্রতর গ্যাং মগবাজার, মালিবাগ, ইস্কাটনসহ আশেপাশের এলাকায় সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। আব্বাস মিরপুর, কাফরুল এবং ভাষানটেক এলাকায়, ধানমন্ডি, ইমন নিউমার্কেট এবং মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় এবং মোহাম্মদপুর এবং আগারগাঁওয়ে হেলাল গ্যাং সক্রিয় রয়েছে।
আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী আব্বাস গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা ভাষানটেকের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটি ভবন ভাঙার কাজে বাধা এবং ঠিকাদারের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ১৫ লাখ টাকার কাজ পাওয়া ঠিকাদারের একজন সহযোগী বলেন, রড ও ইটের মতো নির্মাণ সামগ্রী বিক্রি করে আমরা খুব একটা লাভ করতে পারি না। আমরা তাদের দেড় লাখ টাকা দেব বলেছিলাম, কিন্তু ওই গ্যাং আমাদের কাজ করতে দেবে না বলে জানায়। মেরে ফেলার হুমকি দেয়ায় আমরা অভিযোগও করতে পারছি না।
পুলিশ সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা সক্রিয় থাকলেও কিছু প্রতারক চক্র অপরাধীদের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজির জন্য মানুষকে হুমকি দিচ্ছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জেল বা দেশের বাইরে থেকে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ধরে রাখতে অতীতেও এ ধরনের প্রতারক চক্র সক্রিয় ছিল বলে দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা প্রধান রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, জামিনে কারাগার থেকে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কে কোথায়, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্তদের গ্রেফতারে নিয়মিত অভিযান চলছে। তিনি বলেন, কারাগার থেকে জামিনে বেরোনোর পর পিচ্চি হেলাল-ইমনসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নতুন করে অপকর্মে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। কারো কারো বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ চাঁদাবাজির মামলাও হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পিচ্চি হেলাল বা ইমনসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রুপে যারাই থাকুক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স