ঢাকা , শনিবার, ৩১ মে ২০২৫ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
আমতলীতে শহিদ রাষ্টপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকীতে সেচ্ছায় রক্তদান ও আলেচনা সভা মগবাজারে কুপিয়ে ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার ৩ ২ জুন বাজেট ঘোষণা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহত বাংলাদেশের জন্য জাপান গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার : প্রেস সচিব বাড়ছে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা সরকারের আশ্বাসে প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত ডিসেম্বরের আগেই জাতীয় নির্বাচন দেয়া সম্ভব -তারেক রহমান দেশে গণতন্ত্রের নিরাপদ যাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে : খালেদা জিয়া নির্বাচন ইস্যুতে এনসিপির সমালোচনায় ববি হাজ্জাজ আনু মুহাম্মদের স্ট্যাটাসে আসিফ নজরুলের বিস্ময় প্রকাশ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ উত্তাল নগর ভবনে পা রাখলেন ইশরাক আরও উজ্জীবিত আন্দোলনকারীরা সচিবালয়ে কর্মচারীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা প্রশাসনে ১০ মাসেও ফেরেনি শৃঙ্খলা ভারী বৃষ্টিতে বন্যার শঙ্কা শেখ হাসিনার আমলে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে একসঙ্গে কাজ করবে সরকার, ইসি ও জাতিসংঘ মিডিয়ার হেডলাইন দেখে মন্তব্য করা যায় না-ইশরাক ইস্যুতে সিইসি নানামুখী চাপে দেশের অর্থনীতি
চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা

নতুন বাংলাদেশের ভেতরে গণ্ডগোলকারীদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে

  • আপলোড সময় : ১১-০২-২০২৫ ০৪:১২:৪৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১১-০২-২০২৫ ০৪:১২:৪৩ অপরাহ্ন
নতুন বাংলাদেশের ভেতরে গণ্ডগোলকারীদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে, সারা দেশের জন্য এটা খুব জরুরি। কতো ঘটনা ঘটে গেলো, সামনে আরও বহু ঘটনা ঘটবে। যাদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তারা সহজে মেনে নেবে না। তারা না মানলে আমরা মানাবো। নতুন বাংলাদেশের ভেতরে যারা গণ্ডগোলের সৃষ্টি করতে পারে তাদেরও নিশ্চিহ্ন করবো আমরা। নিজেদের দলে নিয়ে আসবো, না হলে আইনের কাছে সোপর্দ করে দেবো। এটা হলে আমরা তাড়াতাড়ি নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারবো। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক চেক হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশটাকে আজ নতুন বাংলাদেশ বলতে পারছি, তাদের জন্য দেশ কী করতে পারে, তাতে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের জনগণের যে জবাবদিহি, আরেকটা পরিবর্তন, সেটা কোনও নিক্তি দিয়ে মাপা যায় না। আপনার ছেলে, সন্তান, ভাই ইতিহাসের স্রষ্টা। ইতিহাসের স্রষ্টাকে সাধারণ মাপকাঠি দিয়ে টাকা-পয়সা দিয়ে মাপা যায় না। তিনি বলেন, যে বাংলাদেশকে আমরা নতুন বাংলাদেশ হিসেবে তৈরি করলাম, এটা যাতে সেভাবে রাখতে পারি। এটাকে হেলায় ফেলে দিলে হবে না। সে ক্ষেত্রে আমাদের সার্বক্ষণিক সাবধান থাকতে হবে, নজর রাখতে হবে। সেই দায়িত্ব আমাদের সবাইকে মিলে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, যাদের সন্তান হারালো তাদের শোকের পরিবর্তে কী আসবে সেটা আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সরকারের পক্ষ থেকে। এখানে দুটো বিষয় একটি প্রাতিষ্ঠানিক, আরেকটি ব্যাক্তিগতভাবে। ব্যক্তির সঙ্গে আমরা কীভাবে সংযোগ স্থাপন করে দিয়ে যাবো সেটা করা। আজ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আপনারা সরকারের অংশ হয়ে গেলেন। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কারণে মুক্তিযোদ্ধারা সব এক হয়ে গেছে, কেউ আর মুছতে পারবে না। আপনারা আজ এই মন্ত্রণালয়ের অংশ হয়ে গেলেন। জুলাই স্মৃতি পরিদফতর সৃষ্টি হয়েছে, আপনারা সরকারের কাঠামোর ভেতর ঢুকে গেছেন। যত কথা বলার, দাবি করার, সরকারের ভেতরে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এটা করে দেয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখ করেন, সরকারিভাবে যা কিছুই করা হোক এটা কেউ মুছতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধারা অত ভাগ্যবান ছিলেন না। বহু বছর লেগেছে তাদের জন্য কিছু করতে, এটা দেয় তো ওইটা দেয় না, আস্তে আস্তে দিতে দিতে বহু বছর চলে গেছে। আমরা খুশি যে প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন করতে পেরেছি। সবকিছু না করতে পারলেও একটা জায়গা তো পাওয়া গেলো। তিনি বলেন, একটা বিষয় ক্ষোভের মধ্যে এসে যায়। আমরা এবং আপনারা যদি দুইভাবে কথা বলি, এটা ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে না। আমরা এক, আপনাদের ত্যাগের কারণে আমরা এক হয়ে গেছি। যদি এই অভ্যুত্থান না হতো আপনার-আমার সাক্ষাৎ হওয়ার কোনও কারণ ছিল না। কীভাবে আপনাদের স্বীকৃতি দেয়া দরকার সেই হিসেবে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আজকে ‘‘আমরা’’ আর ‘‘আপনারা’’ হয়ে গেলে এই নতুন বাংলাদেশ হবে না, বিভেদ হয়ে গেলো। এই বিভাজন ভালো না। তিনি বলেন, স্বৈরাচার কী বিতাড়িত করা গেছে? তাদের ভয়ে থাকার জন্য কি এই বাংলাদেশ গড়লাম আমরা? তাদের জয় করতে হবে, সোজা রাস্তায় আনতে হবে। এই দেশে চলতে হলে এভাবে করতে হবে, মারপিট করে হবে না। সে আমাকে পিটাবে, আমি তাকে পেটাবো এই পিটাপিটি আর শেষ হবে না। তাদের বোঝাতে হবে তোমাদের রাস্তা ভুল। তোমরা মাফ চাও, বিচারের কাজ তো চলছেই। অনেকেই তাৎক্ষণিক বিচার চায়, এখানে মুশকিল হলো তাৎক্ষণিক এই জিনিস হয় না। তাৎক্ষণিক হতে হলে অবিচার হয়ে যায়। মূল বিষয় হল সুবিচার হতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিচারের কাজ চলতে থাকুক, যারা অপরাধী পুলিশের কাছে দিয়ে দাও। যথেষ্ট সাক্ষী-প্রমাণসহ তুলে দিতে হবে, অবিচার যেন না হয়। আমরা অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই সংগ্রাম হয়েছে। আমরা যদি নিজেরা অবিচারে নেমে যাই তাহলে তফাৎ থাকলো কী। আমরা অবিচারে নামবো না। যারা অপরাধী তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করবো। যারা অপরাধী নয় পুলিশের হাতে দেয়ার মতো, তাদের মানুষ করবো। আমরা একযোগে যত তাড়াতাড়ি পারি এটাকে একটা সুন্দর দেশ বানাবো। যারা অপরাধী তাদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। যারা অপরাধী নয় তাদের সৎপথে নিয়ে আসতে হবে এ দেশে থাকার জন্য, একতার জন্য। আমরা যারা এখানে বসে আছি তারা যেন আলাদা না হয়ে যাই। দুঃখের কথা বলবো, কিন্তু বিবাদ সৃষ্টি যেন না হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদরা ‘জুলাই শহীদ’ নামে অভিহিত হবেন এবং আহতরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে অভিহিত হবেন ও পরিচয়পত্র পাবেন। প্রতিটি শহীদ পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পাবে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাইয়ে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেয়া হবে। এর পাশাপাশি প্রতিটি শহীদ পরিবারকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা প্রদান করা হবে। শহীদ পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন। এ ছাড়া, জুলাই যোদ্ধারা দুটি মেডিকেল ক্যাটাগরি অনুযায়ী সুবিধাদি পাবেন। গুরুতর আহতদের ‘ক্যাটাগরি এ’ অনুযায়ী, এককালীন ৫ লাখ টাকা দেয়া হবে এর মধ্যে ২০২৪-১৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা দেয়া হবে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ৩ লাখ টাকা দেয়া হবে। এর পাশাপাশি গুরুতর আহত প্রত্যেক জুলাই যোদ্ধা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন ও মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাবেন। তারা কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সুবিধা পাবেন। ‘ক্যাটাগরি বি’ অনুযায়ী, জুলাই যোদ্ধাদের এককালীন ৩ লাখ টাকা দেয়া হবে, এর মধ্যে ২০২৪-১৫ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ১ লাখ টাকা দেয়া হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে নগদ (ব্যাংক চেকের মাধ্যমে) ২ লাখ টাকা দেয়া হবে। এর পাশাপাশি, মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা দেয়া হবে, কর্মসহায়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি বা আধাসরকারি কর্মসংস্থান প্রাপ্য হবেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই যোদ্ধাদের পরিচয়পত্রও দেয়া হবে। সেই পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে সরকারের বিভিন্ন সুবিধা পাবেন তারা। এখন পর্যন্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন শহীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। এছাড়া, আহতদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগির তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স