ঢাকা , বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ , ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
রোহিঙ্গাদের সাথে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব জনগণের সমস্যা সমাধানে রাজনীতিবিদদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে দেশে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে-তথ্য উপদেষ্টা সর্বনিম্ন ফিতরা ১১০ সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০৫ টাকা চলতি বছরের মধ্যে পাচারকৃত অর্থের কিছু অংশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব-অর্থ উপদেষ্টা পদযাত্রায় সংঘর্ষে শিক্ষার্থী-পুলিশ আহত ধর্ষকের শাস্তি জনসম্মুখে করাসহ ৬ দাবি ঈদের পর এনসিপির চূড়ান্ত রাজনৈতিক এজেন্ডা শ্রমিকদের ওপর হামলার বিচার ও বেতনের দাবি ঝিমিয়ে পড়েছে বিদেশী বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুত অর্থছাড় প্রক্রিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোচিং ক্লাস-প্রাইভেট পড়ানো যাবে না ন্যায়বিচার-মানবাধিকার নিশ্চিতের আহ্বান চার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রবাসীদের জন্য ‘প্রক্সি ভোট’ নিয়ে ভাবছে ইসি শেখ পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ট্রেনের যাত্রী জিম্মি উদ্ধারে গিয়ে ২০ সেনা নিহত ট্রেনে জঙ্গি হামলা জিম্মি ৫শ’ যাত্রী পল্লবী থানায় ঢুকে হামলা ওসিসহ আহত ৩ রাখাল রাহার ৪শ’ কোটি টাকা বাণিজ্যের তথ্য ভুয়া ব্যবসায়ী হত্যায় ৪ জনের যাবজ্জীবন ডিএফপি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নতুন কমিটি

ত্রয়োদশ ভোটের চাপে অন্তর্বর্তী সরকার

  • আপলোড সময় : ১০-০২-২০২৫ ০৩:৪৬:২৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১০-০২-২০২৫ ০৩:৪৬:২৯ অপরাহ্ন
ত্রয়োদশ ভোটের চাপে অন্তর্বর্তী সরকার
* অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাসে আন্দোলন হয়েছে ১৩৬টি * ক্ষমতায় থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আসিফ নজরুলের * দ্রুত নির্বাচন না হলে আস্থার সংকট তৈরি হবে * চিতায় যাওয়ার আগে উৎসবমুখর নির্বাচন দেখে যেতে চান গয়েশ্বর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যান। ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। তাদের মেয়াদ ইতিমধ্যে ৬ মাস পেরিয়েছে। তবে গত ৬ মাসে নানা সংকট আর জটিলতা সামলে সংস্কারে উদ্যোগী ও ঐক্যের সন্ধানে থাকা কাজ করছে সরকার। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে, ততই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চাপ বাড়ছে। বিএনপিসহ বাম দলগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম ও ইসলামী দলগুলো দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন। সর্বশেষ গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, চিতায় যাওয়ার আগে উৎসবমুখর নির্বাচন দেখে যেতে চাই। রাজনীতিক দলগুলোর দাবির পেক্ষিতে ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, অযথা সময়ক্ষেপণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতায় থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। পরেরদিন ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করা হবে। দায়িত্ব পালনে তারা নিরপেক্ষ থাকবেন, কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যাবেন না বলে জানান তিনি। তবে নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ চান না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সিইসি। সংশ্লিষ্ট্ররা বলছেন, বাংলাদেশে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় দ্রুত নির্বাচন দেয়ার জন্য চাপ বাড়তে পারে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। এখন সরকার নির্বাচনকে এক নম্বর অগ্রাধিকার দিয়ে এগোবে, সেটাই চায় দেশটির অন্যতম প্রধান দল বিএনপি। এর মিত্রদলগুলোরও একই অবস্থান বলে মনে হয়েছে। তবে ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের স্থাপনায় হামলা ভাঙচুর চালানো হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে দেশে একটা ‘অরাজকতা ও নৈরাজ্যকর’ পরিস্থিতি চলেছে। ফলে এখন ভিন্ন এক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। তবে শনিবার সরকারের ৬ মাস পূর্ণ হওয়ায় উল্লেখিত পরিস্থিতি অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাসে আন্দোলন হয়েছে ১৩৬টি : ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। এরপর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিভিন্ন দাবিতে একের পর এক আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে। গত ৬ মাসে ১৩৬টি আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংগঠনটির ফেসুবক পেজ থেকে পোস্ট করা এ-সংক্রান্ত একটি পোস্টারে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাহসী ভূমিকার প্রতীকী আবক্ষ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। পোস্টারে লেখা রয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ৬ মাসে ১৩৬টি আন্দোলন মোকাবিলা করেছে। ক্ষমতায় থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আসিফ নজরুলের : আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, অযথা সময়ক্ষেপণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতায় থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। আর জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রক্রিয়া বেগবান করার জন্য রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এই সরকারের অযথা ক্ষমতায় থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। আমরা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য, রাষ্ট্র মেরামতের ফান্ডামেন্টাল শর্ত পূরণ করার জন্য, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সংস্কারগুলো জরুরি তা করার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা চলে যেতে চাই। এতে দ্বিধা দ্বন্দ্বের কোনও অবকাশ নেই। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচন চান, এটা তাদের অধিকার। দ্রুত বলতে কী, তা নির্দিষ্ট করে বলেনি কোনো দল। নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে আমাদের প্রেস সচিব বারবার জানিয়েছেন। এই বছরের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের জুনে নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমের কারণে আরও দু-তিন মাস এগিয়ে এপ্রিল হতে পারে অথবা মার্চে হতে পারে। সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটা কাঠামো তৈরি করেন, সংস্কার অবশ্যই লাগবে। কিন্তু সেই সংস্কারের পেছনে যে শক্তিটা লাগবে সেটা হচ্ছে যে, নির্বাচিত সংসদ, নির্বাচিত সরকার। এটা ছাড়া সংস্কারকে কখনো লেজিটেমেসি (বৈধতা) আমরা দিতে পারব না। এটা ফ্যাসিস্টরা পারবে, প্রথমদিকে সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেয়া জামায়াতও এখন নির্বাচন নিয়ে সরব। ‘অতিজরুরি’ সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে সরকারকে নির্বাচিত দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ত্রয়োদশ নির্বাচনে জনগণ যাকে ভালোবাসবে, যার ওপরে আস্থা রাখতে পারবে তাদের দেশের দায়িত্ব দিলে তারা দেশের মানুষকে সম্মান করবে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, সিপিবি, নাগরিক ঐক্য, এনডিএম ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ সব দলই দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছে। দ্রুত নির্বাচন না হলে আস্থার সংকট তৈরি হবে : বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের অনেকে বলেছেন, দুদিনের ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, ক্ষুণ্ন করেছে ভাবমূর্তি। নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রতি আস্থার অভাব থেকে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। এখনকার প্রেক্ষাপট সেই আস্থার অভাব ও দূরত্ব আরও বাড়াবে। সরকার অবশ্য ঘটনার ব্যাপারে তিন দফায় বিবৃতি দিয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছে। সেই বক্তব্য দেয়া হয়েছে ভাঙচুর অব্যাহত থাকার দ্বিতীয় দিনে। তাতে সরকার কঠোরভাবে দমন করার কথা বলেছে। সবশেষ বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের নেতাদের আর কারো সম্পত্তিতে আর কোনো হামলা না করার আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারের এ আহ্বানকে মানুষ কতটুকু আস্থায় নেবে, সে নিশ্চয়তা দেয়া কঠিন বলে কোনো কোনো রাজনীতিক মনে করেন। যদিও হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার পেছনে ভারতে বসে গত ৫ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে শেখ হাসিনার বক্তব্য দেয়ার বিষয়কে উস্কানি হিসেবে বর্ণনা করছে বিএনপিসহ সব দল এবং অন্তর্বর্তী সরকার। এই যুক্তি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটিও দিচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি একটা ‘অরাজক বা নৈরাজ্যকর অবস্থায় চলে যাওয়ায়’ সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দলের নেতারা বলছেন, ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনার বক্তব্য দেয়ার ঘটনায় একটা প্রতিক্রিয়া হোক, সেটা সরকারও চেয়েছিল। কারণ বুলডোজার বা এক্সক্যাভেটর দিয়ে সারাদেশে দুদিন ধরে ভাঙচুরের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো ভূমিকা রাখেনি। ফলে সরকারের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ছিল না বলে তাদের মনে হয়েছে। গত ছয় মাসের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের দূর্বলতার বিষয় আলোচনায় এসেছে। এমনকি জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের ছাত্র নেতৃত্বের কারও কারও কর্মকাণ্ড নিয়েও বিভিন্ন সময় প্রশ্ন উঠেছে। ভাঙচুরের এই ঘটনায় তাদের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা আছে রাজনীতিকদের মধ্যে। বিএনপির মিত্রদের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ঘটনাগুলো ঘটার সময় সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, বরং সরকারের বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয়েছে। চিতায় যাওয়ার আগে উৎসবমুখর নির্বাচন দেখে যেতে চান গয়েশ্বর : চিতায় যাওয়ার আগে উৎসবমুখর নির্বাচন দেখে যেতে চান বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, একটি উৎসব মুখর নির্বাচন না দেখা পর্যন্ত ঈশ্বর যেন আমাকে চিতায় না নেন। আমরা যেন সঠিক সময়ে সঠিক নির্বাচন, ‘জনগণের ভোট জনগণ দেবে যাকে খুশি তাকে দেবে’ এটা প্রতিষ্ঠা করতে পারি। রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার, অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে প্রণীত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে ১২ দলীয় জোট। বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য নির্বাচন করা। সে ব্যাপারেই তারা সরকারের ওপর তাগিদ বাড়াবেন। আজ ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে দুদিনের ভাঙচুরের ঘটনার ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ ও অবস্থান তুলে ধরবে। দলটি এমনটা দেখাতে চায় না যে, তারা সরকারের মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে। সেখানে একটা স্থিতিশীল অবস্থা রেখে নির্বাচন করানো যাতে সম্ভব হয়, সেই কৌশল নিয়েছে বিএনপি। দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোও একই অবস্থান নিয়ে এগোচ্ছে বলে মনে হয়েছে। ফলে বিএনপি ও এর মিত্রদের পক্ষ থেকে সরকারের ওপর নির্বাচনের চাপ বাড়বে। এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার হিসেবে তারা দুর্বল ও অকার্যকর, এরকম ধারণা বাড়তে থাকলে তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। এখন সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখনই দ্রুত নির্বাচন দিয়ে সরকারের সওে যাওয়া উচিত। এ বিষয়ে কমিউনিস্ট পার্টি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ভাঙচুরের ঘটনায় সরকারের ভূমিকা যেহেতু প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, সেকারণে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো কঠিন। এখন দ্রুত নির্বাচন দেয়াই সরকারের জন্য নিরাপদ হবে। রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ চান না সিইসি : যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। দায়িত্ব পালনে তারা নিরপেক্ষ থাকবেন, কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যাবেন না বলে জানান তিনি। তবে নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ চান না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সিইসি। রোববার দুপুরে নির্বাচন কমিশন ভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ইসি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) বার্ষিক সাধারণ সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। নির্বাচন কমিশন কোনো রাজনীতিতে ঢুকতে চায় না জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে দাঁড়াতে চাই না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকতে চাই। তিনি জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ওপরও রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে। নয়ত আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। তিনি আরও বলেন, সব জায়গায় মতদ্বৈধতা থাকবে। ভিন্নমত মানেই বিপক্ষে না। একই বিষয়ে ভিন্নমত থাকবেই। এটা সহজ হিসাব। এই জিনিসটা অনেকে মানতে পারে না। তবে মানার বিষয়ে আমার অভ্যাস আছে। আমাকে নিয়ে সমালোচনা করলে ধরে নেব কোনো ঘাটতি বা সমস্যা রয়েছে, তখন নিজেকে শুধরে নেব। প্রসঙ্গত, গত ৬ মাসে ১৩৬টি আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছে দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেয়া এই সরকারকে। কেননা আইনশৃঙ্খলার উন্নতি না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর পোশাক বদলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনে অস্থিরতা, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সংগঠন, এমনকি ‘বঞ্চিত’ পেশাজীবী-শ্রমজীবীদের বিক্ষোভে সরকারের জনসমর্থন নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। গত ৬ মাসে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সবচেয়ে বেশি উদ্যোগ নিলেও কোনো সফলতা আসেনি। কোনোভাবেই বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি সরকার। সরকার ভঙ্গুর অর্থনীতির দায়িত্ব নিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও এখনো কাক্সিক্ষত স্থিতিশীলতা আসেনি। বরং বহুমাত্রিক সংকট, অবকাঠামো ঘাটতি, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও নীতিনির্ধারণের সীমাবদ্ধতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ে গতি ফিরলেও বন্ধ হচ্ছে কারখানা। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কবে হবে তা জানতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষও, যারা বাজারদরের ঊর্ধ্বগতি আর বেকারত্বের চক্করে পড়ে নাজেহাল। কিন্তু সরকার হাঁটছে ‘সংস্কার’ কাফেলার পথে। সব সংস্কার কমিশন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেবে ১৫ ফেব্রুয়ারি। এরপর কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়নে পথ নকশা তৈরি করবে সরকার। এ জন্য নির্বাচনের দিন-তারিখ বলতে পারছে না অন্তর্বর্তী সরকার। জানা যায়, ছাত্র-জনতার ১ মাস ৪ দিনের আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন হয়। তিন দিন পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের মতো ‘কর্তৃত্ববাদী’ সরকারের ক্ষমতায় আসার পথ বন্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ার পর এর পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন বা ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার ও নির্বাচন পাশাপাশি চলার কথা বললেও সংস্কারের জন্য নির্বাচন যাতে ‘বিলম্বিত’ না হয়, সে দিকে রাজনৈতিক দলগুলো নজর দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় নির্বাচনের জন্য দুটি সম্ভাব্য সময়সীমা জানিয়েছেন। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আরেক দফা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের কথাও তিনি বলেছেন। রাজনৈতিক দলগুলো বড় ধরনের সংস্কার না চাইলে চলতি বছরের শেষের দিকে, আর সংস্কার শেষ করতে দিলে আগামী বছরের প্রথমার্ধে নির্বাচন দেয়ার কথা বলা হচ্ছে সরকারের তরফে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনার মধ্যে গত ৮ জানুয়ারি স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করার প্রস্তুতির কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। পরের দিন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে অগ্রসর হবে সরকার। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে না পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে, তা নিয়ে কিছু বলেননি। রাজনৈতিক দলগুলোর মতে, নির্বাচনে দেরি হলে এই সরকার বিতর্কিত হবে। আর দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি মনে করে, সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে দেড় দশক কর্তৃত্ব করা বিগত সরকারের ‘দোসরদের ষড়যন্ত্র’। নির্বাচনে যত দেরি হবে, এমন সমস্যা তত বাড়বে। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারে কমিশন করলেও শিক্ষা নিয়ে কমিশন হয়নি। তিনি বলেন, গত ৬ মাসে শিক্ষা নিয়ে বলতে গেলে কিছুই হয়নি। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে একটা বিরাট শূন্যতা বিরাজ করছে। নির্বাচনমুখী হলে সঙ্কট কি কমবে : সবধরনের আদর্শের রাজনৈতিক দল দাবি করছে, তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে গেছে। এরপরও গত ছয় মাসে দ্রব্যমূল্য, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে দেশে কোনো পরিস্থিতি হলে তা নিয়ন্ত্রণ করায় তাদের ক্ষমতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। সর্বশেষ দুই দিনের ভাঙচুরের ঘটনা আস্থার সঙ্কট আরও বাড়িয়েছে। সেকারণে সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে দেশকে নির্বাচনমুখী করলে অন্য কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ কমে যাবে। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এ মাসেই সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই সংলাপে দ্রুত নির্বাচনের চাপ আসবে, সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, ভাঙচুরের ঘটনার দায় হাসিনা এবং অন্তর্বর্তী সরকারসহ সব পক্ষের ওপর বর্তায়। কিন্তু এখন দেশের ভাবমূর্তি, স্থিতিশীলতার দিকে সরকার ও সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর নজর দেয়া উচিত। কারণ স্থিতিশীলতা না থাকলে গণতন্ত্র, নির্বাচনসহ সব বিষয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স