অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণভবনে অর্ধেকের কম চিকিৎসক ও জনবল নিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। দীর্ঘদিন যাবত সংকটে রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আয়া, ৩য়, ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী ও ওষুধের।
রোগ নির্নয়ের জন্য নেই কোন অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। ঝুকিপূর্ণ ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে রড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। জরাজীর্ন এই ভবনে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে রোগী, ডাক্তার, নার্সসহ ভুক্তভোগীরা। এতে করে ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। নতুন ভবনের বিষয়ে চাহিদা পত্র দেয়া হয়েছে। জানা যায়, উপজেলার নওয়াপাড়া শিল্প ও বাণিজ্য শহরের অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে প্রতিনিয়ত রোগীরা আসে। অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতল ভবনটি ১৯৭০ সালে নির্মাণ করা হয়। এর প্রায় ৮ বছর পর ৩১ শয্যায় শুরু হয় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। পরবর্তীতে যা ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। প্রতিদিন অভয়নগর উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী ফুলতলা, মনিরামপুর, বসুন্দিয়া ও নড়াইলসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শতশত রোগী বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে। পঞ্চাশ শয্যা হাসপাতালটিতে প্রতিদিন শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। বেড সংখ্যা কম হওয়ায় ওয়ার্ড ও বারান্দার মেঝেতে ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। ২০ ফ্রেব্রুয়ারি-২০২৩ তারিখে সহকারী প্রকৌশলী সহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর কর্মকর্তার ভবনটি পরির্দশন করেন।
সে সময় থেকেই হাসপাতাল ভবনের ওয়ার্ড, করিডোর, বারান্দাসহ ছাদ ও বীমের ঢালাই কিছু আংশ ভেঙে পরেছে। বর্তমানে পুরো ভবনের ছাদের পলেস্তার খসে পড়ে রড় বেড়িয়ে পড়েছে। ইতোপূর্বে কয়েকবার সিলিং ফ্যান পড়ে রোগীরা জখম হয়েছে। বিভিন্ন সময় পলেস্তার খসে পড়ে রোগী ও সেবীকারা আহত হবার ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে গুরুত্বপূর্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে রয়েছে চিকিৎসক ও লোকবলের সংকট। হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সর্বমোট ৭৯ পদ শূন্য রয়েছে। ২৯ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে ১৬টি পদ শূন্য রয়েছে। বর্তমানে ১৩ জন ডাক্তার থাকলেও এর মধ্যে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অসুস্থতার কারণে ছুটিতে রয়েছেন। শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অনুপস্থিতে কোমলমতি শিশুরা সু-চিকিৎসা পাচ্ছে না। তাছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী, ও সার্জারির ডাক্তার না থাকায় সিজার ও অন্যান্য অপরেশন বন্ধ রয়েছে। ক্লিনিকগুলো এই সুযোগ নিয়ে অসহায় রোগীদের জিম্মিকরে ইচ্ছামত টাকা আদায় করে সিজার ও অপরেশন করছে।
এছাড়া জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, গাইনী, কার্ডিওলজীর পদ থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে পদগুলি শূন্য অবস্থায় রয়েছে। মঞ্জুরীকৃত ২য়, (নার্স) ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর পদ রয়েছে ১৮৮টি কিন্তু এর মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে ৭৯ টি পদ শূন্য রয়েছে। মঞ্জুরীকৃত নার্স (২য় শ্রেণী) ৩৮ জন কর্মরত আছেন। ডিজিটল এক্রো মেশিন না থাকায় রির্পোট ভালো পাওয়া যায়না। আধুনিক সরঞ্জামের অভাবে অর্থ অর্থপেডিক্রা রোগীদের সঠিক চিকিৎসা দিতে পারছেন না। ১টি মাত্র জেনারেটর থাকলেও জ্বালানী তেলের বরাদ্দ না থাকায় অধিকাংশ সময় জেনারেটরটি বন্ধ রাখতে হয়। জরুরী ভাবে রোগী বহনের জন্য একটি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও দীর্ঘ দিন ড্রাইভার না থাকায় অনেক সময় চলাচল বন্ধ থাকে। এ হাসপাতাল টিতে সরেজমিনে এসে রহিমা বেগম, বিলকিসসহ একাধিক রোগীদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, ডাক্তার কম থাকায় দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়ে থাকতে হয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় সু-চিকিৎসা পাচ্ছিনা। এ উপজেলার এই হাসপাতালটিতে যশোর-খুলনা মহাসড়ক বসুন্দিয়া-নড়াইল সড়ক সহ পার্শবর্তী বিভিন্ন সড়কের যানবাহনে দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসলেও সরঞ্জাম ও ওষুধের অভাবে উন্নতমানের চিকিৎসা নিতে পারে না। সরকার এ হাসপাতাল টিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নতি করলেও কোন বাড়তি সুবিধা না দেয়ায় রোগীরা চরম বিপাকে পড়ছে। হাসপাতালের সার্বিক বিষয় নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলিমুর রাজিব এর সাথে কথা বললে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, ডাক্তার কম হলেও রুগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন আপোস নেই। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, ডাক্তার ও লোকবলের অভাবে চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যহৃত হচ্ছে। এ বিষয় আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং ডিজি স্যারের সাথে কথা বলেছি। সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাক্তার ও জনোবল নিয়োগ পেয়ে যাবো। নতুন ভবনের জন্য চাহিদা পত্র দেয় হয়েছে। ইতোপূবে সহকারী প্রকৌশলী সহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর কর্মকর্তার ভবনটি পরির্দশন করেছেন। এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনটি সংস্কার করার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, প্রয়েজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম জনোবল থাকলেও আমাদের আত্মবিশ্বাস ও মনোবল দিয়ে রুগীদের সেবা দিচ্ছি।
 
                           
                           
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
                            
                       
     
                            
                         
  
                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                