ঢাকা , বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫ , ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
রোহিঙ্গাদের সাথে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব জনগণের সমস্যা সমাধানে রাজনীতিবিদদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে দেশে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে-তথ্য উপদেষ্টা সর্বনিম্ন ফিতরা ১১০ সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০৫ টাকা চলতি বছরের মধ্যে পাচারকৃত অর্থের কিছু অংশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব-অর্থ উপদেষ্টা পদযাত্রায় সংঘর্ষে শিক্ষার্থী-পুলিশ আহত ধর্ষকের শাস্তি জনসম্মুখে করাসহ ৬ দাবি ঈদের পর এনসিপির চূড়ান্ত রাজনৈতিক এজেন্ডা শ্রমিকদের ওপর হামলার বিচার ও বেতনের দাবি ঝিমিয়ে পড়েছে বিদেশী বাজেট সহায়তার প্রতিশ্রুত অর্থছাড় প্রক্রিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোচিং ক্লাস-প্রাইভেট পড়ানো যাবে না ন্যায়বিচার-মানবাধিকার নিশ্চিতের আহ্বান চার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রবাসীদের জন্য ‘প্রক্সি ভোট’ নিয়ে ভাবছে ইসি শেখ পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ট্রেনের যাত্রী জিম্মি উদ্ধারে গিয়ে ২০ সেনা নিহত ট্রেনে জঙ্গি হামলা জিম্মি ৫শ’ যাত্রী পল্লবী থানায় ঢুকে হামলা ওসিসহ আহত ৩ রাখাল রাহার ৪শ’ কোটি টাকা বাণিজ্যের তথ্য ভুয়া ব্যবসায়ী হত্যায় ৪ জনের যাবজ্জীবন ডিএফপি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নতুন কমিটি

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

  • আপলোড সময় : ০৮-০২-২০২৫ ০৪:১২:৪৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৮-০২-২০২৫ ০৪:১২:৪৮ অপরাহ্ন
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার আমলের সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর শেষে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের খরমপট্টি এলাকার আবদুল হামিদের বাসভবনে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া খুলনায় শেখ হাসিনার পৈত্রিক জমির স্থাপনা, জামালপুরে ডা. মুরাদের বাড়ি, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের বাড়ি, পিরোজপুরে সাবেক মন্ত্রী, আ. লীগ নেতাদের বাড়ি ও কার্যালয়, বগুড়ায় আ. লীগ-জাসদ-জাপা কার্যালয়, ফেনীতে আ. লীগ কার্যালয় ও সাবেক তিন এমপির বাড়ি, গাইবান্ধায় আ’লীগ কার্যালয়, নোয়াখালীতে মঈন ইউ আহমেদের ভাইয়ের বাড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানোর প্রতিবেদন-
আবদুল হামিদের বাড়ি ভাঙচুর-আগুনের পর ভাতিজার রিসোর্টেও আগুন
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার আমলের সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর শেষে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের খরমপট্টি এলাকার আবদুল হামিদের বাসভবনে এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে আবদুল হামিদের ভাতিজা কিশোরগঞ্জের মিঠামইন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরীফ কামালের ‘হাওর রিসোর্ট’ও ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছেন এলাকাবাসী। গতকাল শুক্রবার দুপুরে মিঠামইনের সদর ইউনিয়নের কামালপুর এলাকায় অবস্থিত রিসোর্টটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিঠামইন বাজার থেকে এলাকাবাসী লাঠিসোঁটা নিয়ে ‘হাওর রিসোর্টে’ এসে ছুটে আসেন। পরে রিসোর্টের গেট ভেঙে প্রবেশ করে প্রথমে ভাঙচুর ও পরে অগ্নিসংযোগ করেন। মিঠামইন থানার ওসি মো. শফিউল আলম বলেন, রিসোর্টে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা শুনেছি। তবে এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এরআগে গত বৃহস্পতিবার রাতে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের খরমপট্টি এলাকার সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাসভবনে যান শতাধিক বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এসময় প্রথমে বাসভবনটিতে ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর সেখানে আগুন জ্বালিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। বাসভবনটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এদিকে রাতে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি এস্কেভেটর দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে কার্যালয়টিতে কয়েকদফা ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়াও শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।
খুলনায় শেখ হাসিনার পৈত্রিক জমির স্থাপনা ভাঙচুর
খুলনার দিঘলিয়ায় ভৈরব নদের তীরে নগরঘাট এলাকায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পৈত্রিক জমিতে থাকা স্থাপনা ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে এ ভাঙচুর হয়। ২০২৩ সালের ৬ জানুয়ারি বিকালে শেখ হাসিনা সর্বশেষ এ জমি পরিদর্শন করেছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জহিরুল তানভীর বলেন, ‘দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে স্থানীয় ছাত্র-জনতা দিঘলিয়ায় শেখ হাসিনার পৈত্রিক জমির স্থাপনা ভাঙচুর করেছে। দিঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি এইচ এম শাহিন বলেন, এ ধরনের ভাঙচুর হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কেউ তার কাছে কোনও অভিযোগ করেননি।
উল্লেখ্য, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় চার বিঘা জমি রয়েছে। পাকিস্তান আমলে কেনা সেই সম্পত্তিতে আছে গুদাম, যা এখন ‘শেখ হাসিনার গোডাউন’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। দিঘলিয়ায় এই চার বিঘা জমির কথা শেখ হাসিনা নিজেও জানতেন না। ২০০৭ সালে তার ব্যক্তিগত আইনজীবীর মাধ্যমে ওই জমির কথা জানতে পারেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় পাটের গুদাম ও এক কক্ষের আধাপাকা ঘর ছিল সেই জমিতে। এই পাট গুদাম দেখাশোনা করতেন তার ছোট ভাই শেখ আবু নাসের। জমি দেখাশোনার পাশাপাশি শেখ আবু নাসের এক সময় এখানেই ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা সেই সম্পত্তির মালিকানা পান। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে শেখ আবু বকর পরিবার নিয়ে প্রায় ২০ বছর সেই জমিতে বসবাস ও দেখাশোনার কাজ করছিলেন। বর্তমানে জাহিদুল ইসলাম এক ব্যক্তি এই সম্পত্তি দেখাশোনা করছেন। তিনি এক যুগের বেশি সময় আগে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের মাধ্যমে এই দায়িত্ব পান। পুরনো সেই গুদামঘর ভেঙে নতুন আধুনিক গুদাম ঘর এবং নদের তীরে রেস্ট-হাউজ করা হয়।
ডা. মুরাদের বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার আওনা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এ ঘটনা ঘটায়। প্রায় একই সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশার বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই সপরিবারে পলাতক মুরাদ হাসান। শেখ হাসিনার লাইভ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর মুরাদের বাড়িতেও একই ঘটনা ঘটে। এসময় মুরাদ হাসানের ব্যক্তিগত গাড়িও ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ডা. মুরাদ হাসান। এরপর ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তাকে প্রথমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং পরে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ অপসারণ, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের মেয়ে জায়মা রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন মুরাদ হাসান। চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে মুরাদ হাসানের একটি অশ্লীল ফোনালাপ ভাইরাল হয়। পরে সরকার তাকে মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিলে পালিয়ে কানাডার যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সবশেষ ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। অভিযোগ রয়েছে, দুই মেয়াদে এমপি ও মন্ত্রী থাকাকালীন সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দ লুটপাটসহ নিয়োগ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মুরাদ হাসান। অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য এলাকায় গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব ‘মুকুল বাহিনী’। তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষসহ নিজ দলের মধ্যেও ছিল চরম ক্ষোভ। সরিষাবাড়ী থানার ওসি মো. চাঁদ মিয়া জানান, মুরাদ হাসানের বাড়ি ভাঙচুর সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ তিনি পাননি।
রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিলো বিক্ষুব্ধরা
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র এ এ ইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বাসভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করে বিক্ষুব্ধ জনতা। খায়রুজ্জামান লিটনের তিনতলা বাড়িটি রাজশাহী নগরের উপশহরে। ক্ষুব্ধ জনতা জানায়, দুর্নীতির টাকায় গড়া বাড়িটি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। বাড়িটি ভেঙে ফেলার সময় সেখানে উৎসুক মানুষকেও ভিড় করতে দেখা গেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর পরিবার নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান খায়রুজ্জামান লিটন। পরিবারটি এখন ভারতে রয়েছে। রাজশাহীর বাড়িতে কেউই ছিলেন না। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিনই এ বাড়িতে হামলা হয়। বাড়ির সবকিছুই লুট হয় সেদিন। পরের দিনও বাড়িটির দরজা-জানালা খুলে নিয়ে যেতে দেখা যায় লোকজনদের। এরপর থেকে ভূতের বাড়ির মতো দালানটি দাঁড়িয়ে ছিল।
পিরোজপুরে সাবেক মন্ত্রী, আ. লীগ নেতাদের বাড়ি ও কার্যালয়ে আগুন
পিরোজপুরের নাজিরপুরে সাবেক মন্ত্রী ব্যারিষ্টার শ.ম রেজাউল করিমসহ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। একইসঙ্গে তারা নাজিরপুর শহীদ মিনারের সামনের আওয়ামী লীগের কার্যলয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার ভোর ৪টা পর্যন্ত হামলার এসব ঘটনা ঘটে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, ক্ষমতাচুত্য শেখ হাসিনার ভাষণকে কেন্দ্র গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা সদরের হাসপাতাল সংলগ্ন স্ট্যান্ডে একত্রিত হন বিক্ষুব্দ জনতা। তারা শ.ম রেজাউল করিমের উপজেলা সদরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। পরে তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোশারেফ হোসেন খানের বাড়ি, মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুরে আলম সিদ্দিকী শাহীনের উপজেলা সদরের বাজারের ভেতরের বাড়ি ও উপজেলার কালিবাড়ির বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চলান। বিক্ষুব্দ জনতা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল কন্তি বিশ্বাসের কালিবাড়ির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মোস্তাফিজুর রহমান রঞ্জু, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমীন শেখের দোকান ও বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালায়। এ ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
বগুড়ায় আ. লীগ-জাসদ-জাপা কার্যালয় ভাঙচুর
বগুড়া শহরের সাতমাথা, টেম্পল রোড ও কবি নজরুল ইসলাম সড়কে আওয়ামী লীগ, জাসদ (ইনু) ও জাতীয় পার্টির (জাপা) জেলা এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় ভাঙচুর ও আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস, সাবেক এমপি সাহাদারা মান্নানের বাবার বাড়ি এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বাড়িতেও হামলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত এসব হামলা চলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিপুলসংখ্যক তরুণ শহরের আদালতপাড়ায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১২তলা ভবনের নিচতলায় শেখ হাসিনার নামফলক হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলেন। রাত ৮টার দিকে স্টেশন রোড, নবাববাড়ি সড়ক দিয়ে দুই শতাধিক ছাত্র-জনতা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে শহরের সাতমাথা সংলগ্ন টেম্পল সড়কে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে আসে। তারা ভাঙচুর করে ওই কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর তারা আওয়ামী লীগ অফিস সংলগ্ন জেলা জাসদ ও শ্রমিক জোট কার্যালয় ভাঙচুর করে। পরে তারা অফিসের ভেতর থেকে আসবাবপত্র বাইরে বের করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর শহরের কবি নজরুল ইসলাম সড়কে জেলা জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আসবাবপত্র বাইরে এনে আগুন দেয়। হামলাকারীরা সাতমাথায় অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এতে পুরো সাতমাথা এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। আশপাশের দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। লোকজন ও যানবাহন ভয়ে ছুটোছুটি করে। এসব হামলা চলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও সদস্যকে দেখা যায়নি। এ হামলার ব্যাপারে পুলিশ, আওয়ামী লীগ, জাসদ ও জাতীয় পার্টির কোনও নেতা বক্তব্য দিতে রাজি হননি। ভাঙচুরে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। বগুড়ার কৃতি সন্তান পিনাকী ভট্টাচার্য্য আওয়ামী লীগের সব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশে এসব করা হচ্ছে। ঢাকার ৩২ নম্বর দিয়ে শুরু হয়েছে। আমার সোনার বাংলায় খুনি হাসিনার ঠাঁই নেই। তাদের সব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। এদিকে, হামলাকারীরা সন্ধ্যার দিকে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আসবাবপত্রে আগুন দেয়। এরপর তারা বালুয়া ইউনিয়নের পাতিলাকুড়া গ্রামে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং বগুড়া-১ আসনের সাবেক এমপি সাহাদারা মান্নানের বাবা শাহাদত জামানের বাড়িতে হামলা চালায়। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সুমন রঞ্জন সরকার জানান, তিনি এমন কোনও খবর পাননি। এরপর থেকে তারা ফোন রিসিভ করেননি।
ফেনীতে আ. লীগ কার্যালয় ও সাবেক তিন এমপির বাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
ফেনীতে আওয়ামী লীগের সাবেক তিন সংসদ সদস্যের (এমপি) বাড়ি এবং জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গত বৃহস্পতিবার রাতে পৃথক পৃথক স্থানে এই ঘটনা ঘটে। বিমানবন্দর সড়কে অবস্থিত ফেনী-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের পরিত্যক্ত বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে শহরের স্টেশন রোডে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়েও অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একই রাতে ফেনী-৩ আসনের সাবেক এমপি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর সোনাগাজী সুলাখালী গ্রামের বাড়িতেও আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া সোনাগাজীর সোনাপুর গ্রামে ফেনী-২ আসনের সাবেক এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর নানার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, রাতে শহরের জিরো পয়েন্ট ট্রাঙ্ক রোড থেকে লাঠি হাতে শতাধিক ছাত্র-জনতা মিছিল করে পুরাতন বিমানবন্দর সড়কে অবস্থিত আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর বাড়ির সীমানাপ্রাচীর এবং দেয়াল ভাঙচুর করেন। পরে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছেন। ফেনী মডেল থানার ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, শহরে একটি বাড়ি ও একটি কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো. বায়েজিদ আকন বলেন, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে আগুনের খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে নিজাম হাজারীর নানার বাড়িতে আগুন দেওয়ার কোনও খবর পুলিশ জানে না।
গাইবান্ধায় ভেঙে ফেলা হয়েছে আ’লীগ কার্যালয়
গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙচুর করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, বিভিন্ন ভবনে থাকা নামফলক ও জেলা যুবলীগ নেতার বাসা। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেশ কিছু শিক্ষার্থী ও জনতা জড়ো হয়ে শহরের ১নং রেলগেট এলাকার দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর শুরু করেন। এরপর এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বুলডোজার দিয়ে টিন ও ইটের দেয়ালের কার্যালয়টি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধরা মিছিল করে শহরের থানাপাড়া এলাকায় অবস্থান নেন। সেখানে ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ ভাঙচুর চালানো হয় জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আহসান হাবীব রাজিবের বাসার গেট ও ভবনের বিভিন্ন জানালার গ্লাস। এর আগে, বিকালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় ভবনের বিভিন্ন স্থানে থাকা নামফলক ভাঙচুর করা হয়।
নোয়াখালীতে মঈন ইউ আহমেদের ভাইয়ের বাড়িতে ভাঙচুর
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের ছোট ভাই ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মিনহাজ আহমেদ জাবেদের বাড়িতে একদল মানুষ হামলা চালিয়েছে। একই সময় পার্শ্ববর্তী চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেন ফয়সলের বাড়িতেও ভাঙচুর-লুটপাট চালায় তারা। গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে হামলার ঘটনাগুলো ঘটে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের পৃথক দুটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শতাধিক মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে মিনহাজ আহমেদ জাবেদের আলীপুর গ্রামের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা দ্বিতল বাড়িটিতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় এবং আসবাবে আগুন ধরিয়ে দেয়। তার পরপরই একই ব্যক্তিরা পার্শ্ববর্তী চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেন ওরফে ফয়সলের বাড়িতেও হামলা-ভাঙচুর এবং লুটপাট চালিয়েছে। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, হামলাকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের মাথায় হেলমেট ও মুখে মাস্ক পরা ছিল। তবে হামলা-ভাঙচুরকালে উভয় বাড়ির বাসিন্দাদের কেউ না থাকায় কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আর বাড়ির পাহারাদার ভয়ে পালিয়ে গেছেন। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক একটি পক্ষ বিভিন্ন জনকে ব্ল্যাকমেইল করে তাদের বাড়িঘর ভাঙচুরের ভয় দেখিয়ে মোট অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। যদিও এ বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হননি। গত বৃহস্পতিবার দিনভর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে ছাত্র-জনতা ঘোষণা দিয়েই হামলা ও ভাঙচুর চালায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলা শাখার আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম জানান, এই হামলা-ভাঙচুর কিংবা অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে তাদের সংগঠনের কোনও সম্পৃক্ততা নেই। চৌমুহনীর ঘটনাটি সেখানকার রাজনৈতিক। এর সঙ্গে ছাত্রদের কোনও সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া তাদের যে কর্মসূচি ছিল, সেটি গত বৃহস্পতিবার দিনের বেলায়। একই দাবি সংগঠনদের জেলার মুখ্য সমন্বয়ক ফরহাদুল ইসলামেরও। তিনি বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান এবং ও তার ছোট ভাইয়ের বাড়িতে ভাঙচুরের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবহিত নয়। আমাদের কোনও সদস্য এর সঙ্গে জড়িত নেই বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিচ্ছি। হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাখ্যা চন্দ্র দাস বলেন, আমি নিজে ঢাকায় অবস্থান করছি। আমরা কেন হামলা করবো? আমাদের তো এই কর্মসূচি নেই। আমরা এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত না। কারও বাড়িঘরে হামলা চালানোর মতো কোনও কর্মসূচি বিএনপি ঘোষণা করেনি। যদি কেউ আমাদের নাম জড়ায় তবে তা পরিকল্পিত গুজব।’ বেগমগঞ্জ থানার ওসি লিটন দেওয়ান বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের ছোট ভাই মিনহাজ আহমেদ জাবেদের দ্বিতল বাড়িতে একদল লোক সন্ধ্যার পর হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে। ওই সময় ভবনে কেউ ছিলেন না। হামলাকারীরা ওই সময় নিচতলার সোফায় আগুন ধরিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর সাবেক পৌর মেয়র ফয়সলের বাড়িতেও কিছুটা হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কারা হামলা করেছে তা এখনও আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স