ঢাকা , রবিবার, ০১ জুন ২০২৫ , ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সুগন্ধি চাল রফতানির অনুমতি পেলো আরও ৫২ প্রতিষ্ঠান ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা আম উৎপাদনে উত্তম কৃষি চর্চা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে : কৃষি সচিব বনানীতে পেট্রোল ঢেলে প্রাইভেটকারে আগুন বনানীতে পেট্রোল ঢেলে প্রাইভেটকারে আগুন সেনাবাহিনীর হাতে এনসিপি নেতা গ্রেফতার সিরাজগঞ্জে ১৬ টন সরকারি চাল জব্দ আটক ৮ ঝিনাইদহ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আহত বাংলাদেশির মৃত্যু টাঙ্গাইলে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা, স্বামী পলাতক যশোরের শার্শা সীমান্তে বিদেশি অস্ত্রসহ দুই ব্যবসায়ী আটক শৈশবের ক্লাবে ফিরে গেলেন ডি মারিয়া রোনালদোর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে চায় আল নাসর ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের বিরুদ্ধে উঠলো নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ উইন্ডিজের বিপক্ষে ইংলিশদের রানের পাহাড় ৯ বছর পর ফাইনালের টিকেট পেলো আরসিবি পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ জেতাতে চান হাসান আলি সাবেক বিসিবি সভাপতি ফারুকের দেশ ছাড়ার গুজব বিসিবির নতুন সভাপতি হলেন বুলবুল হোটেলে কথা কাটাকাটির জের বালিশচাপা দিয়ে প্রেমিকাকে হত্যা বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ ঝড়ো হাওয়া ভারী বৃষ্টি

ভরাট হয়ে যাচ্ছে ইলিশের অভয়ারণ্য খরস্রোতা আন্ধারমানিক নদী

  • আপলোড সময় : ০৭-০২-২০২৫ ০৬:৫৩:৫৫ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৭-০২-২০২৫ ০৬:৫৩:৫৫ অপরাহ্ন
ভরাট হয়ে যাচ্ছে ইলিশের অভয়ারণ্য খরস্রোতা আন্ধারমানিক নদী
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
পলি জমে ভরাট হয়ে যেতে বসেছে বঙ্গোপসাগর সংযুক্ত একমাত্র ইলিশের অভয়ারণ্য, কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদী। নদীটি একসময়ে খরস্রোতা থাকলেও বর্তমানে এটি একেবারে বন্ধ। একই নদীতে একের পর এক সেতু নির্মাণ, অবৈধ দখল ও দূষণের কবলে পরে নদীটি তার স্বাভাবিক গতিপথ হারিয়েছে। তাই পলি জমে ক্রমশই দুই পাড় থেকে ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে।  ফলশ্রুতিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশ প্রজনন। ক্ষতির মুখে পরবে সামুদ্রিক অর্থনীতি। আকাল হবে দেশীয় মাছের। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাহত হবে মানব শরীরে প্রটিনের চাহিদা। তাই নদীটি রক্ষায় এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে বছর কয়েকের মধ্যেই মরা নদীতে পরিণত হতে পারে বলে এমনটাই জানিয়েছে পরিবেশবাদী ও স্থানীয়রা।
সরেজমিন দেখা যায়, আন্ধারমানিক নদীটি কলাপাড়া পৌরশহরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে অবস্থিত। পানি উন্নয়ন  বোর্ডের তথ্যমতে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এর ৮/১০ কিলোমিটারের মধ্যে শেখ কামাল, সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং পায়রা বন্দরের জন্য নির্মাণ চলমান ফোরলেনসহ মোট ৩টি সেতু। এই সেতুগুলোর বেশকটি পিলার নদীর মধ্যে হওয়ায় স্রোতের স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। এর ফলে জোয়ার ভাটায় সমুদ্র থেকে আসা পলিমাটি নদীর তলদেশসহ দুই পাড়ে জমে দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব নদীটির সেতু সংলগ্ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু হতে কলাপাড়া পৌর শহরের বঙ্গবন্ধু  কোলোনি পর্যন্ত, নীলগঞ্জ অংশের নৌবাহিনী ক্যাম্প হতে একেবারে হোসেনপুর পর্যন্ত এবং চাকামইয়া ও করইবাড়িয়া ইউনিয়নের বেশকটি জায়গায় নদীর দুই পাড়ে পলি জমে বড় ধরনের চর পড়েছে। যা বর্তমানে বনাঞ্চল করার উপযোগী হয়েছে।
এ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে জেলে নুর হোসেন জানান, ব্রিজ নির্মাণের পর থেকে নদীতে স্রোতের গতি কমে গেছে। ফলে আগের মতো মাছ পান না। আরেক জেলে তৈয়ব গাজী বলেন, আগে যে পরিমাণ স্রোত ছিল তা এখন নাই। গতিবেগ না থাকায় নদীতে জাল ফেললে ভিতরে মাছ ঢোকে কম। আরেক জেলে আলমগীর জানান, আগে নদীতে অনেক ইলিশ পাওয়া যেত কিন্তু এখন আর তা পাওয়া যায় না। আন্ধারমানিক নদীর তীরে বাস করেন জেলে আ. রহীম। তিনি বলেন, নদীর স্রোতের গতিতে আগে দুই পাড় ভাঙত। এখন তা বিশাল চর পরেছে।  নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। তাই তিনি মাছ ধরা বাদ দিয়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। নদীতে মাছ কম পাওয়ায় রহিমের মতো অনেকেই জেলে পেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এখন শুধু অমাবস্যা পূর্ণিমার জোয়ে চরজাল দিয়ে কিছু জেলে মাছ ধরেন। তারাও কাক্সিক্ষত মাছ পায় না বলে জানান।
আন্ধারমানিক নদীর শেখকামাল সেতুর নিচ থেকে খেয়া পারাপার করেন মাঝি মাহতাব বলেন, আমি এখানে অন্তত ২০ বছর যাবৎ খেয়া পার করি। এখন নদীর ভিতরে যেখানে খেয়া ভিড়াই। এর অন্তত ৫০০ গজ উপরে খেয়া ভিড়াইতাম। ভরাটের কারণে এখন পারাপারে আলাদা ঘাট করে নদীর ভিতরে খেয়া ভিড়াতে হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কলাপাড়া আঞ্চলিক কমিটির সদস্যসচিব মেজবাহ উদ্দিন মান্নু বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আন্ধারমানিক নদীর মাত্র ৮/৯ কিলোমটিরের মধ্যে তিনটি সেতু ও নাব্যতা না থাকার কারণে পলির আস্তরণে ভরাট হয়ে গেছে ইলিশের অভয়াশ্রম আন্ধারমানিক নদী। সেই সাথে নদীর দুই পাড় ঘিরে সমানতালে চলছে দখল দূষণ। করা হচ্ছে একের পর এক ইটভাটা। মোট কথা এখানে পরিবেশ প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের একটা মাতম চলছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটে নদীর দুই পাড়ের মানুষের বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়বে। তাই এখনই আন্ধারমানিক নদীর সীমানা চিহ্নিত করে দখল দূষণ বন্ধে কার্যকরী ভূমিকা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, আন্ধারমানিক নদীটি  গুরুত্বপূর্ণ ইলিশের অভয়াশ্রম। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে এ নদীর উপর দুইটি ব্রিজ করা হয়েছে এবং আরও একটি নির্মাণ চলমান রয়েছে। এর ফলে ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছ। ফলে ইলিশসহ দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন কমে যাচ্ছে। তাই ব্রিজগুলো নির্মাণের আগে জীববৈচিত্র্যের কথা চিন্তা করে ফিশারিজ ডিপার্টমেন্ট ও পরিবেশ অধিদফতরের সাথে  পরামর্শক্রমে এ প্লানগুলো নেয়া উচিত যাতে করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকে, মাছের প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষিত থাকে, সেই সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়। যদি পরামর্শ ব্যতীত এগুলো করা হয় তবে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণে এ নদীগুলোতে কোনো মাছ থাকবে না। তখন দেশীয় প্রজাতির মাছের আকাল হবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশের টোটাল প্রোটিনের যে চাহিদা তা ব্যাহত হবে বলে এমনটাই তিনি জানিয়েছেন।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য