
পাঠকের সমাগম বাড়ছে
- আপলোড সময় : ০৬-০২-২০২৫ ১১:৫০:২১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-০২-২০২৫ ১১:৫০:২১ পূর্বাহ্ন


প্রতিবারের মতো পাঠকের পদচারণায় জমে উঠছে অমর একুশে বইমেলার এবারের আসরও। বই মেলার পঞ্চম দিনে পাঠক ও দর্শনার্থী সংখ্যা বেড়েছে। গতকাল বুধবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমির বইমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় বসেছে একাধিক দৃষ্টিনন্দন বড় স্টল। এসব স্টলের সামনে ভিড় করছেন পাঠক ও দর্শনার্থীরা। বই কেনার পাশাপাশি স্মৃতি সংরক্ষণ করতে তুলছেন ছবিও। মেলা শুরুর দিকের অগোছালোভাব অনেকটাই গোছালো হচ্ছে। পাঠক-দর্শকদের পাশাপাশি বইপ্রেমীদের জন্য মেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৯৮টি। এর মধ্যে গল্প-১৩টি, উপন্যাস-১৮টি, কবিতা-৩৩টি, গবেষণা-৪টি, শিশু সাহিত্য-২টি, জীবনী-২টি, নাটক-৩টি, ইতিহাস-৩টি ও অন্যান্য-১৬টি। এ নিয়ে মেলায় সর্বমোট নতুন বইয়ের সংখ্যা হলো ৯৮টি।
অমর একুশে বইমেলায় ডিআরইউ’র স্টল উদ্বোধন: অমর একুশে বইমেলায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) স্টল উদ্বোধন করেন দৈনিক ভোরের আকাশের সম্পাদক ও ডিআরইউ সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান। গতকাল বুধবার বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রধান অতিথি হিসেবে ফিতা কেটে তিনি ডিআরইউ’র ৯৬২ নম্বর স্টলের উদ্বোধন করেন।
ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের একান্ত সচিব আজিজুল হক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইলিয়াস খান বলেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাংবাদিকদের একটি সংগঠন। বাংলা একাডেমির বই মেলায় ডিআরইউ’র অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে একটি বড় কাজ। ডিআরইউ’র সদস্যদের মধ্যে অনেকেই লেখালেখির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন, যাদের বই এবারের মেলায় প্রকাশিত হয়েছে এবং ডিআরইউ স্টলের মাধ্যমে তাদের বই বিক্রীর সুযোগ পাবেন। অনুষ্ঠানে ডিআরইউ যুগ্ম সম্পাদক নাদিয়া শারমিন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিজান চৌধুরী ও কার্যনির্বাহী সদস্য সুমন চৌধুরীসহ সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুশান্ত কুমার সাহা, স্থায়ী সদস্য মাসুম মিজান ও বিপ্লব বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।
কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন স্টল: বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র: দৃষ্টিনন্দন স্টলের তালিকায় শুরুতে আছে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র। প্রতিবছরের মতো এবার একটি বড় ও বিশেষ ডিজাইনের স্টল বসিয়েছে এই প্রকাশনী। দোতলা বাসের আকৃতির এই স্টলটি ইতোমধ্যে নজর কেড়েছে পাঠকদের।
অন্যধারা: জাতীয় সংসদের আকৃতি দিয়ে এবারের বইমেলায় স্টল বসিয়েছে অন্যধারা প্রকাশনী। প্রতিবছরই মেলায় তারা একটি বড় স্টল বরাদ্দ নেয় এবং ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির স্টল তৈরি করে। জাতীয় সংসদ আকৃতির এই স্টলটিও দর্শকদের নজরে এসেছে। অনেকেই স্টলটির ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও এবার বইমেলায় স্টল বরাদ্দ পেয়েছে। বাংলা একাডেমির ভেতরের মেলা প্রাঙ্গণে দর্শকদের নজর কেড়েছে স্টলটি। জুলাই অভ্যুত্থানের বিভিন্ন সময়ের আন্দোলনের একাধিক ছবি-সংবলিত প্ল্যাকার্ড দিয়ে সাজানো হয়েছে স্টলটির আশপাশ। এছাড়াও এবার বইমেলায় পুথিনিলয়, ইউপিএল, প্রথমা, আগামী প্রকাশনী, স্টুডেন্ট ওয়েজ, ভাষাচিত্র, মিজান পাবলিশার্সসহ বেশ কয়েকটি প্রকাশনী দৃষ্টিনন্দন স্টল বসিয়েছে। বই কিনতে এসে স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফরিন জাহান। তিনি বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রত্যন্ত এলাকায় থাকায় এর আগে বইমেলায় আসার সুযোগ হয়নি। প্রথমবার বইমেলায় এসেছি। বই কেনা থেকে পুরো মেলা ঘুরে দেখতে বেশি ভালো লাগছে। কয়েকটি স্টল অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। আকাশ, পাঠক সমাবেশ, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রসহ অন্যান্য প্রকাশনী নজর কেড়েছে। এছাড়াও অনেক প্রকাশনীর স্টল ভালো লেগেছে। আমি এই প্রকাশনীগুলো সম্পর্কে আগে জানতাম না।
বইমেলার মূলমঞ্চের অনুষ্ঠান: বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘হোসেনউদ্দীন হোসেন’ : প্রান্তবাসী বিরল সাহিত্য-সাধক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আহমেদ মাওলা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আবুল ফজল। সভাপতিত্ব করেন শহীদ ইকবাল। প্রাবন্ধিক বলেন, গভীর জীবনবোধ, ইতিহাস-চেতনা এবং প্রাগ্রসর চিন্তাশক্তি হোসেনউদ্দীন হোসেনকে সৃষ্টিশীল ও বিরল সাহিত্য-ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি নিজেকে কৃষক পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। হোসেনউদ্দীন হোসেনের কর্মজীবন যেমন বৈচিত্র্যময়, লেখালেখির ক্ষেত্রেও ছিলেন বহুমুখী। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জীবনীমূলক রচনা ইত্যাদি বিষয়ে স্বতন্ত্র চিন্তার মৌলিকগ্রন্থ রয়েছে তার। গভীর জীবনবোধ ও বাস্তবতার বিনির্মাণ, রূপক তৈরির কুশলতা তাকে কালোত্তীর্ণ শিল্পীর মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে। তিনি ইতিহাসের দায়বদ্ধতা থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে বাংলার সংগ্রামী চেতনাকে দেখেছেন। আলোচক বলেন, হোসেনউদ্দীন হোসেন মানুষ হিসেবে ছিলেন অত্যন্ত সাধারণ। বিস্তৃত পঠন-পাঠন ও জ্ঞানের গভীরতা তার লেখালেখির জগৎকে সমৃদ্ধ করেছে। চিন্তার গভীরতায় ও জ্ঞানের পরিশীলনে তিনি ছিলেন মৌলিক। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি সাহিত্যের নানাবিধ বিষয় নিয়ে যেমন তিনি তার গভীর প্রজ্ঞার আলো ছড়িয়েছেন, তেমনি এদেশের ইতিহাস- ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিষয়েও তার নিবিড় পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। সভাপতির বক্তব্যে শহীদ ইকবাল বলেন, হোসেনউদ্দীন হোসেন ছিলেন একজন সহজাত লেখক। কবিতা দিয়ে সাহিত্যজীবন শুরু করলেও গদ্যের জগতে নিজ প্রতিভার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। তার লেখায় বুদ্ধিবৃত্তি ও মননশীলতার ছাপ স্পষ্ট। লেখক হতে গেলে যে সততা, নিবিষ্টতা ও একাগ্রতা দরকার, তিনি আজীবন তার চর্চা করে গেছেন। লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেনÑকবি রেজাউদ্দিন স্টালিন এবং কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক শিবলী আজাদ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেনÑকবি আতাহার খান এবং আলমগীর হুছাইন। আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী রানা আহমেদ এবং কাজী সামিউল আজিজ। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী বুলবুল ইসলাম, মো. আরিফুর রহমান, তাপসী রায়, পাপড়ি বড়ুয়া, ফারাহ হাসান মৌটুসী, মো. হারুনুর রশিদ, কামাল আহমেদ এবং নুসরাত বিনতে নূর। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ পাল (তবলা), মো. রিফাত হোসেন (কী-বোর্ড), অসিত বিশ্বাস (এসরাজ) এবং মো. হাসান আলী (বাঁশি)।
আজকের আলোচনা অনুষ্ঠান: আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ: মাহবুবুল হক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তারিক মনজুর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মাহবুব বোরহান এবং মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করবেন সৈয়দ আজিজুল হক।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ