ঢাকা , বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সেল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ইউজিসির বিপুল আমদানিতেও ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল চিন্ময় দাসের জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল মুক্তিযোদ্ধা তথ্যভাণ্ডার তৈরিতে অনিয়ম এ সরকারও কুমিল্লা থেকে খুনের ইতিহাস শুরু করেছে-শামসুজ্জামান দুদু যুব সমাজ দেশে জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা পাচ্ছে না-জিএম কাদের ট্রাম্পের শুল্কনীতির অস্থিরতায় বিশ্ব অর্থনীতির ঝুঁকি বাড়ছে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন বাড়ছে পাচার অর্থ ফেরাতে কানাডার সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা ২৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় কমিটিতে ১২ প্রস্তাব অনুমোদন প্রশাসন ক্যাডারের তরুণদের হতাশা-ক্ষোভ গুচ্ছে থাকছে ২০ বিশ্ববিদ্যালয় ৯ বছরেও ফেরেনি রিজার্ভ চুরির অর্থ কারাগার থেকে ফেসবুক চালানো সম্ভব নয় ৮ ফেব্রুয়ারি ছয় সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ-আসিফ নজরুল এক সপ্তাহ পর ক্লাসে ফিরলেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটায় উত্তাল জাবি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা সমর্থন করছি না-মান্না চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ৪৬ নেতাকর্মী গ্রেফতার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত আজ
জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে শতাধিক সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

প্রশাসন ক্যাডারের তরুণদের হতাশা-ক্ষোভ

  • আপলোড সময় : ০৫-০২-২০২৫ ০৫:১৮:৪৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৫-০২-২০২৫ ০৫:১৮:৪৬ অপরাহ্ন
প্রশাসন ক্যাডারের তরুণদের হতাশা-ক্ষোভ
জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে থাকছে শতাধিক সুপারিশ : কমিশন প্রধান জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে অন্য ক্যাডারের কোটা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করে সুপারিশ চূড়ান্ত হয়েছে-এমন খবর সংবাদপত্রে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের তরুণ কর্মকর্তারা। গতকাল মঙ্গলবার ৩০ থেকে ৪১তম ব্যাচের একাধিক তরুণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এদিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের এই প্রস্তাব নিয়ে এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনে প্রশাসন ক্যাডারের নবীন কর্মকর্তারা জড়ো হয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করেন। এসময় আয়োজিত এক জরুরি মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রশাসন ক্যাডারের নবীন কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং এই সিদ্ধান্ত তাদের প্রতি ভয়াবহ অবিচার বলে বক্তব্য তুলে ধরেন। ৩০ থেকে ৪১তম ব্যাচের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রিটিশ ভারত থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবেই উপসচিব পদে মূলত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই কাজ করে থাকেন। এ বিষয়ে করা রিট মামলায় উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই শেষে আপিল বিভাগ ২৪ মে ২০১০ সালে চূড়ান্ত আদেশে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ৭৫ শতাংশ নিয়োগ প্রদান বৈধ ঘোষণা করেন। প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তারা মনে করেন, আদালতের রায় উপেক্ষা করে এ ধরনের সুপারিশের প্রস্তাব একদিকে আদালত অবমাননার শামিল অপরদিকে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দুর্বল করার শামিল। পাশাপাশি এই সুপারিশ নবীন কর্মকর্তাদের জন্য বৈষম্যমূলক। এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে এবং রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা দুর্বল হতে পারে বলেও আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তারা। আয়োজিত ওই জরুরি মত বিনিময় সভায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩০ ব্যাচ থেকে ৪১ ব্যাচের প্রতিনিধিরা বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরীসহ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন নেতারা তাদের বক্তব্য সরকারের উচ্চ মহলে তুলে ধরার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে, রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া ও কার্যক্রম গ্রহণের আশ্বাস দেন। ওই অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সরকারের নীতি বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ‘কোর’ অফিসগুলোতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করেন। এই সুপারিশের ফলে প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যাবে। ফলে, এক বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তার ক্যারিয়ার অনিশ্চিত হয়ে পড়বে যা প্রভাব ফেলবে প্রশাসনের ‘ইস্পিরিট ডি কর্পস’ বা মনোবলে। প্রশাসন যেহেতু সরকারের নানা নীতি বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করে সেহেতু মনোবলহীন প্রশাসন ব্যবস্থা রাষ্ট্রব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার নামান্তর হবে। নবীন কর্মকর্তারা আরও মনে করেন, সরকারের নীতি বাস্তবায়নে তারা প্রায় ২৪/৭ মাঠে কাজ করে থাকে। ৫ আগস্টের পর যখন রাজনীতিবিদেরা মাঠে অনুপস্থিত ছিল। পুলিশ অকার্যকর ছিল তখন স্থানীয় সরকারের নানা পর্যায়ে যেমন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইত্যাদি নানা পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারকে কার্যকর রেখেছে। এই সুপারিশের ফলে ক্যারিয়ারে পদসোপান যদি কমে যায় তবে তারা বাড়তি কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এতে করে মাঠ প্রশাসনের কার্যকারিতা অনেকাংশেই কমে যাবে এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা ভেঙে যাবে। ফলে, সরকারের নীতি বাস্তবায়নে নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙে পড়বে যার প্রভাবে রাষ্ট্রের নীতি বাস্তবায়নে সক্ষমতা কমে যাবে। সরকারের এই সময়ে যা হতে পারে সরকারের জন্য বিপজ্জনক। নবীন কর্মকর্তাদের মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, উপসিচব পদটি প্রশাসন ক্যাডারের সহজাত পদ বলে রায় দিয়েছে আপিল বিভাগ। সেটি উপেক্ষা করে এই অন্যায্য সুপারিশ প্রশাসন ক্যাডারের জন্য বৈষম্যমূলক। যেখানে অন্য সব ক্যাডার কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতির দুটি সুযোগ পাচ্ছে। ১. নিজের ক্যাডারের পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতির সুযোগ। ২. উপসচিব পদে পদোন্নতির সুযোগ সেখানে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা একটি সুযোগ পাচ্ছেন একটি-উপসচিব পদে পদোন্নতির সুযোগ। আরেক কর্মকর্তা বলেন, কমিশনের এই সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে জুনিয়র কর্মকর্তারা যারা এখনো উপসচিব পদে পদোন্নতি পায়নি। এসব কর্মকর্তারা বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার সময় উপসচিবে নিজেদের সুযোগ ৭৫ শতাংশ আছে ধরেই চয়েজ প্রদান করেছেন। ক্যারিয়ারের মাঝপথে এসে এই ধরনের পরিবর্তন ‘ডকট্রিন অফ লেজিটিমেট এক্সপেকটেশন’এর লঙ্ঘন। জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে শতাধিক সুপারিশ সংস্কার কমিশনের : জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে কমিশনের প্রতিবেদনে শতাধিক সুপারিশ থাকছে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান। কমিশন প্রধান বলেন, আমাদের রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা ছিল গত মাসে, কিন্তু আমরা আমাদের কাজের কারণে পারিনি। কারণ, আমরা মাঠে গিয়েছি, লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় গিয়ে কথা বলেছি, অনলাইনে আমরা মতামত নিয়েছি। এগুলোর ভিত্তিতে আজ প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে স্বাক্ষর করবো। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আমরা প্রধান উপদেষ্টার অফিসে যাবো এবং তার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করবো। একই সঙ্গে কাল আইন কমিশনও তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদনে ১০০টির বেশি সুপারিশ থাকছে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, এখন এর বাইরে আমি কিছু জানাতে পারবো না। আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেছেন, জনপ্রশাসন সংস্কার নিয়ে কমিশনের প্রতিবেদন বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, আমরা যে সুপারিশ করছি সেগুলো সবই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। অসম্ভব কিছু হলে তো সেগুলো সুপারিশ করতাম না। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি না সেটা তো এখন সরকার বুঝবে। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেসউর রহমান বলেন, প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর সেটি হবে পাবলিক ডকুমেন্ট। ওয়েবসাইটে দেয়া হবে, সবাই জানবেন। জমা দেয়ার পরে সবাই জানুক এতে ভুল বোঝাবুঝির অসুবিধা থাকে না। এরপর কমিশন প্রধানসহ সদস্যরা প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষর শেষে বের হওয়ার সময় মুয়ীদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যে সুপারিশ করেছি সেগুলো সবই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। অসম্ভব কিছু হলে তো সেগুলো সুপারিশ করতাম না। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি না সেটা তো এখন সরকার বুঝবে। এরআগে গত ৩ অক্টোবর ৮ সদস্যের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিশনের প্রধান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। পরে কমিশনের সদস্য সংখ্যা আরও তিনজন বাড়ানো হয়। জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা করে তুলতে এ কমিশন গঠন করা হয়। ৯০ দিনের (৩ মাস) মধ্যে প্রস্তুত করা প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করতে বলা হয়। এরপর তিন দফা বাড়িয়ে কমিশনের মেয়াদ ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় আগেই প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে কমিশন। এই কমিশনে সদস্য হিসেবে রয়েছেন-সাবেক সচিব মোহাম্মদ তারেক এবং মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান, সাবেক যুগ্ম-সচিব রিজওয়ান খায়ের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম ফিরোজ আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. সৈয়দা শাহীনা সোবহান, নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোন্দকার মোহাম্মদ আমিনুর রহমান এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেহেদী হাসান।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স