ঢাকা , বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সেল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ইউজিসির বিপুল আমদানিতেও ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল চিন্ময় দাসের জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল মুক্তিযোদ্ধা তথ্যভাণ্ডার তৈরিতে অনিয়ম এ সরকারও কুমিল্লা থেকে খুনের ইতিহাস শুরু করেছে-শামসুজ্জামান দুদু যুব সমাজ দেশে জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা পাচ্ছে না-জিএম কাদের ট্রাম্পের শুল্কনীতির অস্থিরতায় বিশ্ব অর্থনীতির ঝুঁকি বাড়ছে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন বাড়ছে পাচার অর্থ ফেরাতে কানাডার সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা ২৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় কমিটিতে ১২ প্রস্তাব অনুমোদন প্রশাসন ক্যাডারের তরুণদের হতাশা-ক্ষোভ গুচ্ছে থাকছে ২০ বিশ্ববিদ্যালয় ৯ বছরেও ফেরেনি রিজার্ভ চুরির অর্থ কারাগার থেকে ফেসবুক চালানো সম্ভব নয় ৮ ফেব্রুয়ারি ছয় সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ-আসিফ নজরুল এক সপ্তাহ পর ক্লাসে ফিরলেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটায় উত্তাল জাবি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা সমর্থন করছি না-মান্না চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ৪৬ নেতাকর্মী গ্রেফতার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত আজ
শিক্ষার্থীদের অবরোধে অচল রেলপথ

ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ

  • আপলোড সময় : ০৪-০২-২০২৫ ০৪:১৮:৫৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৪-০২-২০২৫ ০৪:১৮:৫৬ অপরাহ্ন
ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ
• পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন হ শিক্ষার্থীদের ঘিরে রেখেছে অতিরিক্ত পুলিশ, ডিবি, এবিবিএন সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে সড়ক অবরোধের পাশাপাশি রেলপথও অবরোধ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এতে করে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধে অচল হয়ে গেছে রেলপথ। এ ঘটনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, ডিবি, এবিবিএনর পাশাপাশি চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এমনিতেই জনবহুল ঢাকা শহরের সড়কগুলোতে যানবাহনের গতি ধীর। তার ওপর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে একের পর এক আন্দোলনে একরকম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের দাবি আদায়ে লাগাতার আন্দোলন করেই যাচ্ছে। এসব দাবি আদায়ে আন্দোলনকারীরা কখনও সড়ক অবরোধ করছেন, কখনও আবার সচিবালয়সহ বিভিন্ন উপদেষ্টার কার্যালয় এসে জড়ো হচ্ছেন। এমনকি বাদ যাচ্ছে না প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনও। এসব কারণে রাজধানীর জনজীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। জানা গেছে, রাজধানীর মহাখালী রেলগেট এলাকায় রেলপথ অবরোধ করেছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের অবরোধের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন চলাচল। অবরোধের মুখে নোয়াখালী অভিমুখের উপকূল এক্সপ্রেস ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের দিকে ফেরত গেছে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছেন পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা। এছাড়া মহাখালীর আমতলী মোড়ে দাঁড় করিয়ে রাখা জলকামানটিও সামনে এনে রাখা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, রেল লাইনের উপর বসে আছেন ২০-৩০ জন শিক্ষার্থী। এর পাশে দাঁড়িয়ে আছেন আরো শতাধিক শিক্ষার্থী। আর শিক্ষার্থীদের চারপাশ ঘিরে পুলিশ, ডিবি, বিজিবি এবং এবিবিএন সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। এর পেছনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে জল কামান। এর আগে, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাখালী রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে নোয়াখালীর উদ্দেশে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা উপকূল এক্সপ্রেস উল্টোপথে ফিরে গেছে। গতকাল সোমবার বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রেলপথ অবরোধ করেন। তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত রেলকর্মীরা লাল পতাকা দেখিয়ে রেললাইন ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যান। পরে ট্রেনের চালক লাল পতাকা দেখে ধীরে ধীরে ট্রেনের গতি থামিয়ে মহাখালী রেলগেটের কাছাকাছি এসে ট্রেনটি থামাতে সক্ষম হন। এদিকে ফ্লাইওভার ব্যবহার করে কিছু যানবাহন চলাচল করলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন এই রুটে চলাচলকারী অধিকাংশ মানুষ। এছাড়াও সাধারণ মানুষকে হেঁটে আন্দোলনরত স্থান পাড়ি দিতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে শ্যামলী, ফার্মগেটের দিক থেকে আসা গাড়ি মহাখালী রেলক্রসিংয়ের আগ থেকে ইউটার্ন নিতে দেখা গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ দীর্ঘ পথ হেঁটে এসে উঠছেন গাড়িতে। এছাড়া উত্তরাগামী গণপরিবহনগুলোকে ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে দেখা যায়। মহাখালী চেয়ারম্যানবাড়ি থেকে হেঁটে রেলগেটে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন এত এত আন্দোলনে আমরা অতিষ্ঠ। প্রতিটা দিন এই আন্দোলনের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায়ই কেটে যাচ্ছে। এভাবে কি কোনো দেশ চলতে পারে? অন্য এক পথচারী হান্নান শেখ বলেন, মানুষের একটা যৌক্তিক দাবি থাকে, সেটার কারণে আন্দোলন হলে ঠিক আছে। কিন্তু এটা আবার কেমন দাবি তাদের? মন চাইলেই যে কোনো বিষয়ে দাবি জানালাম আর রাস্তায় বসে পড়লাম? এমন হলে আমরা সাধারণ মানুষ কোথায় যাবো? রেলগেট সংলগ্ন মিজান নামের এক দোকানদার বলেন, সাড়ে ৩টার পর থেকে আন্দোলনকারীরা রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। কোনো গাড়ি যেতে দিচ্ছে না। অধিকাংশ মানুষ গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেই যাতায়াত করছে। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা উপকূল এক্সপ্রেস আটকে দিয়েছে। এখন ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। শুধুমাত্র পদ্মা সেতু হয়ে রুট ও নারায়ণগঞ্জের লাইনটি ক্লিয়ার আছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই লাইনে কোনো ট্রেন নেই। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা মহাখালী রেল ক্রসিং অবরোধের ফলে দেশের অধিকাংশ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। বেশিরভাগ ট্রেন এই রুট দিয়ে চলাচল করে। বিজিবি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম দৈনিক জনতাকে বলেন, গতকাল সোমবার বিকেল ৫টার দিকে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীর মহাখালীতে রেললাইন অবরোধ করেছে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বেশ কয়েকমাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে মিছিল, সড়ক-রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়। তবে সম্প্রতি এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে গত ২৯ জানুয়ারি বুধবার বিকেল থেকে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, রাজধানীর তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌক্তিকতা পাচ্ছে না। সাতটা কলেজ নিয়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে ইউজিসির চেয়ারম্যান মহোদয়ের নেতৃত্বে। সেই কমিটি কাজ করছে। সেই কমিটি যখন কাজ করছে, এর মধ্যে তিতুমীর বললো যে তারা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় চায়। আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার যে দাবি, এর স্বপক্ষে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে। কারণ তিতুমীরের মতো আরও অনেকগুলো কলেজ রয়েছে। ঢাকা শহরে আছে, ঢাকার বাইরে আছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের উপদেষ্টা মহোদয় একটি বক্তব্য দিয়েছেন তিনি সেখানে বলেছেন যে এ দাবি যৌক্তিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় না। যেহেতু আরও অনেকগুলো এ রকম কলেজ রয়েছে। তিতুমীরের যে ছাত্ররা আন্দোলনে আছে তাদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। কিন্তু সাধারণ ছাত্ররা চাচ্ছে যে তাদের পড়াশুনা যাতে নির্বিঘ্ন থাকে। তাদের পড়াশোনা যাতে এই ধরনের আন্দোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সুতরাং সরকার সেটাতেও লক্ষ্য রাখছে। তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সময় অর্থাৎ যে সময় পর্যন্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয় না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত এই বিষয়টিকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়। সেই কারণে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা নীতিগতভাবে এটুকু একমত আছে যে, আমরা এ সাত কলেজের দায়িত্ব নিতে চাই না। তবে এ বছর যারা নতুন ভর্তি হবে, তাদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয় এবং যারা পরীক্ষা দেবে, তাদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয়, এজন্য সরকার যেভাবে বলবে তারা সেভাবে করবে। তিনি বলেন, তিতুমীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি ছাড়াও আরও দুটি দাবি জানিয়েছে। সেটা হচ্ছে, তাদের সেখানে আরও পিএইচডি অধ্যাপক দিতে হবে। এতে আমরা একমত হয়েছি। সেখানে ১৭ জন পিএইচডি হোল্ডার আছেন, আমরা আরও দেবো। দ্বিতীয় তারা আরেকটি দাবি জানিয়েছে যে, গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সেটা তো আমরা রাজি হয়েছি যে বরাদ্দ আরও বাড়াবো। বিশ্ববিদ্যালয় দাবির বিষয়ে আমরা বলেছি, ইউজিসির কমিটি যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে সেটার ওপরেই আমরা পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবো।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স