মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হিংগাজিয়া চা বাগান। এই চা বাগানের ভেতরে রয়েছে এক মনোমুগ্ধকর লেক। দেখে মনে হয় হঠাৎ সবুজের মাঝে ঝকঝকে এক অপ্সরি। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য।
পাখির কলকাকলিতে চারিদিক পরিপূর্ণ। লেকটি চারপোশে পাহাড় আর টিলায় চা বাগান। চারিদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। দূরের পাহাড় দেখে মনে হয় আকাশের নীল এসে যেন দিগন্ত ছুঁয়েছে। উঁচু এক পাহাড়ে পতাকার মতো সবুজের মাঝে লাল রঙের টিলাঘরে আরও চোখ জুড়ায়।
লেকটির অবস্থান কুলাউড়া উপজেলার হিংগাজিয়া চা বাগানের ১০ নম্বর সেকশনে। লেকটির চারপাশে চাবাগানে বেষ্টিত। দুই প্রান্তে কাঠ ও লাল টিন দিয়ে তৈরি দুটি ঘর। পাহাড়ের বুক চিরে মনোরম লেক। যা সৌন্দর্যকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। আর টিলাঘরে বসে নীল আকাশের নীচে এই অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
লেকটিতে যেতে চাবাগানের অপরুপ সৌন্দর্যের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। পথে বাগানের ভেতর উঁচু পাহাড়ে চা শ্রমিকদের চায়ের পাতা তোলার দৃশ্য চোখে পড়ে। আর দেখা যায়, রাবার বাগানের অপরূপ দৃশ্য। পথে মেলে বানরের দল, গাছের এক ডাল থেকে আরেক ডালে লাফাচ্ছে।
সবুজের গালিচা বিছানো চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমী যে কারো মন আন্দোলিত করবে। সবুজ চায়ের ঘ্রাণ মনটাকে প্রফুল্ল করে তুলবে।
টিলাঘরে বসে উপভোগ করা যায়, হিমেল হাওয়া, পশ্চিমে রক্তিম আকাশ আর পাহাড়ের নির্মল সবুজ। পাহাড় থেকে ভেসে আসে নানান প্রজাতির পাখির কাকলি। এ যেন এক স্বপ্নের দেশ! এই সৌন্দর্যের রাজ্যে না হারিয়ে উপায় নেই। এখানে কখন যে সময় গড়িয়ে যায়, তার হিসাব থাকে না। হিসাব রাখার দরকারও পড়ে না। প্রথমবার গিয়ে মনে হবে অনন্তকাল থাকা যাবে এমন পরিবেশে।
কথা হয় ঘুরতে আসা আবিদ হোসাইনের সাথে। তিনি বলেন, এখানে আমি প্রথম এসেছি। এখানে আসার পর মনে হচ্ছে আসাটা বৃথা যায়নি। যতদূর রাস্তা পার হয়ে এসেছি আমি সফল। এখানকার দৃশ্য সাজেক বলেও চালিয়ে দেওয়া যাবে। লেক এবং চাবাগানের কম্বিশনে দারুণ জায়গাটা।
তিনি বলেন, শীতের মৌসুম থাকায় এখানকার রাস্তা অনেক ভালো। লেকে আসতে চাবাগান, রাবার বাগানসহ লাল গালিচা বিছানো রাস্তা পাড়ি দিতে হয়। অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য এখানকার। এখানে এসে অনেক ভালো লেগেছে। জায়গাটি উপভোগ করেছি। এখানে আগামীতে আবারও আসার চিন্তা আছে।
শুভ নামের আরেক পর্যটক বলেন, আমার বাড়ি থেকে লেকটি কাছে থাকায় সময় পেলে এখানে ঘুরতে আসি। এখানের দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম। পাখির কোলাহল, লেক সচরাচর দেখা যায় না। এটা অনেক বড় লেক। এই লেকটি অন্যান্য লেকের চাইতে আরও সুন্দর।
তিনি বলেন, লেকের পাশে বড় বড় পাহাড় রয়েছে। পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে কুয়াশা জড়ানো দৃশ্য দেখে মনে হয় মিনি সাজেক। যে কেউ এখানে এসে সাজেকের ফিল (অনুভব) নিতে পারে।
সেখানকার কর্তব্যরত কয়েকজন গার্ডদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লেকটি খনন করা হয়েছে চারা গাছে পানি দেওয়ার জন্যে। তবে জায়গাটি এখন সবার জন্যে উন্মুক্ত।
পরিবেশপ্রেমী ও সাংবাদিক কামরান আহমদ বলেন, এসব জায়গাকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের তৎপর হতে হবে। নিয়মিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করতে হবে। এরকম কাজ না করলে একসময় প্রাকৃতিক স্থানগুলো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata