ঢাকা , বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
৮ ফেব্রুয়ারি ছয় সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ-আসিফ নজরুল এক সপ্তাহ পর ক্লাসে ফিরলেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা কোটায় উত্তাল জাবি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা সমর্থন করছি নাÑ মান্না চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ৪৬ নেতাকর্মী গ্রেফতার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত আজ শুক্রবার সকালেও মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা থানা স্থানান্তরের দাবিতে সড়ক অবরোধ, যানজট তিতাসের অভিযানে ৮শ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন আড়ালে সবাই আওয়ামী লীগকে কাছে চায় : নুর শেরপুরে গরু চোর সন্দেহে দু’জনকে পিটিয়ে হত্যা লক্ষ্মীপুর ও রাঙামাটিতে ২ লাশ উদ্ধার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জমি নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২ গণতান্ত্রিক সরকার নেই বলেই বিনিয়োগ হচ্ছে নাÑ রিজভী ঢাকায় চলবে গোলাপি বাস, চড়তে লাগবে টিকেট ফেনীতে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ যুবক নিহত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন ১৯ জনের মৃত্যু মহালছড়িতে ভাইয়ের বিরুদ্ধে সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগ শ্রীপুরে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে থানার এএসআই ক্লোজড সাঘাটার ভূমিদস্যু সুইট ও সহযোগীদের শাস্তির দাবি

আস্থাহীনতায় ধুঁকছে শিল্প

  • আপলোড সময় : ২৭-০১-২০২৫ ০৩:৫০:১২ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৭-০১-২০২৫ ০৩:৫০:১২ অপরাহ্ন
আস্থাহীনতায় ধুঁকছে শিল্প
* বাড়তি খরচ ও উচ্চ সুদহারে বিপাকে ব্যবসা ও কর্মসংস্থান * প্রকল্পে বিনিয়োগ কাটছাঁট, রাজস্ব ও কর্মসংস্থানে প্রভাব * বিদেশে পাচারের এক টাকাও দেশে ফেরত আসেনি গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতির দৈন্যদশা কাটাতে পারছে না অন্তর্বর্তী সরকার। বেসরকারি খাতে নানা সমস্যার কারণে সৃষ্ট সংকটের সঙ্গে আরো নতুন করে যোগ হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। বর্তমানে চরম আস্থাহীনতা ও বাড়তি উৎপাদন ব্যয়ের চাপে আছে শিল্প। এতে বরং ঝুঁকি আরো বাড়ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে কমছে সাধারণ মানুষের আয় ও কর্মসংস্থান। এর অন্যতম কারণ ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধি এবং উৎপাদন হ্রাস। বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে ধীরগতি এবং কর্মসংস্থান ঘাটতি দেশের অর্থনৈতিক সংকট বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এছাড়াও বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য গঠিত টাস্ক ফোর্স গঠনের পর সাড়ে চার মাস পার হয়েছে। কিন্তু এখনো এক টাকাও ফেরত আসেনি। তবে জব্দ করা হয়েছে দেড় সহস্রাদিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, যেখানে পাওয়া গেছে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা মূল্যের অর্থ এবং শেয়ার। আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান নিয়োগের পর গতি হারিয়েছে পাচারকারী শনাক্তের কাজ। সূত্র জানায়, দেশের রাজনৈতিক সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতার পালাবদল হওয়ার পরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে আরো দুরবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় দিনে দিনে দায়-দেনা ভারী হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। দফায় দফায় করকাঠামোর পরিবর্তন। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, তবু ঘাটতি আছে। উচ্চ সুদের হারে ব্যয়ের চাপ বেড়েছে। কমে যাচ্ছে রফতানি আয়, শিল্পের উৎপাদন। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ছে শ্রমিকের বেতন। বৃদ্ধি পেয়েছে সব ধরনের কাঁচামালের দাম। এসব কারণে বেড়ে যাচ্ছে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যয়, যার সরাসরি চাপ পড়ছে ভোক্তার ওপরে। এসব সমস্যা অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলেছে। প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বিনিয়োগ প্রসারের পথ রুদ্ধ। এমনকি চলমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন, বলছেন ব্যবসায়ীরা। শিল্প খাতে এক বছরের ব্যবধানে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। সব মিলিয়ে শিল্প খাতের আকাশে অমানিশার অন্ধকার দেখতে পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছে, কিন্তু তেমন সুফল দেখা যাচ্ছে না। দেশের অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে একের পর এক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো। পরিস্থিতি উত্তরণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ দিলেও সঙ্গে আছে কঠিন শর্ত। এই শর্ত বাস্তবায়নে জনভোগান্তি বাড়ায় বিপাকে পড়েছে সরকার। এর প্রভাবে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে ব্যবসা খরচ, টাকার মান কমে যাচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ না কমে বরং আরো বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির প্রভাবে ভোক্তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় হচ্ছে না। ফলে পণ্যের বিক্রি কমে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। তাই এখন শিল্প টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যয়ের চাপ সামলাতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা, পাশাপাশি সাধারণ মানুষও। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য রক্ষা এবং জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তৈরির দাবি করেছেন তারা। আইএমএফের শর্তের মধ্যে রয়েছে ঋণের সুদহার বৃদ্ধি, টাকার প্রবাহ হ্রাস, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পদক্ষেপ, ভ্যাটের আওতা ও হার বৃদ্ধি, ভর্তুকি কমানো। এসব বাস্তবায়নে গেছে সরকার, যা সংকট আরো ঘনীভূত করেছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও জনজীবনে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো নিয়মিত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার কিছু খাত থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়ে ইতিবাচক পরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার শর্ত বাস্তবায়ন না করে দেশের বাস্তবতায় যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। আওয়ামী লীগ সরকার মূল্যস্ফীতি কমাতে তিন অর্থবছর ধরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করে আসছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর মুদ্রানীতিকে আরো কঠোর করা হয়েছে। ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানো হয়েছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে প্রবৃদ্ধি মাত্র দেড় শতাংশে নেমেছে। ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সৃষ্ট অস্থিরতা, শ্রমিক অসন্তোষ, উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থাহীনতা, ডলারের সংকট, গ্যাস ও বিদ্যুতের উচ্চ মূল্য ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে ঘাটতি এসব কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমেছে, ফলে ঋণের প্রবাহও কমে গেছে। অথচ কর্মসংস্থানের ৯৫ শতাংশই হচ্ছে বেসরকারি খাতে। মাত্র ৫ শতাংশ হচ্ছে সরকারি খাতে। ফলে কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নতুন সরকার আসার পর প্রথমে ডলারের দাম বাড়িয়ে ১২০ টাকা করে। গত ১ জানুয়ারি থেকে তা আরো বাড়িয়ে ১২২ টাকা করা হয়। কিন্তু ব্যাংকে আমদানির জন্য আগাম ডলার আরো বেশি দামে বেচাকেনা হচ্ছে। ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি খরচ বেড়েছে। এতে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়েছে। টাকার মান কমেছে। এর প্রভাবে অন্য পণ্য ও সেবার দামও বেড়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে, ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এদিকে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ডলার মিলছে না। এ কারণে আমদানি খাতেও স্থবিরতা বিরাজ করছে। এদিকে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য ব্যাংকঋণের সুদের হার ক্রমাগতভাবে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর একমাত্র উপাদান সুদহার বৃদ্ধি নয়, আরো অনেক উপায় রয়েছে। তথ্য-উপাত্ত বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নীতি সুদহার বা রেপো রেট আরো ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করায় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে ব্যাংকঋণের সুদ। এতে ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভরশীল ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এলসি খোলার হার কমেছে ৭ শতাংশ আর উৎপাদন কমেছে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। দফায় দফায় ঋণের সুদহার বাড়ানোয় চরম সংকটে পড়েছে বেসরকারি খাত। ফলে ব্যবসা প্রসারসহ থমকে রয়েছে বিনিয়োগ। ব্যবসা ও বিনিয়োগে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে রয়েছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, দেশে এখন বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। বরং ব্যবসায়ীরা টিকে থাকার লড়াই করছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে চলমান অস্থিরতায় অত্যাবশ্যকীয় নিত্যপণ্যের চাহিদা কমে গেছে। এতে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতে ধস নেমেছে। এমন পরিস্থিতিতে ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। সুদহার অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা সম্প্রসারণ ও নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনা আপাতত তুলে রাখছেন অনেক উদ্যোক্তা। সূত্র জানায়, সুদের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোর পথে হাঁটছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরও। এবার ১০০ বেসিস পয়েন্ট বা ১ শতাংশ সুদ বাড়ানো হতে পারে। বিষয়টি আগাম আঁচ করতে পেরে ব্যবসায়ী নেতারা গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে বিদ্যমান সুদহার কমাতে অনুরোধ জানিয়েছেন। দেশের কর্মে নিয়োজিত বা শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। সম্প্রতি ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ( বিবিএস)। সেখানে বলা হয়, কৃষি, সেবা ও শিল্পসব খাতেই কমেছে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী। নারীর চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেশি বেড়েছে। গত বছরের শুরুতে দেশে বেকারের সংখ্যা কম থাকলেও বছর শেষে ধারাবাহিকভাবে এই সংখ্যা বেড়েছে। মূলত জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের প্রভাবে বছরের শেষ সময়ে বেড়েছে বেকারের সংখ্যা। বর্তমানে দেশে মোট বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৬০ হাজার। ২০২৩ সালের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ৭০ হাজার। অপরদিকে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের এডিপি থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারের অংশ থেকে ৩০ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক বরাদ্দ থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত বেশি পরিমাণ অর্থ এডিপি থেকে কাটছাঁট করা হয়নি। শুধু সড়ক-মহাসড়ক বিভাগ থেকেই ১১ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা কাটছাঁটের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ধরা হয় দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। যদিও মন্ত্রণালয়গুলোর চাহিদা আরো প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কম। মূলত প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দে সঠিক পরিকল্পনার অভাব এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অদক্ষতায় প্রতিবছরই এডিপি বাস্তবায়ন কম হচ্ছে। আইএমইডির সর্বশেষ এডিপি বাস্তবায়নের তথ্যে দেখা যায়, ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ১৭.৯৭ শতাংশ। এর চেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য সংস্থাটির ওয়েবসাইটে নেই। সেই আলোকে গত এক যুগে এত কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে ছয় মাসে ৫০ হাজার দুই কোটি টাকা অর্থছাড় হয়েছে, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পর সর্বনিম্ন। গত অর্থবছরে ৬১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা ছাড় হয়েছিল এই সময়ে। শুধু গত ডিসেম্বর মাসে অর্থছাড় হয়েছে ১৫ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা, যেখানে আগের অর্থবছরের ডিসেম্বর মাসে ছাড় হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রকল্পের কাটছাঁটে টাকা বাঁচে ঠিক। তবে সরকারি কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ না হলে রাজস্ব আয় হয় না। আবার মানুষেরও কাজের সুযোগ কমে যায়। এগুলো আবার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। এদিকে সরকারকে ‘ট্রেড অফ’ করতে হবে। অপরদিকে গত বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচারের বিষয়টি এত ব্যাপকভাবে আলোচিত ছিল যে সাধারণ মানুষের কাছে এখন এটি আর অজানা নেই। তবে অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়েছে, শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের কাছেই জানা ছিল না ব্যাপারটা। কারণ সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট আলোচনার সময় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কারা অর্থ পাচার করে, সেই তালিকা তার কাছে নেই। নামগুলো যদি কেউ জানেন, তাহলে যাতে তালিকাটা তাকে দেয়া হয়। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর শ্বেতপত্র কমিটির দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে ২৪০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে পলাতক শেখ হাসিনা সরকার। ব্যক্তির পাশাপাশি কয়েকটি ব্যাবসায়িক গ্রুপেরও টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, একের পর এক গোয়েদা কর্মকর্তা বদলি এবং প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগের কারণে গতি হারিয়েছে পাচারের অর্থ আদায়প্রক্রিয়া। পাচারের অর্থ ফেরত প্রক্রিয়ার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি ইউনিটের কেউই আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি। পাচারের টাকা ফেরানো সময়সাপেক্ষ হলেও তা সম্ভব বলে অর্থনীতিবিদ-ব্যাংকাররা আশা প্রকাশ করেন। বিএফআইইউ সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে আড়াই শতাধিক তদন্ত রিপোর্ট সিআইডি এবং দুদকে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২০টির অডিট রিপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে একটা একটা করে মামলা করা শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। অভিযুক্তদের সবাই বিগত সরকারের আমলে অবৈধ সুবিধা নেয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। খুব শিগগির বাকিগুলোর অডিট সম্পন্ন করে দুদক ও সিআইডিতে পাঠানো হবে বলে নিশ্চিত করেছেন বিএফআইইউর একজন কর্মকর্তা। বিএফআইইউ সূত্রে জানা গেছে, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা হয় পাঁচটি ধাপে। প্রথম ধাপ, অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করা। দ্বিতীয় ধাপে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। তৃতীয় ধাপ, সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে অভিযোগ তদন্ত ও প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা। চতুর্থ ধাপে আদালতে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু এবং শেষ ধাপে অর্থ আদায়। এখনো বেশির ভাগ তদন্ত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এরই মধ্যে অর্থপাচার অনুসন্ধানে শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যরাসহ দেশের আরো ১০টি শিল্প গ্রুপের আর্থিক লেনদেন তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, টাকা পাচার হয়েছে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। মূলত টাকাটা পাচার হয়েছে যে ব্যাংকগুলো রাজনৈতিক প্রভাববলয়ে ছিল, তাদের মাধ্যমে। ওই সব ব্যাংকের ঋণ নিয়ে তা মেরে দিয়েছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নিয়েই এ ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। টাকা কবে ফেরত আসবে, সেটা পরের কথা। তবে তারা এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, আমি মনে করি, তা ঠিক পথেই আছে। তবে টাকা কবে ফেরত আসবে, এটা এখনই বলা মুশকিল। পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সচিব মামুন আল রশিদ বলেন, প্রকল্প পরিচালকদের কখন কোন কাজ করতে হবে সেই পরিকল্পনা দেয়া থাকে। কিন্তু সে অনুযায়ী তারা সময়মতো কাজ করতে পারেন না। বড় সমস্যা হচ্ছে, আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করায় অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি। প্রকল্প বাস্তবায়নে এটি প্রথম বাধা। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, যারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন, সেই প্রকল্প পরিচালকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। তৃতীয়ত, প্রকল্পে কেনাকাটার ক্ষেত্রেও তাদের কারিগরি জ্ঞান খুবই সীমিত। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এমনিতেই ব্যবসায়ীরা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ বেশি সুদ দিয়ে আসছিল। নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে সেটা আরো বেড়ে গেছে। এখন নতুন বিনিয়োগ তো দূরের কথা, টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত ব্যবসায়ীসমাজ। কোথায় কত টাকা খরচ হবে এবং কতটা মুনাফা হতে পারে, সেটা হিসাব করে আমরা বিনিয়োগ করি। কিন্তু মাঝপথে যখন ব্যাংকের সুদহার বেড়ে যায় তখন সব হিসাব ওলটপালট হয়ে যায়। কারণ কিস্তির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং মুনাফার হার কমে আসে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ও সিটিজেনস প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজিএস বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে কোনো সংশোধিত বাজেট দিতে পারেনি। এটা না থাকার কারণে প্রবৃদ্ধির ধারা কমেছে, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ কমেছে এবং কর্মসংস্থানে সমস্যা রয়ে গেছে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধির ধারা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষা যদি নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে যারা সংস্কারকে গতিশীল করতে চান তারা ধৈর্যহারা হয়ে যাবেন। ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেছেন, আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে অসংগত নীতি। প্রতিবছর ব্যবসায়ীরা ভয়ভীতির মধ্যে থাকে যে ট্যাক্স বাড়ল কি কমল। তিনি বলেন, এরপর আছে ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউয়ের হয়রানি। যারা ভালো ট্যাক্স দিচ্ছে তাদের আবার দিচ্ছে। পরের বছর আবার অডিট করছে। লজিস্টিক ঘাটতি রয়েছে। সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে একটা পণ্যের ওপর ডেমারেজ দিয়ে, আরবিটারি ট্যাক্স বসিয়ে দিচ্ছে। ফলে যে দামে পণ্য আনছেন তার দ্বিগুণ বা তিন গুণ দামে কস্ট বেড়ে যাচ্ছে। কে দেখছে? কেউ দেখছে না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যাওয়া উচিত। ব্যবসায়ীরা অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে দেখা করে ঋণের সুদের হার কমানোর জোর দাবি করেছেন। কারণ বাড়তি সুদের কারণে শিল্পের খরচ বেড়ে গেছে। এ কারণে তারা শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতি আগামী দিনে শিল্পকে আরো ঝুঁকিতে ফেলবে। এটি উত্তরণে সরকারের সহযোগিতা চান তারা।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স