ঢাকা , শনিবার, ৩১ মে ২০২৫ , ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
আমতলীতে শহিদ রাষ্টপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকীতে সেচ্ছায় রক্তদান ও আলেচনা সভা মগবাজারে কুপিয়ে ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার ৩ ২ জুন বাজেট ঘোষণা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহত বাংলাদেশের জন্য জাপান গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার : প্রেস সচিব বাড়ছে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা সরকারের আশ্বাসে প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত ডিসেম্বরের আগেই জাতীয় নির্বাচন দেয়া সম্ভব -তারেক রহমান দেশে গণতন্ত্রের নিরাপদ যাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে : খালেদা জিয়া নির্বাচন ইস্যুতে এনসিপির সমালোচনায় ববি হাজ্জাজ আনু মুহাম্মদের স্ট্যাটাসে আসিফ নজরুলের বিস্ময় প্রকাশ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ উত্তাল নগর ভবনে পা রাখলেন ইশরাক আরও উজ্জীবিত আন্দোলনকারীরা সচিবালয়ে কর্মচারীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা প্রশাসনে ১০ মাসেও ফেরেনি শৃঙ্খলা ভারী বৃষ্টিতে বন্যার শঙ্কা শেখ হাসিনার আমলে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে একসঙ্গে কাজ করবে সরকার, ইসি ও জাতিসংঘ মিডিয়ার হেডলাইন দেখে মন্তব্য করা যায় না-ইশরাক ইস্যুতে সিইসি নানামুখী চাপে দেশের অর্থনীতি

১৬ বছরের লড়াই বাবার, ছেলে মুক্ত হলেও মুখটা দেখা হলো না

  • আপলোড সময় : ২৪-০১-২০২৫ ০২:২৯:৫২ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৪-০১-২০২৫ ০২:২৯:৫২ অপরাহ্ন
১৬ বছরের লড়াই বাবার, ছেলে মুক্ত হলেও মুখটা দেখা হলো না
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের নেংটিহারা গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম। স্থানীয় হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে বিডিআর বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) যোগ দেন। তার মা-বাবাও সেদিন স্বস্তির হাসি হেসেছিলেন। কিন্তু ছেলের চাকরিতে যোগ দেওয়ার ২৬ দিনের মাথায় ঢাকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রবিউলের বাবা-মায়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলার আসামি হন রবিউল। সেই মামলায় তার সাজা হয়। তবে তার বাবা আব্দুর রহমানের বিশ্বাস ছিল যেহেতু ছেলে নির্দোষ, সে একদিন মুক্তি পাবেই। জমি-জায়গা বিক্রি করে ছেলের মুক্তির জন্য আদালতের চক্কর কেটেছেন দীর্ঘ দিন। এক সময় ছেলের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
অবশেষে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় ২৫০ জনের জামিন মঞ্জুর করেন কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১। ২৫০ জনের মধ্যে রবিউল ইসলামও রয়েছেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার কারামুক্তি পেয়েছেন রবিউল। তাকে এক পলক দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন তার স্বজনরা। কিন্তু যে বাবা দীর্ঘ ১৬ বছর ছেলের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন তিনি আর নেই। গত ৩ মাস আগে মারা গেছেন। ছেলের জন্য লড়াই করলেও আদরের রবিউলকে শেষবারের মতো দেখে যেতে পারলেন না আব্দুর রহমান।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েকদিন পর সারাদেশে পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় বিস্ফোরক ও হত্যা মামলার নিরপরাধ বিডিআর জোয়ানদেন মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেন তাদের স্বজনেরা। রবিউলের বাবাও ছেলের মুক্তির জন্য অসুস্থ শরীর নিয়েও রাস্তায় নামেন। আশায় বুক বেঁধেছিলেন। তার আশা পূরণ হলেও ছেলেকে আর দেখা হলো না।
পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে প্রশিক্ষণ শেষ করে যোগ দেন পিলখানায় বিডিআর বর্তমানে বিজিবি সদর দপ্তরে। ২৬ দিনের মাথায় ঘটে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা। ওই ঘটনার পর থেকে কারাগারে রয়েছেন রবিউল। প্রথমে একটি মামলায় ৭ বছর সাজাভোগ করে বের হন। তার কিছুদিন পর বিস্ফোরক আইনের আরেকটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠান আদালত। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। আগামীকাল শুক্রবার সকালে বাড়ি ফেরার কথা রয়েছে সাবেক এই বিডিআর জোয়ানের। তার বাড়ি ফেরার আনন্দে আত্মহারা পরিবার-আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের লোকজন।
রবিউলের বড় ভাই শাহাজাহান আলী বলেন, দীর্ঘ আইনি লড়ায়ের পর বেলা সাড়ে ১১টায় আমার ভাই কারাবাস থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভাইকে কাছে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। চাকরি পাওয়ার পর বাবা ও মা খুব খুশি হয়েছিল। কিন্তু এক মাস যেতে না যেতেই সব খুশি ম্লান হয়ে যায়। উপার্জন করে রবিউল পরিবারে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করার কথা ছিল। কিন্তু হয়েছিল সেটার উল্টো। রবিউল কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা খাওয়া খরচ দিতে হতো। কিছুদিন পর পর কাপড়-চোপড় দেওয়া, তার পিছনে খরচ করতে গিয়ে আমাদের প্রায় সব শেষ। আমার ভাইয়ের জীবনটা জেলেই কেটে গেল।
তিনি আরও বলেন, সরকারের কাছে আমার ভাইকে পুনরায় চাকরিতে পুনবর্হাল, একই সঙ্গে দীর্ঘদিন বিনা অপরাধে কারাগারে থাকা এবং তার পেছনে খরচ করতে গিয়ে তার পরিবার যে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
রবিউলের চাচা রেজাউল করিম বলেন, ছেলের জন্য নানা দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে রবিউলের বাবা আব্দুর রহমান গত অক্টোবর মাসে মারা গেছেন। রবিউলের মা সালেহা খাতুন এখনও অসুস্থ, বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার বাবা বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতো।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য