ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫ , ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে চিকিৎসা বন্ধ পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধির রেকর্ড ঠাকুরগাঁও হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া শিশু গাজীপুরে উদ্ধার মাগুরার সেই শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হাসিনাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ডাক্তার দেখাতে না পেরে রোগীদের বিক্ষোভ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অভিমুখী চিকিৎসকদের পদযাত্রায় বাধা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলো পুলিশ যমুনায় যাওয়ার চেষ্টা শিক্ষকদের পুলিশের জলকামান-লাঠিচার্জ এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখতে পারবে না আজ সারাদেশে ২ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির ডাক ইসি কর্মীদের ওআইসিভুক্ত মিশন প্রধানদের কাছে ভোটের প্রস্তুতি তুলে ধরবেন সিইসি প্রক্সি ভোটে বড় সংশয় ‘বিশ্বাস’ পুলিশের জন্য বিপুলসংখ্যক গাড়ি কেনার উদ্যোগ ১৫ বছরের নিচে কেউ হজে যেতে পারবে না আবাসন ব্যবসায়ীদের দুর্দিন কাটছে না যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইউক্রেন আলোচনায় বসবো না যা ইচ্ছা করুন মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানে কিল সুইচ সংঘাত থেকে বাঁচতে লেবাননে পালাচ্ছেন সিরীয়রা

আয়-ব্যয়ের অসঙ্গতিতে নাভিশ্বাস জীবনযাত্রা

  • আপলোড সময় : ২৩-০১-২০২৫ ০৩:৪৭:১৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৩-০১-২০২৫ ০৩:৪৭:১৪ অপরাহ্ন
আয়-ব্যয়ের অসঙ্গতিতে নাভিশ্বাস জীবনযাত্রা
* মূল্যস্ফীতি, ভ্যাট-ট্যাক্স, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, বৈশ্বিক অস্থির অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে লাগামহীন পণ্যমূল্য * চাহিদা মেটাতে পারছে না সাধারণ মানুষ ক্রমে কঠিন হয়ে উঠছে নাগরিক জীবন। রাজধানী ঢাকার জীবনযাত্রায় বিগত কয়েক বছরে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। বছরের শুরুতেই একগাদা খরচের চাপ আসে জগদ্দল পাথরের মতো। বাসাভাড়া, সন্তানের পড়াশোনার খরচ বাড়েই। সঙ্গে যোগ হয় মূল্যস্ফীতি কিংবা ভ্যাট-ট্যাক্স, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়া, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা সংক্রান্ত কারণে অতিরিক্ত পণ্যমূল্য। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না দেশের মানুষ। শহরবাসীর জন্য যা আরও বেশি চাপের। শীত মৌসুমে সবজির দাম নাগালের মধ্যে থাকলেও চাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য পণ্যের দাম চড়া। ভরা মৌসুমেও চালের দাম বেড়েই চলেছে। তেলের দাম বেড়েছে কদিন আগেই। বছরের শুরুতে বাড়িভাড়া, বাচ্চাদের শিক্ষাখাতেও যায় মোটা অংকের টাকা। সব মিলিয়ে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য নেই নগরবাসীর। বাধ্য হয়ে মধ্যবিত্তরাও মুখে মাস্ক পরে দাঁড়াচ্ছেন টিসিবির লাইনে। কাটছাঁট হচ্ছে দৈনন্দিন খাবারের মেন্যু। ফলের দামও অত্যন্ত চড়া। কিনে খাওয়ার সঙ্গতি নেই অধিকাংশ মানুষের। নগরবাসী বলছেন, লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ফলে চাহিদা মেটাতে পারছে না সাধারণ মানুষ। প্রতি কেজি চালের দাম এখন ৫০ থেকে ৮০ টাকা। সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের জন্য চাল কেনাও কঠিন হয়ে পড়েছে। ভাতের পরিবর্তে রুটি খাওয়ার অবস্থাও নেই। আটার দামও চড়া। পণ্যের অত্যধিক মূল্যের কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যাব। এরই মধ্যে সরকার শতাধিক পণ্যে ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অনেক নিত্যপণ্য। কয়েকটি পণ্য-সেবায় শুল্ক-কর বাতিল করলেও অনেকগুলোকে এখনো বিদ্যমান। এতে আরেক দফা দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক পণ্যের দাম এরই মধ্যে বেড়ে গেছে। বেড়েছে শিক্ষা উপকরণের দামও। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ওষুধপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ সবকিছুরই মূল্য সাধারণ মানুষের আওতার বাইরে বলা যায়। এসব কারণে নগরজীবনে টিকে থাকাই এখন বড় লড়াই। নিত্যপণ্যের অর্থ জোগাতে খাবার তালিকা থেকে মাছ-মাংস ছেঁটে ফেলছেন অনেকে। মিরপুরের কালশীতে থাকেন আবির হোসেন। মতিঝিলের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। মাঝে মধ্যে কারওয়ান বাজার থেকে সন্ধ্যার দিকে কম দামের পণ্য (সবজি) কিনে নেন বাসার জন্য। দিন চলে যায়, তবে মাসে জোটে না মাংস। সবশেষ কবে গরুর মাংস কিনেছেন তা ভুলেই গেছেন। আবির বলেন, এখন যা আয় সে তুলনায় ব্যয় অনেক বেশি। খরচ বাঁচাতে দূরে কালশীতে বাসা নিয়েছি, একটা সরকারি স্কুলে মেয়েটা পড়ছে। এখন মেট্রোরেলের কারণে বাসাভাড়া বেড়েছে, বাড়তি খরচ যাচ্ছে সেখানে। স্কুলের খরচ আর চাল-ডাল কিনতে গিয়ে মাসের টাকা শেষ। গরু-মুরগির মাংস আমার কাছে বিলাসীপণ্য। গরুর মাংস কবে কিনেছি মনে নেই। সব খরচ বাড়লেও বেতন তো বাড়ে না। বাসাবোর মাংস বিক্রেতা সুজন বলেন, আমরা একসময় গরুর মাংস বিক্রি করেছি অনেক। সাধারণত শীতকালে গরু ও হাঁসের মাংসের চাহিদা বাড়ে। এখন তা কমে গেছে। দুটি গরু বিক্রি করেও শেষ করতে পারি না। মাংস বিক্রি না হলে শুকিয়ে যায়। এতে ওজনও কমে যায়। এখন আমরা লাভেও নেই আবার লোকসানেও নেই। একই অবস্থার কথা জানান মুরগি বিক্রেতারা। এ বিষয়ে খিলগাঁও এলাকার ব্যবসায়ী বোরহান বলেন, আমাদের দোকানে মুরগি বিক্রি আগের মতো নেই। এখন অর্ধেকে নেমেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, তিন মাসের ব্যবধানে মাংস উৎপাদন বা ভোগ কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। গত বছরের জুলাইয়ে দেশে মাংস উৎপাদন ছিল ১২ লাখ ২৫ হাজার টন, আগস্টে ৬ লাখ ৪১ হাজার টনে। সেপ্টেম্বরে মাংস উৎপাদন হয়েছিল ৬ লাখ ৩৯ হাজার টন। অক্টোবরেও নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত ছিল। এ মাসে মাংস উৎপাদন হয় মাত্র ছয় লাখ টন। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে দেশে মোট মাংস উৎপাদন বা ভোগ অর্ধেকে নেমেছে। পরের মাসগুলোর হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, পণ্যের দামের কারণে আমিষ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নিম্নবিত্ত মানুষ। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষও বিপাকে আছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। বাজার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ফলমূলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা, ক্রেতার সংকট তৈরি হয়েছে দোকানে। মগবাজার ওয়ারলেস এলাকায় আক্তারুজ্জামানের ফলের দোকান বেশ পুরোনো। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেচা-বিক্রি করেন। আক্তারুজ্জামান বলেন, আমার দোকানে সব ধরনের ক্রেতা আসে। এক পিস ফল থেকে কেজি ধরে ক্রেতারা নেন। তবে সম্প্রতি সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ফলের প্রতি চাহিদা কমে গেছে। এখন মানুষ চাল-ডাল কিনবে না ফল খাবে। দুদিন পরপর আড়ত থেকে ফল এনে বিক্রি করতাম। এখন সপ্তাহে একবার যাই। দোকানির কথায় সায় দিলেন ক্রেতা সুলাইমান। তিনি বলেন, আগে ফল কিনতাম পরিবারের সবার জন্য, এখন কিনি শুধু বাচ্চার জন্য। এখন অন্য সব পণ্যের সঙ্গে ফলের দামও বাড়তি। টিসিবির ডিলার হাবিবুর রহমান বলেন, ট্রাকসেলে ৩৫০ জনের জন্য পণ্য থাকে, সে তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা বেশি। এতে সবাইকে পণ্য দেয়া সম্ভব হয় না। অনেক ভালো ভালো (মধ্যবিত্ত পরিবার) মানুষ আসেন, যারা মুখ ঢেকে পণ্য নেন। মুখ আড়ালে রাখেন, দেখেই বুঝতে পারি কষ্টটা কত। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে আসছে। এটার মূল কারণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। খরচ বাঁচাতে খাবারের তালিকায় পরিবর্তন আনছেন সাধারণ মানুষ। সব কিছুর বাড়তি দামের ফলে অনিবার্যভাবে খাবারের মানে অবনমন ঘটেছে। মানুষকে সুস্থ থাকতে প্রতিদিন যে পরিমাণ সুষম খাবার খেতে হয় সেসব উপাদানে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা স্বাস্থ্যকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। তিনি আরও বলেন, মানুষের শরীরে যে পরিমাণ প্রোটিনের দরকার সেটি সে নিতে পারছেন না, স্নেহজাতীয় পদার্থের দরকার সেটি পাচ্ছে না, শাক-সবজি বা ফলমূলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এসব কারণে ব্যক্তির শরীরে পুষ্টিহীনতা দেখা দিচ্ছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এ কারণে পরিশ্রম করার ক্ষমতা কমে যায়, জাতীয় শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এটি জাতীয় উৎপাদন এবং জাতীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স