ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকার সংস্কার কমিশন করলেও নদীর ক্ষেত্রে প্রতিফলন নেই-আনু মুহাম্মদ বাড্ডায় কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষে নিহত ১ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল খরচেও কমানো যাচ্ছে না নানামুখী আতঙ্ক রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা সেই শিশু আছিয়া না ফেরার দেশে ধর্ষণে আতঙ্ক -উদ্বেগ ভারতকে অযাচিত বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বলল ঢাকা প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে যাচ্ছেন ২৬ মার্চ সালমান এফ রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা খরায় পুড়ছে চা-বাগান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ইফতারিতে দই-চিড়ার জাদু একরাতে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা এলাকায় আতঙ্ক স্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, সংকট সয়াবিনে মামলা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ ছেঁউড়িয়ায় শুরু লালন স্মরণোৎসব দোহাজারীতে বাসচাপায় ৩ জন নিহত হেনস্তার পর ছাত্রীকে ফেলে দিলো দুর্বৃত্তরা ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ভ্যাট দেয় না বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন

জটিল হচ্ছে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি

  • আপলোড সময় : ২৩-০১-২০২৫ ০৩:০৫:৪০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৩-০১-২০২৫ ০৩:০৫:৪০ অপরাহ্ন
জটিল হচ্ছে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি
* রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন করবে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা * রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে ইউএনএইচসিআর দীর্ঘদিন থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক চলছে। এর মধ্যে সম্প্রতি সীমান্ত-সংলগ্ন মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটার এলাকার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান বিদ্রোহীরা। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের মংডু শহর দখল করেছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে এতদিন দেনদরবার চলেছে। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, তার সংস্থা রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর গ্র্যান্ডি এই মন্তব্য করেন। প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বিশেষ করে এই বছরের শেষ দিকে একটি বড় বৈশ্বিক সম্মেলন আয়োজনের জন্য তার সহায়তা চাওয়ার পর গ্র্যান্ডি বলেন, ‘আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’ অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আপনার কণ্ঠস্বর আরো সোচ্চার হতে হবে। অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের ওপর সারা বিশ্বের মনোযোগ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ শরণার্থীর আগমন বাংলাদেশের ওপর আরো বোঝা হয়ে উঠেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। তারা আরো রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল তৈরির জন্য উন্নত উপকরণ ব্যবহার করার অনুমতি দেয়ার জন্য গ্র্যান্ডি প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। পূর্বে, রোহিঙ্গাদের কেবল বাঁশ এবং ত্রিপল দিয়ে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির অনুমতি দেয়া হত। বৈঠকে তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মানবিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন। সেখানে এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি রোহিঙ্গা সংকট অবসানে উচ্চ পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন এবং তিনি সব দেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করছেন। অপরদিকে, গত মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার স্টাবের সঙ্গে বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টকে অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত সংস্কার কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত করেন। এ সময় আলেক্সান্ডার স্টাব বলেন, ‘আমি আপনাদের জন্য শুভকামনা জানাই।’ ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের এমন পৃথিবী দরকার যা হবে আইনের শাসনভিত্তিক। প্রেসিডেন্ট স্টাব গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।’ প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে ব্যাংকিং খাতে বিপুল পরিমাণ লুটপাট ও দুর্নীতি হয়েছে। প্রায় ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যাংক থেকে লুট করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করবে, যার মাধ্যমে শরণার্থীদের দুর্দশা আবারও বৈশ্বিক আলোচনায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’ এদিকে, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ ও থাই প্রধানমন্ত্রী শিনাওয়াত্রা, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস, জার্মানির হেড অব দ্য ফেডারেল চ্যান্সেলারি এন্ড ফেডারেল মিনিস্টার ফর স্পেশ্যাল টাস্ক ওলফগ্যাং স্মিত, মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফ হিউসজেন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস-হোর্তা, জার্মানের চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষক বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো আরাকান আর্মি দখলে নেয়ায় নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণ বেশ কঠিন হবে। তারা মনে করছেন, প্রথমত এখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জরুরি হলো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো। সীমান্তে সতর্ক থাকা। এটাকে শুধু ঢাকা-নেপিদো সমস্যা হিসেবে না দেখে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংকট হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উপস্থাপন করতে হবে। বিষয়টিতে মনোযোগ দিতে হবে। কারণ আগে ছিল একপক্ষ। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুব ভালো না গেলেও তারা সরকার হিসেবে স্বীকৃত। আর এখন হলো দু’টি পক্ষ। এর মধ্যে আরকান বিদ্রোহী বাহিনী অনির্বাচিত এবং রোহিঙ্গা ইস্যুটি আরাকান বিদ্রোহীদের দখল করা অংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মত, আরাকান বিদ্রোহীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নেতিবাচক। ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহীদের আক্রমণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় তাদের শত্রুপক্ষ। তখন বাংলাদেশ সেই শত্রুপক্ষকে আশ্রয় দিয়েছিল। সেই দলে রোহিঙ্গা নেতারাও ছিলেন। তাছাড়া বিদ্রোহীরা রোহিঙ্গামুক্ত রাখাইন চায়। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সরকার উভয়পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে সমস্যার সমাধান করতে চায় বাংলাদেশ। পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে ভারত ও চীনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে ঢাকা। বিশ্লেষকরা আরও বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে জটিল রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে আরাকান আর্মির সঙ্গে অর্থবহ আলোচনায় বসতে হবে। কারণ তারা এখন দক্ষিণ রাখাইনের গওয়া, তাউংগুপ এবং আন শহরের দখল নেয়ার জন্য লড়াই করছে। এরই মধ্যে আন শহরের বেশিরভাগ অংশ এবং ৩০টিরও বেশি জান্তা ঘাঁটি ও অবস্থান দখল করেছে তারা। সরকারের পক্ষ থেকে এর মধ্যে গত কয়েক মাসে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা দেশে প্রবেশের কথা বলা হলেও এটা লক্ষাধিক হবে। বিশ্লেষকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, শুরু থেকেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে মিয়ানমারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি। অথচ বাংলাদেশের সংকটের তালিকায় বেশ ওপরই জায়গা করে নেবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি। এখন বড় বিষয় হবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক পারভেজ করিম আব্বাসি বলেন, ‘আরাকান বিদ্রোহীদের সঙ্গে সম্পর্ক অন্যভাবে তৈরি করতে হবে। এখনই তাদের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে যোগাযোগ স্থাপনের উপযুক্ত সময় নয়। তবে আমাদের সামরিক বিকল্পগুলোও উন্মুক্ত রাখা উচিত। ঢাকা যদি আরাকান আর্মির মতো বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে না পারে, তাহলে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সম্ভাব্য সব অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল খুঁজে বের করারও পরামর্শ দেন এ বিশ্লেষক। রাখাইনে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বিদ্রোহের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে বলেও সতর্কতা উচ্চারণ করেন তিনি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স