ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকারি চাকরি আইন বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভে কর্মচারীরা ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড ৬ জনের যাবজ্জীবন বহাল কালো টাকা সাদা করার বিধান সংস্কারের সম্পূর্ণ বিপরীত-টিআইবি দূরত্ব ঘুচিয়ে চমৎকার জুলাই সনদ তৈরির প্রত্যাশা প্রধান উপদেষ্টার সারাদেশে একযোগে ২৫২ বিচারককে বদলি টেকসই অর্থনীতির বাজেট এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বঞ্চনার গল্প যেন অরণ্যেরোদন চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলে ৩ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিলেন কর্মচারীরা রাষ্ট্র সংস্কারে উপেক্ষিত নারী তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু-আইন উপদেষ্টা শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি প্রথমবারের মতো বিটিভির স্টুডিও থেকে হচ্ছে বাজেট ঘোষণা ঘাটতি কমানোর লক্ষ্য নিয়ে নতুন বাজেট আজ দুধ শুধু পণ্য নয় এটি সংস্কৃতির অংশÑ মৎস্য উপদেষ্টা রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টি পাহাড় ধসের ঝুঁকি সিলেটে টিলা ধসে একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু বিজিএমইএ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ‘ফোরাম’ প্যানেল বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ জাপা চেয়ারম্যানসহ ২৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা

যে কারণে কিছু দেশ নিজেদের মুদ্রার দাম কমিয়ে রাখতে চায়

  • আপলোড সময় : ১১-০৫-২০২৪ ১০:৪৭:২১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১১-০৫-২০২৪ ১০:৪৭:২১ অপরাহ্ন
যে কারণে কিছু দেশ নিজেদের মুদ্রার দাম কমিয়ে রাখতে চায় যে কারণে কিছু দেশ নিজেদের মুদ্রার দাম কমিয়ে রাখতে চায়
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমে গেছেমুদ্রার এমন দরপতন বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর হয়ে থাকে বিভিন্ন সময়। সে সব খবর সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তাও বাড়ায়। গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ১১৭ টাকায় মার্কিন ডলার ক্রয় বিক্রয় করার নির্দেশ দেয়। ক্রলিং পেগ হলো মুদ্রা বিনিময়ের এমন পদ্ধতি যেখানে মুদ্রার দরের একটি সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা থাকে। ফলে তা একবারেই খুব বেশি বাড়তে বা কমতেও পারবে না। বাংলাদেশে বুধবার সকালেও ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১০ টাকা। অর্থা, ক্রলিং পেগ পদ্ধতির কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন ঘটেছে। কিন্তু সব সময় মুদ্রার দাম পড়ে যাওয়া দুশ্চিন্তার কারণ নাও হতে পারে। কোনও কোনও দেশ অর্থনৈতিক লাভের জন্যও নিজেদের মুদ্রার দাম কমিয়ে দেয়। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি কারণেও কোনও দেশ তার মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটাতে পারে। অর্থনীতি মুদ্রা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য, গবেষণা এবং সংবাদমাধ্যম ঘেঁটে এর তিনটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা যায়। বিশ্ববাজার প্রতিযোগিতামূলক। সেখানে একটি দেশের পণ্যের সাথে অন্য দেশগুলোর পণ্যের বাজার দখলের প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। আমেরিকার গাড়ি নির্মাতাদের যেমন প্রতিযোগিতা করতে হয় ইউরোপ জাপানের সাথে। অর্থ বিনিয়োগ সংক্রান্ত সংবাদমাধ্যম ইনভেস্টোপিডিয়াতে এমন উদাহরণ টেনে বলা হয়েছে, ডলারের বিপরীতে ইউরো বা জাপানি ইয়েনের দরপতন হলে, ইউরোপ বা জাপানে প্রস্তুতকৃত গাড়ির দাম ডলারের মাপকাঠিতে কমে যাবে। অন্যদিকে, যে দেশের মুদ্রা বেশি শক্তিশালী সে দেশ থেকে রফতানিকৃত জিনিসের দাম অন্য দেশের বাজারে বেশি হয়। যেমন, ডলার অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী বলে যুক্তরাষ্ট্রে ৎপাদিত পণ্য অবমূল্যায়িত মুদ্রায় কিনতে গেলে সেটি অধিকতর ব্যয়বহুল হবে।
ডলার। তবে দুটি কারণে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। প্রথমত, বিশ্বব্যাপী কোনও দেশের পণ্যের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে সে সবের মূল্যও বাড়তে শুরু করবে। অবমূল্যায়নের প্রাথমিক উপকারটুকু আর মিলবে না তখন। দ্বিতীয়টি হল, অন্যান্য দেশগুলি যখন এই প্রভাবটি টের পাবে তারাও নিজেদের মুদ্রামান নিচে নামাতে চেষ্টা করতে পারে। ফলে তখন একটিওয়্যার অফ কারেন্সিবামুদ্রা-যুদ্ধদেখা দিতে পারে এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেই তা অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতির দিকে নিয়ে যেতে পারে? কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র চীন এমনই এক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল বলে সংবাদ প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন চীনকেকারেন্সি ম্যানিপুলেটরহিসেবে অভিহিত করত। বাংলায় এর মানে দাঁড়ায়, যে মুদ্রা নিয়ে কপটতা বা ভণ্ডামির আশ্রয় নেয়। তাদের অভিযোগ ছিল, চীন ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের ইউয়ানের দাম কমিয়ে দেয় যাতে বিদেশি ক্রেতারা একই পরিমাণ ডলার দিয়ে আগের চেয়ে বেশি পণ্য কিনতে পারেন। এতে ক্রেতাদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করা যায়। রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ভিয়েতনামকেও ম্যানিপুলেটর হিসেবে অভিহিত করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। তারা তখন শস্তিমূলক শুল্ক আরোপের হুমকি দেয় দেশটির ওপর। পরে ভিয়েতনাম বেপরোয়া অবমূল্যায়ন থেকে বিরত থাকার চুক্তি করে মার্কিন সরকারের অর্থ বিভাগের সাথে। চুক্তিতে রফতানি সুবিধা পেতে ইচ্ছাকৃতভাবে ভিয়েতনামি ডংকে দুর্বল না করার প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছিল। ৎকালীন মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন এবং স্টেট ব্যাংক অব ভিয়েতনামের গভর্নর নগুয়েন থি হং-এর যৌথ বিবৃতিতে এই চুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়। এই ধরনের পদক্ষেপে রফতানি ৎসাহিত এবং আমদানি নিরুৎসাহিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দেশের রফতানি বাড়বে এবং আমদানি কমবে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস পায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ্ উদ্দিন আহমেদ বলেন, যখন কোনও দেশের ফরেন কারেন্সি কম আসে, সেই তুলনায় দেশ থেকে বিদেশি মুদ্রা বেশি বেরিয়ে যায় তখন ডিভ্যালুয়েশন করতে হয়। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়া, আমদানি বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে সাধারণত বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দেখা দেয় বলে জানান মি. আহমেদ। এতে বাণিজ্য ঘাটতিও প্রকট হয়। টানা ঘাটতি অবশ্য খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ আরও অনেক দেশই বছরের পর বছর ধরে ভারসাম্যহীন বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাণিজ্য ঘাটতি হাজার কোটি ডলারের ওপরে ঘোরাফেরা করেছে। ইনভেস্টোপিডিয়া জানাচ্ছে, অর্থনীতির তত্ত্ব অনুসারে টানা ঘাটতি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর। এটি দেশকে বিপজ্জনক ঋণ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। পঙ্গু করে দিতে পারে একটি অর্থনীতিকে।হোম কারেন্সি বা নিজস্ব মুদ্রার অবমূল্যায়ন লেনদেনের ভারসাম্য ঠিক রেখে এই ঘাটতি কমাতে সাহায্য করতে পারে। যদিও এই যুক্তির একটি নেতিবাচক দিকও আছে। দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন বিদেশি ঋণের বোঝাও বাড়িয়ে দেয়। ইনভেস্টোপিডিয়া বলছে, ভারত, আর্জেন্টিনা বা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে ডলার বা ইউরোতে ঋণ শোধ দিতে হয় তাদের জন্য এটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ব্লগের এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, যদি কোথাও ভিন্ন ভিন্ন দামে ডলার বেচাকেনা হয় তাহলে বিনিময় হারের সেই ব্যবধানকে একত্রিত করার দুটি পন্থা রয়েছে।হোয়াট কান্ট্রিজ নিড টু কনসিডার হোয়েন ডুয়াল এক্সচেঞ্জ রেটস আর প্রবলেমবা দ্বৈত বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে করণীয় নিয়ে লেখা ওই প্রবন্ধটি ২০২১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে উল্লিখিত পন্থাদুটির প্রথমটি এক দফায় বা বিগ ব্যাং পদ্ধতিতে এবং দ্বিতীয়টি ধাপে ধাপে বা ধীরে ধীরে অবমূল্যায়ন। বিগ ব্যাং পদ্ধতিতে আকস্মিক অবমূল্যায়ন বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ব্লগের ওই প্রবন্ধে সতর্ক করা হয়েছে। তখন, রফতানি করে স্থানীয় মুদ্রায় বেশি অর্থ উপার্জন করা যাবে। কিন্তু আমদানি হয়ে যাবে ব্যয়বহুল। কারণ, সমপরিমাণ ডলারের জন্য আগের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে। এটি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের খরচ হুট করে বাড়িয়ে দেয়। ফলে আন্তর্জাতিক ঋণ শোধে অসুবিধা হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের ব্লগে আরো বলা হয়, যদি দেশি ব্যাংকগুলো তাদের দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে খুব বেশি ডলার-নির্ভর হয়, শেষে তা একটি ব্যাঙ্কিং সংকটের দিকে নিয়েও যেতে পারে। কারণ তখন তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে। বিগ ব্যাং পদ্ধতিতে অবমূল্যায়নে একবারেই মুদ্রার মানে পরিবর্তন ঘটে যায়। বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখানে জোর করে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৭৯ বা ৮০তে ধরে রাখা হয়েছিল। বাংলাদেশের ব্যাংকের উচিত ছিল কম দামে ডলার বিক্রি না করে বাজারকে অনুসরণ করেডিভ্যালুকরা।” “তা না করে অল্প দিনের মধ্যেই একশোর কোটা পেরিয়ে যাওয়ায় অর্থনীতি সামাল দিতে বেগ পেতে হচ্ছে।তবে, ধরনের অবমূল্যায়নের মূল সুবিধা হলো একবারেই মুদ্রার মানে পরিবর্তন ঘটে যায়। ফলে বারবার পরিবর্তনের অস্থিরতা দেখা দেয় না। ক্রমান্বয়ে অবমূল্যায়নের পদ্ধতি ক্রমবর্ধমান হারে পরিবর্তন আনে। উচ্চ স্তরের বৈদেশিক ঋণ বা অভ্যন্তরীণ খরচের বড় অংশ আমদানিতে ব্যয় হলে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইনভেস্টোপিডিয়ায়। নইলে একবারে ধাক্কাটা সামলানো কঠিন হয়ে যায়।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য