শেখ দিনু আহমেদ, যশোর
যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়নের জঙ্গলবাধাল গ্রামের সুদে ব্যবসায়ী সামাদ শেখ ও তার স্ত্রী কাকলীর ফাঁদে পড়ে নিস্ব হচ্ছে এলাকার সহজ- সরল সাধারণ মানুষ। সুদের টাকা সময় মতো পরিশোধ করতে না পারায় অনেকেই বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কখনো সাদা কাগজে, কখনো অলিখিত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর/টিপসই রেখে টাকা দেয়ার পর নানাভাবে ফাঁদে ফেলার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা ।
ভুক্তভোগীরা জানান, সময় মতো সুদের টাকা পরিশোধ না করতে পারলে কারও কারও জমি রেজিস্ট্রি করেও নেয় এ অমানুষ সুদখোর সামাদ শেখ। বসুন্দিয়া ইউনিয়নের জঙ্গলবাধালসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। অনেকেই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘর ফেলে রাতের আঁধারে স্ত্রী, ছেলেমেয়ে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেকেই সুদে ব্যবসায়ী সামাদ শেখের হুমকির কারণে থানায় অভিযোগ করারও সাহস পাচ্ছেন না। তবে যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেছেন, অভিযোগ পেলে এসব অবৈধ ব্যবসায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যবসা টিকিয়ে রাখা ও জীবিকার প্রয়োজনে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নেন অভাব অনটনে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক, দিনমজুর, শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষ। এসব মানুষদের কষ্টের আয়ের প্রায় সবটাই চলে যায় সুদে (দাদন) ব্যবসায়ী সামাদ শেখের পকেটে।
একাধিক সুদে কারবারি বলেন, আমরা কাউকে জোর করে টাকা দিই না। তারা নিজেদের প্রয়োজনে আমাদের কাছে এসে সুদে টাকা নেন। সারা দেশের মতো একই নিয়মে আমরাও টাকা আদায় করি। এদিকে ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, বিপদে পড়ে চড়া সুদে নগদ টাকা নিতে বাধ্য হই। এভাবে সারা মাসের উপার্জনের অর্ধেক টাকা তাদের পকেটে চলে যায়। দিনরাত পরিশ্রম করেও সংসারের অভাব-অনাটন মেটাতে পারি না। আবার সময় মতো টাকা দিতে না পারলে সুদের টাকাও বাড়তে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বসুন্দিয়ার জঙ্গলবাধাল গ্রামের জাহিদ, মনিরুল, আসাদুল, জরিনা বেগম, ফকির আলীর মেয়ে ডলি খাতুন ও মৃত পাচোর ছেলে জয়দেব, সুদখোর সামাদ শেখের কাছ থেকে ২ কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তা বেড়ে এখন দেড় লাখ টাকার বেশি হওয়ায় সুদের টাকা দিতে না পেড়ে সামাদ শেখের অত্যাচারে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ব্যাপারে সুদখোর সামাদ শেখের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান শুধু আমি না, আরও অনেকেই এ ব্যবসা করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বাবুলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, প্রথমে আমি সামাদ শেখের কাছ থেকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা সুদে নিই। প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে সুদ দিই। এক সময়ে এসে পুরো ৫০ হাজার টাকা আমি পরিশোধ করে দিই। কিন্তু স্বৈরাচর সরকার পতন হওয়ার পর আওয়ামী সুদখোর সামাদ শেখ খোলস পাল্টে এখন ডিগবাজি দিয়ে বিএনপি সাজার চেষ্টা করছেন। এদিক সুদে টাকা না পেয়ে সুদখোর সামাদ শেখ ভুক্তভোগী বাবুলের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা করে তাকে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা যশোর জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata