
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর
- আপলোড সময় : ২০-০১-২০২৫ ০৩:২১:৫০ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২০-০১-২০২৫ ০৩:২১:৫০ অপরাহ্ন


* তিন জিম্মির তালিকা হস্তান্তর হামাসের
* বিলম্ব হয়েছে ৩ ঘণ্টা
* যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আগে ইসরাইলি হামলায় ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত
গাজায় অবশেষে কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। প্রায় তিন ঘণ্টা বিলম্বের পর স্থানীয় সময় গতকাল রোববার বেলা সোয়া ১১টায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মধ্যস্থতাকারী কাতারও। এক বিবৃতিতে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারী ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ঘোষণা দেয়ার আগে, এই চুক্তির অংশ হিসেবে মুক্তির জন্য বন্দিদের নামের তালিকা পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রথম ধাপে যে তিন নারী মুক্তি পেতে যাচ্ছেন তাদের পরিবারকে এ বিষয়ে অবহিত করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানিয়েছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তার আগে প্রথম ধাপে মুক্তি দেয়া হবে এমন তিন জিম্মির তালিকা ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করে হামাস। এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ধাপে মুক্তি দেয়া হবে এমন তিনি নারী জিম্মির নাম হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা হলেন-রোমি গোনেন, এমিলি দামারি এবং ডোরন স্টেইনব্রেচার। হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী যেকোনো মুহূর্তে জিম্মিদের তালিকা দেয়া হবে। ‘কারিগরি ত্রুটি’ এবং অব্যাহত বোমা হামলার কারণে তা বিলম্বিত হয়েছে। রোববার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বহুল প্রত্যাশিত গাজা যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, হামাস জিম্মিদের তালিকা দিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তুলে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে না বলে জানায় ইসরাইল। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি এক বিবৃতিতে বলেন, যতক্ষণ না হামাস যুদ্ধবিরতির শর্ত পূরণ করতে পারছে, ততক্ষণ গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হবে না। এর আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তি দেয়া হবে এমন জিম্মিদের তালিকা না দেয়া পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে না। প্রায় তিনঘণ্টা বিলম্বের পর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মধ্য দিয়ে প্রায় ১৫ মাসের যুদ্ধে সাময়িক বিরতি নিশ্চিত হলো। এই চুক্তির ফলে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা কিছুটা কমবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। চুক্তি কার্যকর হওয়ার আধাঘণ্টা আগে থেকে নতুন কোনও হামলার খবর পাওয়া যায়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সময় ভোর সাড়ে ছটায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তখন বরং ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর আন্তর্জাতিক সময় সোয়া নটায় অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার থেকে পদত্যাগ করেছেন কট্টর ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির। এছাড়া তার দল ওজমা ইয়েহুদিতের আরও দুই মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এর ফলে নেতানিয়াহু রাজনৈতিকভাবে বিপাকে পড়তে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরোধিতা করে আসছিলেন বেন গভির। সেই সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে পদত্যাগ করবেন বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে যুদ্ধের অবসানে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর প্রথম দফায় ত্রাণবাহী কয়েকটি ট্রাক গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়-বিষয়ক কার্যালয় (ওসিএইচএ) বলছে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর রোববার মানবিক সহায়তা বহনকারী ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘের দাতব্য কর্মকর্তা ও ফিলিস্তিনে নিযুক্ত ওসিএইচএর অন্তর্বর্তী প্রধান জোনাথন হুইটাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার কয়েক মিনিট পরই ত্রাণবাহী প্রথম ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে গাজা উপত্যকাজুড়ে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অংশীদাররা ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ত্রাণবাহী ট্রাকের বহর গাজার কোথায় প্রবেশ করেছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানায়নি জাতিসংঘ। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিসরের একটি সূত্র বলেছে, গাজার মধ্যাঞ্চলীয় কেরাম শালোম এবং আল-ওগায় অন্তত ১৯৭টি ত্রাণবাহী ট্রাক ও জ্বালানিবাহী পাঁচটি ট্রাক প্রবেশ করেছে। অপরদিকে এদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের ঘোষণার পরপরই বাস্ত্যচ্যুত হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। যদিও ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় গাজা উপত্যকা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অসংখ্য ফিলিস্তিনির বাড়িঘরের কোনও অস্তিত্বই নেই। তারপরও নিজ এলাকায় মরিয়া হয়ে ফিরতে শুরু করেছেন ফিলিস্তিনিরা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে অনুপ্রবেশ করে হামাস হামলা চালানোর পর থেকে এই যুদ্ধ শুরু হয়। হামলায় অন্তত এক হাজার ২০০ নাগরিক নিহত ও ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি করে আসছিলো ইসরাইল। এরপরই হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অভিপ্রায়ে গাজার সামরিক আগ্রাসন শুরু করে তেল আবিব। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে গাজা স্বাস্থ্য অধিদফতর দাবি করে আসছে। এই যুদ্ধের প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। গাজা যুদ্ধের রেশ ধরে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথি ও ইরানের সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে ইসরাইল।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ