জীবনের ‘চাকা ঘোরাতে’ এক বয়োবৃদ্ধের সংগ্রাম
- আপলোড সময় : ২৪-১২-২০২৪ ১১:২৮:৩৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৪-১২-২০২৪ ১১:২৮:৩৪ পূর্বাহ্ন
নিজের জীবনের চাকা ঘোরাতে কঠিন সংগ্রামে নেমেছেন একজন বয়োবৃদ্ধ। গতকাল সোমবার বেলা ১টা ২৫। রাজধানীর সার্কিট হাউজ সড়ক দিয়ে সাঁই সাঁই ছুটছে যানবাহন। এই সড়কে বাস-রিকশা চলাচল অনেকটা বন্ধ। তার মধ্যেও পুলিশের চোখ এড়িয়ে কিছু রিকশা দ্রুত চলে যায়। রিকশা পাওয়া যেতে পারে, আবার নাও মিলতে পারে-এমনটা ভেবে সড়কের পূর্ব পাশে ফুটপাতে অপেক্ষা করছি। হঠাৎ অফিসার্স ক্লাবের পাশের ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে ধীরগতিতে রিকশা আসতে দেখে আশ্বান্বিত হলাম। কাছাকাছি আসার পর চালককে দেখে অনেকটা স্তম্ভিত হয়ে পড়লাম। কারণ, ব্যস্ত এই সড়কে যিনি রিকশা চালাচ্ছেন তার বয়স ৮০ বছরের বেশি। একদিকে বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন, অন্যদিকে বাম হাত অনেকটা শক্তিহীন হওয়ায় ডান হাতে তাকে রিকশার হাতল ধরে সামনে এগোতে হচ্ছে। পায়ে শক্তি কম থাকায় প্যাডেল পুরোটা ঘোরাতেও পারছেন এই বয়োবৃদ্ধ মানুষটি। প্রথমে চিন্তা ছিল কাছে এলে রিকশা থামিয়ে এই বয়স এবং শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও তার জীবন সংগ্রামের কথাগুলো শুনে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশের। কিন্তু সেটা আর হলো না। কারণ একাধিকবার উচ্চস্বরে ডাকার পরও কোনো সাড়া মেলেনি। বোঝা গেল কানেও শুনতে পান না। যে কারণে রিকশা না থামিয়ে ধীরগতিতে কাকরাইল মোড়ের দিকে চলতে থাকলেন নাম-পরিচয় না জানা মানুষটি। অগত্যা হাঁটা শুরু করি তার পেছনে পেছনে। যে করেই হোক তার কাছে যেতে চাই। বিস্তারিত জানতে চাই। আমি পায়ে হাঁটছি আর তিনি রিকশা নিয়ে সামনে এগোচ্ছেন। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যারাই তাকে দেখছেন সবাই আফসোস করছিলেন। এই বয়সেও তার এমন ঝুঁকি নিয়ে রিকশা চালাতে দেখে অনেকেই মন খারাপ করছিলেন। হাঁটতে থাকা এক তরুণ বলছিলেন-এই মানুষটাও হয়ত কারও বাবা। কত কষ্টের তার জীবন! প্রধান বিচারপতি ভবনের সামনে বসা তিন পরিচ্ছন্নতাকর্মীও রিকশা চালককে নিয়ে কথা বলছেন। একজন বলে উঠলেন, কী করবে মুরব্বি। যেমনে হোক পেট তো চালাতে হবে! রাস্তা ফাঁকা থাকায় ততক্ষণে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে পৌঁছে যান রিকশা চালক। পরে রাজমনি ঈশাখা হোটেলের সামনে সিগন্যালে তার নাগাল পাওয়া গেল। কিন্তু কাছে গিয়ে কথা বলার পর তার থেকে কোনো জবাব মিলছে না। কোথায় যাবেন, রিকশার গ্যারেজ কোথায়, দুপুরে খেয়েছেন কি না- এমন প্রশ্ন করলে শুধু হাতের ইশারায় সামনে যাবেন, এমনটা জানান। তখন পাশ থেকে আরেক রিকশাচালক এগিয়ে এলেন। জানালেন কিছুদিন ধরে তাকে বেইলি রোড, কাকরাইল এ এলাকায় তারা দেখছেন। রিকশায় যাত্রী ওঠে না। তবে অনেকে তাকে দেখে মায়া করে টাকা-পয়সা যা দেন, তা দিয়ে চলেন। এর বাইরে নাম-পরিচয় নিয়ে কিছুই বলতে পারেননি এই রিকশাচালক। তবে জানালেন-এই মানুষটির বাসা কামরাঙ্গীরচর। প্রতিদিন ওখান থেকে রিকশা নিয়ে এভাবে ধীরে ধীরে আসেন। শরীর বেশি খারাপ লাগলে কোথাও রিকশা নিয়ে বসে বিশ্রাম নেন। এ রিকশা চালক জানান, তার ছেলে আছে। স্ত্রীও আছেন। কিন্তু স্ত্রী অসুস্থ। এর বাইরে আর কিছু জানাতে পারেননি তিনি। অবশ্য তার দেয়া এসব তথ্যের সত্যতাও যাচাই করা যায়নি। পরে কাকরাইল মোড়ে একটি হোটেলে দুপুরে খাবারের জন্য জোর করলেও তিনি রিকশা চুরির ভয়ে নামতে রাজি হননি। ব্যস্ত এ সড়কে তার সঙ্গে কথা বলার দৃশ্য দেখে একজন আর্থিক সহযোগিতা করেন। ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে আমিও কিছু সহযোগিতা করে বিদায় নিলেও তার পুরো পথে রিকশা চালানোর দৃশ্য স্মৃতিপটে আটকে আছে। আবারও হয়ত খুঁজে বেড়াতে হবে বাবার বয়সী এই জীবনযোদ্ধাকে। যদি কিছু করা যায় তার জন্য...।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ