
দেশের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের দুরবস্থা
- আপলোড সময় : ২২-১২-২০২৪ ১০:০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২২-১২-২০২৪ ১০:০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন


* স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি কমে যাওয়া একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ব্রেকিং ইয়ার্ড।
* গত চার বছরে প্রায় অর্ধশত ব্রেকিং ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে গেছে।
* জাহাজভাঙা শিল্প দেশের অপার সম্ভাবনাময় হলেও কোনোভাবেই সংকট কাটছে না।
দেশের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে। স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি কমে যাওয়া একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ব্রেকিং ইয়ার্ড। গত চার বছরে প্রায় অর্ধশত ব্রেকিং ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও জাহাজভাঙা শিল্প দেশের অপার সম্ভাবনাময় হলেও কোনোভাবেই সংকট কাটছে না। কভিড মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, এলসি-ডলার সংকট ও সরকারের কড়াকড়ির কারণে আরো গভীর হচ্ছে ওই শিল্পের সংকট। দেশে ইতিমধ্যে কমে গেছে স্ক্র্যাপ (পুরনো) জাহাজ আমদানির পরিমাণ। আবার যেসব জাহাজ আমদানি করা হচ্ছে, সেগুলো কাটতে অনুমোদন নিতে বাড়তি সময় লাগছে। ফলে লোকসানের মুখে পড়ছে ইয়ার্ড মালিকরা। বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের ব্যবসায়ীরা ২০২১ সালে ২৭ লাখ টনের বেশি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করে। কিন্তু এরপর থেকে জাহাজ আমদানির পরিমাণ অর্ধেকের নিচে নেমে আসে। ২০২২ সালে আমদানি হয় ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৪ টন। ২০২৩ সালে আরো কমে ১০ লাখ ২২ হাজার ১১০ টন জাহাজ আমদানি করা হয়। আর চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১৩০টি জাহাজ আমদানি হয়েছে, যার ওজন ৮ লাখ টনের মতো। বাকি দুই মাসের আমদানি মিলিয়ে ১০ লাখ টনে পৌঁছার সম্ভাবনাও কম। মূঔু এলসি ও ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশের আমদানিকারকরা আন্তর্জাতিক নিলামে বড় জাহাজ কিনতে পারছে না। আর ছোট এলসি দিয়ে ছোট আকারের জাহাজ কিনতে হচ্ছে। সেগুলো ওজনে কম, ৭ হাজার টনের বেশি না। যে কারণে আমদানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকতে আগামীতে আমদানির পরিমাণ আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ১১৬টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড কোনো না কোনোভাবে সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে গত চার বছরে অর্ধশতাধিক শিপইয়ার্ড নানা সংকট মোকাবিলা করে এক প্রকার বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে পাঁচটি গ্রিন শিপইয়ার্ডস* জাহাজ আমদানিতে সক্রিয় ৩৫টি শিপইয়ার্ড। আর কিছু ইয়ার্ড জাহাজভাঙা শিল্পের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সক্রিয় থেকে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। এ শিল্পের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে পর্যাপ্ত ডলার ও এলসির সরবরা* না থাকা। অতীতে যখন এলসি সংকট ছিল না তখন আমদানিকারকরা বড় জাহাজের নিলামে অংশ নিতে পারতেন। বড় আকৃতির জাহাজ আমদানির পরে সামষ্টিক আমদানির পরিমাণ বেশি হতো। ফলে ওসব জাহাজ কাটতে বাড়তি কর্মযজ্ঞ ছিল, প্রচুর শ্রমিক কাজ পেত। বাজারে কম দামে স্ক্র্যাপের সরবরা* ছিল। কিন্তু এখন আমদানি কমে যাওয়ায় সব পক্ষ সংকটে পড়ছে। এর সঙ্গে জাহাজ আমদানির পর অনুমতি নিতে গিয়ে ইয়ার্ড মালিকরা নানান ঝামেলা পোহাচ্ছে। এদিকে এ বিষয়ে বিএসবিআরএর সহকারী সচিব মো. নাজমুল ইসলাম জানান, জাহাজভাঙা শিল্প এখন কমলা থেকে লাল শ্রেণিতে নেয়া হয়েছে। জাহাজ আমদানির পর ইয়ার্ডে আনা হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর অনুমতির জন্য বাড়তি সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে স্ক্র্যাপের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বাজারে বিক্রি করে ইয়ার্ড মালিকরা লাভ পাচ্ছে না। এসব কারণে আরও বড় হচ্ছে সংকট।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ