ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
টেকসই অর্থনীতির বাজেট এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বঞ্চনার গল্প যেন অরণ্যেরোদন চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলে ৩ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিলেন কর্মচারীরা রাষ্ট্র সংস্কারে উপেক্ষিত নারী তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু-আইন উপদেষ্টা শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি প্রথমবারের মতো বিটিভির স্টুডিও থেকে হচ্ছে বাজেট ঘোষণা ঘাটতি কমানোর লক্ষ্য নিয়ে নতুন বাজেট আজ দুধ শুধু পণ্য নয় এটি সংস্কৃতির অংশÑ মৎস্য উপদেষ্টা রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টি পাহাড় ধসের ঝুঁকি সিলেটে টিলা ধসে একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু বিজিএমইএ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ‘ফোরাম’ প্যানেল বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ জাপা চেয়ারম্যানসহ ২৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা ঝিনাইদহে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত আহত ৪ কেএনএফের ইউনিফর্ম জব্দের ঘটনায় কারখানা মালিক রিমান্ডে মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই আরও ১১ জনকে পুশইন, মোট সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে নয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৬০ কিমি. বেগে ঝড়ের আভাস

নিষিদ্ধ নোট-গাইডে সয়লাব বাজার

  • আপলোড সময় : ১৭-১২-২০২৪ ১০:১১:৫০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৭-১২-২০২৪ ১০:১১:৫০ অপরাহ্ন
নিষিদ্ধ নোট-গাইডে সয়লাব বাজার
* ২০০৮ সালে উচ্চ আদালতের এক আদেশে নোট-গাইড নিষিদ্ধ করা হয় * কয়েকটি ছাপাখানার মালিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শ্রেণির গাইড-সহায়ক বই বাজারজাত করছে

নিষিদ্ধ হলেও দেশে নোট-গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা চলছেই। সৃজনশীল মেধা বিকাশ নিশ্চিতে বিগত ২০০৮ সালে উচ্চ আদালতের এক আদেশে নোট বইয়ের পাশাপাশি গাইড বই নিষিদ্ধ করা হয়। আর আইনটি লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু তারপরও গত ১৩ বছর ধরে কয়েকটি ছাপাখানার মালিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শ্রেণির ‘একের ভেতর সব’ নাম দিয়ে তৈরি গাইড-সহায়ক বই ছাপিয়ে প্রকাশ্যে বাজারজাত ও বিক্রি করেছে। আর ওই ব্যবসা করে গত ১৩ বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট। পুস্তক ব্যবসায়ী ও এনসিটিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নোট ও গাইড বইয়ের প্রকাশকরা একশ্রেণির ইউএনও, জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষক সমিতির সহযোগিতায় নোট-গাইড বইয়ের বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। এমনকি খোদ রাজধানীতে এনসিটিবি ও শিক্ষা অধিদপ্তরের একশ্রেণির কর্মকর্তা এই ধরনের বাণিজ্য টিকিয়ে রেখেছে। কারোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কোনো নজির নেই। আর বিসিএস সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা ক্যাডারের পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা অবৈধ গাইড বই কোম্পানিতে গোপনে মাসিক বেতনে চাকরি করছেন । তারা ওসব কোম্পানির নোটবই লেখার কাজ করেন। সূত্র জানায়, সরকার থেকে প্রতি বছর পয়লা জানুয়ারিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পাঠ্যবই দেয়া হয়। এনসিটিবির অনুমোদন ব্যতীত পাঠ্যতালিকায় অন্য কোনো বই ব্যবহার না করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও বিনা মূল্যের পাঠবই মুদ্রণের আগেই সরকার নিষিদ্ধ বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন কোম্পানির নোট ও গাইড বই বাজারে আসতে শুরু করেছে। অথচ মূল বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর আগে পাঠ্যবইয়ের কোনো বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) বাইরের কারোরই জানার বা দেখার সুযোগ নেই। তা সত্ত্বেও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে বইয়ের সিডি (মুদ্রণের ‘র’ কপি), নম্বর বণ্টন ও সিলেবাসের আগাম তথ্য  মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নোট গাইড ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রেস মালিকদের হাতে চলে গেছে। আর প্রেস মালিকরা মূল পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ বাদ দিয়ে এখন ‘সহায়ক বই’ নামের নোট-গাইড বই ছাপানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে। ফলে সরকারের বিনামূল্যের ৪১ কোটি পাঠ্যবই সময়মতো ছাপা ও বিতরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এনসিটিবির কর্মকর্তারা সম্প্রতি দুটি ছাপাখানা পরিদর্শনে গিয়ে নোট-গাইড বই ছাপানোর বিষয়টি হাতেনাতে ধরেছে। শিক্ষা খাতে এমন অপকর্মে জড়িত পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নোট-গাইড প্রকাশকদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা। সূত্র আরো জানায়, এনসিটিবির সম্পাদনা শাখা থেকে পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি, নম্বর বণ্টন ও সিলেবাসের আগাম তথ্য নোট-গাইড প্রকাশকদের কাছে গত ১৩ বছর ধরে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে হস্তান্তর করা হচ্ছে। যারা পাঠ্যবই ছাপার ঠিকাদারি পায়, তাদের মধ্যে বড় ঠিকাদারদের নোট-গাইড কোম্পানি রয়েছে। আগাম তথ্য সংগ্রহ করে নোট-গাইড লিখে ও প্রকাশ  এবং বাজারজাত করে প্রতি বছর দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য করছে কয়েকটি কোম্পানি।  যদিও ২০২২ সাল থেকে নতুন কারিকুলাম চালু হওয়ার পর নোট ও গাইড বই ব্যবসার সুযোগ কিছুটা কমে আসে। কেননা ওই কারিকুলামে (২০২২ সালের) শিক্ষার্থীদের খুব একটা পড়াশোনা করতে হতো না। ফলে গত তিন বছর মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নোট বা গাইড বই বিক্রি কিছুটা কম হয়েছে। তারপরও বাজারে সয়লাব ছিল গাইড বই। বিক্রি হয়েছে তুলনামূলক কম। কিন্তু আগামী ২০২৫ সাল থেকে নতুন করে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষাপদ্ধতি চালু হওয়ার খবরে নোট ও গাইড বই বাজারে নিয়ে আসার কাজে পুস্তক ব্যবসায়ীরা এখন ব্যস্ত। ইতিমধ্যে মাধ্যমিকের বিভিন্ন ক্লাসের একাধিক গাইড ও নোট বই বাজারে চলেও এসেছে। গত তিন বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার গাইড বই বিক্রি করে প্রকাশকদের ৪ হাজার কোটি টাকা আয় করার টার্গেট রয়েছে। আর অবৈধ নোট-গাইড কোম্পানিতে গোপনে মাসিক বেতনে চাকরি করছেন বিসিএস সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা ক্যাডারের পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা। কখনো অফিস বা স্কুল-কলেজ সময়ের পর তারা ওসব কোম্পানির অফিসে বসে নোটবই লেখার কাজ করেন। আবার শিক্ষা অধিদপ্তর বা এনসিটিবির বড় পদে চাকরিরত একশ্রেণির কর্মকর্তাদের অবৈধ সুবিধা দিয়ে থাকেন গাইড বই মালিকরা। নোট-গাইড কোম্পানিগুলোর মালিকদের টার্গেট প্রেষণে অথবা বদলিভিত্তিক পদায়ন পাওয়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা। এছাড়া শিক্ষা ক্যাডারদের শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে তদবির করে পদায়ন পাইয়ে দিতেও ভূমিকা রাখে কোনো কোনো নোট-গাইড কোম্পানির মালিক। গত কয়েক বছর ধরে নভেম্বর ও ডিসেম্বর সহায়ক বইয়ের নামে বিক্রি হওয়া ‘নিষিদ্ধ নোট-গাইড’ বইয়ের মুদ্রণ ও বাজারজাতকরণ বন্ধ রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কাছে অনুরোধ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে খোলাবাজারে এই ধরনের নিষিদ্ধ বইয়ের বিক্রি ঠেকাতে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারদের চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এদিকে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ বি এম রিয়াজুল হাসান সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানান, অসৎ কাজের জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করতে ইতিমধ্যে একাধিক কমিটি গঠন করেছে এনসিটিবি।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স