পেট্রোবাংলা পার্বত্যাঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে। সেজন্য স্থলভাগের জন্য প্রায় তিন দশক আগে করা উৎপাদন বণ্টন চুক্তি বা প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি) সংশোধনের মাধ্যমে নতুন খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। আর তা চূড়ান্ত করতে পেট্রোবাংলা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পরামর্শক নিয়োগ শেষ করতে চায়। আগামী মার্চের মধ্যে পিএসসি চূড়ান্ত হলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের মধ্য দিয়ে পেট্রোবাংলা বড় আকারে গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাবে। প্রথমে পার্বত্যাঞ্চলে গ্যাস ব্লক ২২বি-তে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্থলভাগে বা অনশোর ব্লক ২২বি অঞ্চলটি মূলত পাহাড়ি এলাকা। এর আওতায় রয়েছে বান্দরবানের থানচি, রুমা, আলীকদম ও কক্সবাজারের চকরিয়া। এছাড়া আনোয়ারা ও কাপ্তাইয়ের কিছু অংশও পড়েছে। ওই অঞ্চলে গ্যাস পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা প্রতিবেশী দেশ ভারত ওই ব্লকটির সীমান্ত এলাকায় কূপ খনন করে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের মজুদ পেয়েছে। বাপেক্সের উদ্যোগেও পাহাড়ে গ্যাস অনুসন্ধান চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সক্ষমতা না থাকায় তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। ওই অঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশী তেল-গ্যাস কোম্পানিকে আনা গেলে দ্রুতই সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র জানায়, স্থলভাগে গ্যাসের অনুসন্ধান জোরালো করতেই পিএসসি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে তা চূড়ান্ত করা হবে। পেট্রোবাংলার লক্ষ্য মূলত অনাবিষ্কৃত অঞ্চলে গ্যাস সন্ধানে জোর তৎপরতা চালানো। ওই লক্ষ্য থেকেই পার্বত্য অঞ্চলের ব্লক ২২বি-তে প্রথম কাজ করা হবে। যাবতীয় কার্যক্রম শেষ হলে মার্চে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। ১৯৯৭ সালের পর আর স্থলভাগে গ্যাসের উৎপাদন বণ্টন চুক্তির হালনাগাদ করা হয়নি। বিদ্যমান পিএসসিতে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করার মতো তেমন কোনো লোভনীয় প্রস্তাব ছিল না। যে কারণে খসড়া প্রস্তাবে পেট্রোবাংলা বেশকিছু সংশোধন এনেছে। দেশের স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করছিল গ্যাস উত্তোলনকারী বেশ কয়েকটি বিদেশী কোম্পানি। কিন্তু অন্তর্বতী সরকার ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন স্থগিত করায় এখন আর সেভাবে কাজ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেজন্যই গ্যাসের অনুসন্ধান জোরদার করতে অনশোর পিএসসি চূড়ান্ত করে বিদেশী কোম্পানিকে স্থলভাগের খালি থাকা ব্লকগুলোয় কাজ দিতে চায় পেট্রোবাংলা। সূত্র আরো জানায়, দেশে গত এক দশকে স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাসের উত্তোলন ব্যাপকভাবে কমে এসেছে। যেসব গ্যাস ফিল্ড উৎপাদনে রয়েছে তা থেকে চার-পাঁচটি ছাড়া বাকিগুলোয় উৎপাদন যৎসামান্য। আবার উচ্চ মূল্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে দেশের গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখাও কোনোভাবে সম্ভব নয় বলে খাতসংশ্লিষ্টরা জানান। এজন্যই বাপেক্সকে সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়ে স্থলভাগে পিএসসির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ দেশের স্থলভাগে এখনো গ্যাস পাওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল ও পার্বত্য এলাকা খুব সম্ভাবনাময়। পার্বত্য চট্টগ্রামের পার্শ্ববর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ১৬০টি কূপ খনন করে ১১টি গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়া গেছে। অথচ বাংলাদেশ পার্বত্যাঞ্চলে কূপ খনন করেছে মাত্র ১৪টি। অনুসন্ধান ও উত্তোলনে সব পদ্ধতিতে চেষ্টা চালানো প্রয়োজন। অনশোরে আন্তর্জাতিক দরপত্রের উদ্যোগ ভালো সুফল বয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে। আর আগেই এ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন ছিলো। ওসব অঞ্চলে বিদেশী কোম্পানি কাজ করতে আগ্রহ দেখালে তা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে। এদিকে পাহাড়ে বিশেষত বান্দরবানে যে এলাকায় গ্যাস পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বরকল, বেলাছড়ি, চাংগুতাং, গিলাছড়ি, গোবামুরা, কাসালাং, মাতামুহুরী, সিসাক ও উত্তাংছত্র। ওসব এলাকায় গত বছরই গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করতে চেয়েছিল বাপেক্স। গত শতাব্দীতে দেশের তিন পার্বত্যাঞ্চলে মাত্র একটি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে গ্যাস খুঁজতে বারবার উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে পাহাড়ে অনুসন্ধান জোরদার হয়নি। এর আগে বহুজাতিক তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানির (আইওসি) সঙ্গে যৌথ প্রতিষ্ঠান গঠন করে পাহাড়ে গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্স উদ্যোগ নিলেও সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। অন্যদিকে এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুতই শুরু হতে যাচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষ হবে। আর আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে শুরু হবে আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়া। অফশোর দরপত্রের মতোই অনশোরের আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শোয়েব জানান, অনশোরে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য পেট্রোবাংলার মাধ্যমে পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। স্থলভাগে এ ধরনের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা গেলে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে আরো গতি বাড়বে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
![](https://dainikjanata.net/public/ads/65fd544197946.png)
পেট্রোবাংলার গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ
- আপলোড সময় : ০৮-১২-২০২৪ ১০:৫৪:০২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৮-১২-২০২৪ ১০:৫৪:০২ অপরাহ্ন
![পেট্রোবাংলার গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ পেট্রোবাংলার গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ](https://dainikjanata.net/public/postimages/6755cf2aa29af.jpg)
![](https://dainikjanata.net/public/ads/65fd544197946.png)
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ