ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫ , ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ডেঙ্গুতে আরও দুজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৩০ ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ গঠনের প্রস্তাবনায় আইনজীবীদের ক্ষোভ নারী আসন দ্বিগুণ করে বিদ্যমান পদ্ধতিতে ভোট চায় বিএনপি বিএনপি-এনসিপি বাকযুদ্ধে তপ্ত হচ্ছে রাজনীতি এই সরকারের আমলেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে-আইন উপদেষ্টা জনমনে বাড়ছে আস্থাহীনতা প্রতিনিয়তই জুলাই যোদ্ধাদের স্মরণ করতে হবেÑ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জলবায়ু পরিবর্তনে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে হবেÑ রিজওয়ানা কক্সবাজার সৈকতে পর্যটক বাড়লেও নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যোগ নেই মিটফোর্ডের ঘটনায় তাবেদার শক্তির এদেশীয় ধারকবাহক জড়িত- রিজভী কুমিল্লায় ভুল সিগন্যালে ট্রেন না থামায় ৪ জন সাময়িক বরখাস্ত জামালপুরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি জুয়েল বৃষ্টিতে রাস্তায় চলাচলে জনদুর্ভোগ চরমে চরমপন্থীদের হাতে খুন যুবদলের মাহবুব, ভিডিও ফুটেজে ঘাতকরা শনাক্ত ভারতীয় ৩৪ জেলে ও ২ ট্রলার আটক ওয়ারীতে কিশোরকে হত্যাচেষ্টা, হামলা প্রতিহত করলো জনতা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ফি হলো দ্বিগুণ দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা সতর্ক থাকার নির্দেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম তার মৈশানি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে ব্যাটারিচালিত রিকশায়

উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত

  • আপলোড সময় : ০৮-১২-২০২৪ ১০:৫৩:১৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৮-১২-২০২৪ ১০:৫৩:১৯ অপরাহ্ন
উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত
* উত্তরের বাতাস আর কুয়াশার চাদরে ঢাকা চারপাশ * তীব্র শীতে দুর্ভোগে নিম্ন আয়ের মানুষ * পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা কমেছে * নওগাঁয় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা * জয়পুরহাটে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি
 

রাজধানীসহ দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে এবার শীতের আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সন্ধ্যা থেকেই পড়তে শুরু করে কুয়াশা, রাতভর বৃষ্টির মত ঝরে শিশির বিন্দু। কুয়াশার কারণে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন চালকরা। বিপাকে পড়েছে ১৬টি নদ-নদীর ৪০৫টি চরাঞ্চলবাসীসহ ছিন্নমূল মানুষ। তবে তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। শীতের কারণে মানুষ ঘর থেকে বাইরে কম আসায় নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমতে শুরু করেছে। তবে শীত বাড়ায় বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। গতকাল রোববার রাজধানীসহ সারাদেশে সকাল থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশে তীব্র শীত বাড়ায় বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় পুরনো কাপড়ের দোকানে বেশ ভিড় বেড়েছে। এছাড়া গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় পুরনো কাপড়, কাগজ ও গাছের ডালপালা পুড়িয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় নিম্নআয়ের মানুষদের। মিরপুর ১২ নম্বর এলাকার বাদাম বিক্রেতা আব্দুর বলেন, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার বেচাকেনা খারাপ যাচ্ছে। অন্য সময় আমার বিক্রি হতো আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। শীতের রাতে বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। কালশী মোড় এলাকার পিঠা বিক্রেতা জোসনা বেগম বলেন, শীতকাল আসায় আমার পিঠার দোকানে বেচাকেনা বেড়েছে। কিন্তু শীত হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় পিঠা বিক্রি কমতে শুরু করেছে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় মানুষ ঘর থেকে বাইরে কম আসছে। এ কারণেই পিঠা বিক্রি কম হচ্ছে। দুইদিন আগেও পিঠা বিক্রি করেছি এক বাজার থেকে ১৫শ’ টাকার। তবে গত শনিবার রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করেছে সাড়ে ৪শ’ টাকার। শীত বাড়তে থাকলে বিক্রি আরও কমে যাবে। লালবাগ এলাকায় শীতের সকালে কাজ করছিলেন রাজমিস্ত্রি আবুল কাশেম। একটি দোকানে রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, আমরা দিন আনি দিন খাই। আমাদের শীত, বৃষ্টি ও রোদ বলে কিছু নেই। যখন কাজ থাকে তখনই কাজ করতে হয়। অনেক সময় টানা চার-পাঁচ দিন মিস্ত্রির কাজ পাই না, তখন বসে থাকতে হয়। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজমিস্ত্রির কাজ করে ৭০০ টাকা মজুরি পাই। এ টাকা দিয়ে আমি নিজে চলি ও গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে বউ-বাচ্চার জন্য টাকা পাঠাই। যখন কাজ পাই না তখন জমানো টাকা ও মানুষের কাছ থেকে ধার-দেনা করে চলতে হয়। ডেমরার পাইট্টি এলাকার চা দোকানদার আসিফুল ইসলাম বলেন, শীত বেড়ে যাওয়ায় আমার চায়ের দোকানে বেচাকেনা কমতে শুরু করেছে। গত দুইদিন ধরে আমার বেচাকেনা খুবই কমে গেছে। মানুষজন ঘর থেকে বাইরে আসতে চাচ্ছেন না। তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন দোকানে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার বেচাকেনা করতাম। সেই বেচাকেনার প্রায় ৪৫ শতাংশ কমে এসেছে। এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা।
রাজধানীতে কষ্টে আছে ভাসমান মানুষ: রাজধানীসহ দেশজুড়ে জেঁকে বসা হাঁড় কাপানো শীতে সবচেয়ে কষ্টে আছে ভাসমান মানুষ। মধ্যবয়সী নারী পারভীন আক্তার। ঘর নেই, শীতের রাতে বিছানা পেতেছেন রাজধানীর ফুটপাতে। গত ৭ বছর ধরে রাজধানীর খামারবাড়ি সড়কের ফুটপাতেই তার বসবাস। সঙ্গে একমাত্র ছেলে আরিফ। ভাসমান জীবনযাপনে অনেক সময় না খেয়েই রাত পার করতে হয় তাকে। কনকনে ঠাণ্ডা অসহায় এই নারীর কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে। শীত থেকে বাঁচতে শরীরে গামছা পেঁচিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে জবুথবু অবস্থায় রাত্রিযাপন করছেন সড়কের পাশে। মাঝে মাঝে হিমেল ঠাণ্ডা হাওয়া তাদের শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। হাইকোট মাজার সড়কে রাতে ফুটপাতে কাটানো জলিল রহমানের গল্পও একই রকম। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঢাকার ফুটপাতে তার বসবাস। তীব্র শীত বাড়তি কষ্ট বয়ে এনেছে তার। বুধু মিয়া নামে নোয়াখালি জেলার সোনাইমুড়ি এলাকার আবদুর রহমান (৬২) গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চের দক্ষিণের সড়কের ফুটপাতে বসবাস করছেন ৪ বছর যাবত। তার পরিবার-পরিজন বলতে কেউ নেই। পরনের লুঙ্গীপেচিয়ে শীতের মধ্যে বিছানা পেতেছেন। একইভাবে ফরিদপুর ভাঙ্গার লাল মিয়া (৭৬) রাজউক ভবনের বিপরীতে ৭ বছর যাবত বসবাস করছেন ফুটপাতে। কনকনে শীতে তিনিও কষ্টে জীবন-যাপন করছেন বলে জানিয়েছেন। পরভীন আক্তার-জলিলের মতো এমন হাজারো ভাসমান মানুষ শীতের রাত পার করছেন নিদারুণ কষ্টে। ফুটপাতই তাদের সংসার, ঘরবাড়ি। এই দুর্ভোগের খবরও রাখে না কেউ। গরমে কোন রকম কাটলেও খোলা আকাশের নিচে থাকা এসব মানুষের কাছে শীত উপভোগের নয়, বরং মহাকষ্টের। ভাসমান এসব মানুষের জন্য সবার একটাই চাওয়া রাষ্ট্র ও বিত্তশালীরা এগিয়ে আসুক সহায়তা নিয়ে।
তীব্র শীতে পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা কমেছে: শীতের জেলা পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত। প্রতিদিন কমছে দিন ও রাতের তাপমাত্রা। তিন দিন ধরে ঘন কুয়াশার সঙ্গে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। গতকাল রোববার সকাল ১০টা-১১টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে চারদিক। এদিন সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। গত শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দু’দিন ধরে দিনের তাপমাত্রাও কমছে। এর আগে গত শনিবার দিনের (সর্বোচ্চ) তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনভর হালকা কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এতে দিনমজুর, কৃষি শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। উপজেলা সদরের মালাদাম এলাকার আমিনুর রহমান বলেন, সকালে ভ্যানে রোগী নিয়ে এসেছি। কুয়াশার জন্য ঠিকমতো দেখা যায় না। বাতাসের জন্য খুব ঠান্ডা লাগছে। আমাদের সকালেই বের হতে হয়। ঠান্ডার সময় আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তবে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় বলেন, গতকাল রোববার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গত শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি। চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কমে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে।
জয়পুরহাটে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি: জয়পুরহাটে জেঁকে বসেছে শীত। প্রতিদিন কমছে দিন ও রাতের তাপমাত্রা। দু’দিন ধরে ঘন কুয়াশার সঙ্গে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। সকাল থেকে আধাবেলা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে চারদিক। গতকাল রোববার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে নওগাঁর আবহাওয়া অফিস। দিনভর হালকা কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এতে দিনমজুর, কৃষি শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল এলাকার নাহিদ আকতার বলেন, সকালে অটোরিকশা নিয়ে এসেছি। কুয়াশার জন্য ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না। হিম শীতল বাতাসের কারণে খুব ঠান্ডা লাগছে।
নওগাঁয় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা: উত্তরের জেলাগুলোতে জেঁকে বসেছে শীত। গতকাল রোববার দেশের সর্বনিম্ন  তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছীতে ১০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত শনিবারও এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। গত শনিবার রেকর্ড করা হয় ৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। যা চলতি বছরে এখন পর্যন্ত এই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তবে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছিন্নমূল মানুষ ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার পর শীতের প্রকোপ একটু বেশি থাকছে। সেই সঙ্গে হিমেল হাওয়া শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ। সন্ধ্যার পর থেকেই গরম কাপড় পরে চলাফেরা করছে মানুষ। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন থাকছে চারপাশ। সকাল হলেই কেটে যাচ্ছে শীত। দ্রুতই কুয়াশা ভেদ করে দেখা মিলছে সূর্যের। তাই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্রতাও কমে যাচ্ছে। নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, গতকাল রোববার সকাল ৬টায় জেলায় ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। তবে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা হামিদুল হক বলেন, গতকাল রোববার সকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা জয়পুরহাটে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কমে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে।
প্রচণ্ড কুয়াশায় বাসের ধাক্কায় নিহত ২: ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় প্রচণ্ড কুয়াশার মধ্যে চলন্ত ট্রাকের পেছনে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় দু’জন নিহত হয়েছেন। এ সময় বাসের বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন। গত শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কান্দিগাঁও নাঈমা ফিলিং স্টেশনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স