ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ , ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
নতুন বাজেটে বৈষম্য কমবে সব ক্ষেত্রে সংবিধান পুনর্লিখনে গণপরিষদ-আইনসভা নির্বাচন একই হবে ৬০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়ে ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতা অভিযান ফিলিস্তিনিদের দুর্দশাকে ‘যীশু খ্রিস্টের কষ্ট’র সঙ্গে তুলনা কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ,প্রতিবাদে চালকদের মিছিল নরসিংদীতে রাতে স্ত্রীর দিনে স্বামীর লাশ উদ্ধার আইন উপদেষ্টার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে শিবির নেতার স্ট্যাটাস বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের নেতা ঢাকায় আত্মগোপনে দিনাজপুরে ৩১৬ চালকলের লাইসেন্স বাতিল জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাভোগী ও সুবিধাবাদী দল নয় - জিএম কাদের এনসিপি’র জেলা-উপজেলা কমিটির আহ্বায়কের বয়স হবে সর্বনিম্ন ৪০ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ অমানবিক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলসহ পাঁচ দাবি বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের ভর্তুকি মূল্যে পাটের ব্যাগ দেবে সরকার-পরিবেশ উপদেষ্টা তীব্র সঙ্কটেও দেশে গ্যাসের চুরি ও অপচয় বন্ধ হচ্ছে না গাজায় ইসরায়েলি নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ নড়াইলে সৌদি প্রবাসী হত্যা হামলা-ভাঙচুরের পর পুরুষশূন্য গ্রাম প্রেস সচিবের মন্তব্যকে ‘অযাচিত’ বলছে ভারত রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল
বিপাকে কৃষক

আলুবীজের তীব্র সঙ্কট

  • আপলোড সময় : ০৬-১২-২০২৪ ০১:১০:৩৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৬-১২-২০২৪ ০১:১০:৩৪ অপরাহ্ন
আলুবীজের তীব্র সঙ্কট
* বেশি দাম দিয়ে আলুবীজ কিনতে হচ্ছে  * সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে মণপ্রতি ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা বেশি * দেশে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ টনের মতো বার্ষিক চাহিদা * গত অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টনের কাছাকাছি * চাহিদার চেয়ে উৎপাদন হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টন বেশি

অধিক হারে আলু চাষে কৃষক ঝুঁকলেও আলুবীজের তীব্র সঙ্কট রয়েছে। ফলে কৃষককে বেশি দামি আলুবীজ কিনতে হচ্ছে। দেশে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ টনের মতো আলুর বার্ষিক চাহিদা। গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টনের কাছাকাছি। ওই হিসাবে চাহিদার চেয়ে আলু উৎপাদন হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টন বেশি। কিন্তু এবারের মৌসুমে ফসলটি চাষ করতে গিয়ে কৃষকরা বীজ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। কারণ তাদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে মণপ্রতি ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা বেশি দিয়ে আলুবীজ কিনতে হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মূলত কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে আলুবীজের বাজারকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। কৃষক এবং কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের মধ্যে রংপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হলেও ওই জেলায় আলুবীজের তীব্র সংকট রয়েছে। চাহিদার তুলনায় বীজের সরবরাহ কম এবং সরকারি বরাদ্দও অপ্রতুল। ফলে কৃষককে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ দামে বীজ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অথচ রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলায় আলু চাষের জমি প্রায় ৯ হাজার ২০২ হেক্টর বেড়েছে। কিন্তু ওসব জেলায় ৬ বছরে বীজের সরকারি বরাদ্দ কমেছে প্রায় ১ হাজার ৪২৮ দশমিক ৭৫৯ টন। চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আলুবীজের সম্ভাব্য চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার টন। সেখানে বীজ সরবরাহকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বরাদ্দ মাত্র ২ হাজার ৭৯৭ দশমিক ৩২ টন। আর সরকারিভাবে বরাদ্দ কম থাকায় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ইচ্ছামতো আলুবীজের দাম বাড়াচ্ছে। সূত্র জানায়, বিএডিসির আলুবীজ বেশ মানসম্পন্ন। সেজন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত বীজের চেয়ে এর চাহিদাও বেশি। সরকারি সংস্থাটি বেশ কয়েকটি আলুর জাত বিতরণ করে। এর মধ্যে রয়েছে বিএডিসি আলু-১ (সানসাইন), বিএডিসি আলু-৩ (সান্তানা), বারি আলু-১৩ (গ্র্যানুলা), বারি আলু-২৯ (কারেজ), বারি আলু-৮৫ (৭ ফোর ৭), বারি আলু-২৫ (এস্টারিক্স), বারি আলু-৯০ (অ্যালুইটি), বিএডিসি আলু-২ (প্রাডা), বিএডিসি আলু-৮ (ল্যাবেলা), বিয়ান্না ও কিং রাসেট। নভেম্বর পর্যন্ত আলুবীজ বিএডিসির আলুবীজ বিতরণ করা হবে। আর সরকারি বীজ বিতরণ শুরু হলে বাজারে অনেকটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণরংপুর অঞ্চলের এক হাজারেরও বেশি কৃষককে আমরা ২০০ কেজি করে বীজ দেয়া হচ্ছে। তবে এগুলো কৃষকের হাতে গেলে বর্তমান প্রেক্ষাপট অনেকটা পরিবর্তন হবে। আমরা আলুবীজের চাহিদার খুব অল্পই সরবরাহ করতে পারে বিএডিসি। দেশের অন্যতম আলু উৎপাদনকারী জেলা জয়পুরহাটে এবার আলুবীজের চাহিদা ৬০ হাজার টন। বিপরীতে মজুদ রয়েছে ৬২ হাজার ৯৫০ টন। চাহিদার তুলনায় জোগান প্রায় তিন হাজার টন বেশি থাকার পরও বাজারে বীজের তীব্র সংকট। বীজ ব্যবসায়ীদের মতে, কোম্পানিতে বীজের যে চাহিদা জানানো হয়েছিল সে পরিমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া জেলায় বিএডিসির বীজ বিক্রয় কেন্দ্র না থাকায় ডিলারদের কাছ থেকে তা সংগ্রহ করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক কৃষক কয়েকদিন ঘুরেও এক বস্তা আলুবীজ পাচ্ছে না। এমনকি যারা আগে বুকিং দিয়েছেন তারাও ঠিকমতো পাচ্ছে না। আবার যারা পাচ্ছে তাদের এক বস্তা আলুবীজের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। সূত্র আরো জানায়, আলুবীজের সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি কেজি ৬৮ টাকা। কিন্তু বগুড়ায় গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি। এর মধ্যে শহরের বিসিক এলাকার বগুড়া হিমাগার থেকে বলা হয়েছে, তাদের কাছে আর আলুবীজ নেই। বাজারেও বীজ আলু বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। চলতি বছর বগুড়ায় সাড়ে ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর জন্য বীজ প্রয়োজন প্রায় ৮৫ টন। সেখানে বগুড়ায় আলুবীজ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার টন। এখনো প্রায় ১৮ হাজার টন বীজ রয়েছে, যা কৃষক পর্যায়ে সরবরাহের জন্য প্রক্রিয়া চলছে। তবে বাজার কারসাজিতে দাম বেশি হয়। তাছাড়া কুড়িগ্রামে আলুবীজ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১০০ টাকারও বেশি দামে। ওই জেলার চরের জমিগুলোয় আগে কোনো আবাদ হতো না। গত বছর থেকে বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা জমি লিজ নিয়ে আগাম আলু আবাদ করছে। ওই জেলায় এ বছর ৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য ১২ হাজার টন বীজ প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে বিএডিসিসহ জেলার পাঁচটি হিমাগারে সংরক্ষিত রয়েছে সাড়ে ছয় হাজার টন। বাকি বীজের চাহিদা কৃষক পর্যায়ে ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকসহ অন্যান্যভাবে সংরক্ষণ করা বীজ থেকে পূরণ হবে। আর বাজারে আলুবীজের দাম কিছুটা বেশি হলেও আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে। এদিকে বীজআলুর সংকট নিয়ে গত ১২ নভেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ে সচিবের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সেখানে সরকারি-বেসরকারি খাতসংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় কৃষি সচিব বীজ আলুর যথাযথ সংরক্ষণ ও সঠিক হিসাব দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বীজআলু যাতে অন্য কোনো খাতে ব্যবহার না হয়, সে বিষয়েও কৃষি বিভাগকে তদারকি জোরদারের নির্দেশ দেন। অন্যদিকে কোল্ডস্টোরেজের মালিকদের মতে, চলতি বছর আলুর উৎপাদন মৌসুমে কৃষক প্রতি কেজিতে ১০-২০ টাকা লাভ করেছে। আর যারাই আলু মজুদ করেছে তারাও প্রতি কেজিতে প্রায় ২০ টাকা লাভ করেছে। তাই এবার আগামী বছরের জন্য ব্যাপক হারে আলু চাষ করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী জমির পরিমাণও বেড়ে গেছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী আলুর বীজ না থাকায় সংকট তৈরি হয়েছে। আর দামও সেই হারে বেড়েছে। আলুবীজ সংকট ও উচ্চমূল্যের বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছাইফুল আলম জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী বীজআলু বিক্রি করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স