* সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে গভর্নরকে চিঠি * নীতিমালা সংশোধন বা বাতিলের সিদ্ধান্ত কমিটির সুপারিশের পর : মুখপাত্র, বাংলাদেশ ব্যাংক
আতাউর রহমান জুয়েল
ব্যাংকিং খাতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের প্রথায় পরিবর্তন আসছে। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার পরিবর্তে জুড়ে দেয়া হয়েছে তিন শর্তÑব্যাংকিং ডিপ্লোমা, মাস্টার্স ডিগ্রি ও গবেষণাপত্র প্রকাশের বাধ্যবাধকতা। আর এই নতুন নীতিমালা নিয়ে ব্যাংক পাড়ায় তৈরি হয়েছে অস্বস্তি , এটি ব্যাংকারদের মাঝে জন্ম দিয়েছে বিতর্ক। ক্ষুব্ধ ব্যাংকাররা এই নীতিমালাকে ‘বাস্তবতাবর্জিত ও বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে নীতিমালা বাতিলের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
নতুন নীতিমালায় আরোপিত শর্তের ফলে সরকারি ব্যাংকের ২৫৮ কর্মকর্তার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) পদে পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ব্যাংকাররা মনে করেন নীতিমালা ব্যাংকিং কার্যক্রম ও পেশাদারত্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কতটা সক্ষমতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে-এমন আশঙ্কা অনেক সিনিয়র ব্যাংক কর্মকর্তার।
জানা যায়, ২০২৩ সালের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালা জারি করে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (আইবিবি) দেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পেশাগত মাস্টার্স এবং গবেষণা-সংক্রান্ত নতুন নিয়ম চালু করা হয়। নতুন নীতিমালায় জিএম পদে পদোন্নতির জন্য প্রার্থীদের ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুটি পর্ব পাস করা, দুই বছরের পেশাগত মাস্টার্স সম্পন্ন করা এবং গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশের শর্ত আরোপ করা হয়।
নতুন নিয়মের আলোকে সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উপমহাব্যবস্থাপক থেকে মহাব্যবস্থাপক পদে উন্নোতির জন্য ২৫৮ জনের প্যানেল তৈরি করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। গত ৪ নভেম্বর থেকে পদোন্নতির জন্য সাক্ষাৎকার নেয়া শুরু হয়, যা ২৭ নভেম্বর শেষ হয়। এখন আইবিবির আরোপিত এসব শর্ত নিয়েই বড় আপত্তি তুলেছেন পদোন্নতি প্রত্যাশীরা। তাদের একটি অংশ মনে করে, এসব শর্ত জটিলতা তৈরি করবে এবং অনেক যোগ্য কর্মকর্তাকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, নতুন শর্ত বাস্তবায়ন হলে জ্যেষ্ঠতা, দক্ষতা এবং মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা অবমূল্যায়িত হবে। এর ফলে ব্যাংকিং খাতে তৈরি হবে নতুন সংকট। নতুন আরোপিত শর্ত বাতিল করে ব্যাংকিং খাতকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখবে কর্তৃপক্ষ।
ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (আইবিবি) মহাসচিব লাইলা বিলকিস আরা ব্যাংকারদের এ দাবির সঙ্গে একমত নন। নতুন শর্তারোপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাস্তবতার আলোকে প্রণয়ন করা হয়েছে। ব্যাংকিং কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সিলেবাস পরিবর্তন এবং পরীক্ষার পদ্ধতিতে উন্নয়ন আনা হয়েছে। ফলে পাসের হারও বেড়েছে।
পদোন্নতির নীতিমালা বিষয়ে এফআইডির অতিরিক্ত সচিব বদরে মুনির ফেরদৌস জানান, জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) পদে পদোন্নতির জন্য সরকারি ব্যাংকের ২৫৮ জন কর্মকর্তাকে ইতিমধ্যে ভাইভার জন্য ডাকা হয়েছে। নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন এলে নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী পদোন্নতির সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। তবে বর্তমান নীতিমালার ভিত্তিতেই পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘ব্যাংকারদের দাবি যাচাই-বাছাই করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ পেলে নীতিমালা সংশোধন বা বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
তবে ক্ষুব্ধ ব্যাংকাররা জানান, ‘এটি একটি বৈষম্যমূলক নীতি।’ ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি বাস্তব পরিস্থিতি ও ব্যাংকিং কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শুধু একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়ার জন্য আইবিবির কাউন্সিলের তৎকালীন চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এ সিদ্ধান্ত নেন। তারা আরও জানান, বিদেশে প্রশিক্ষণ নেয়া ব্যাংকারদের ওপর ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক করার কোনো দরকার নেই। চাপিয়ে দেয়া এ শর্ত পেশাদারত্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ব্যাংকিং খাতে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
নতুন নীতিমালা ঘিরে ব্যাংক খাতে অস্থিরতা
- আপলোড সময় : ২৯-১১-২০২৪ ১০:১৩:০৩ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৯-১১-২০২৪ ১০:২৬:৩৩ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ