ঢাকা , শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ , ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সুনামগঞ্জের সেই গ্রামে কড়া নিরাপত্তা, বসেছে ক্যাম্প সীমান্তে বিএসএফের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন ভারতীয় প্রচারণার জবাব দিতে জাতীয় সমাবেশের প্রস্তাব এসেছে: আসিফ নজরুল সাড়ে ৩ বছর পর কারামুক্ত বাবুল আক্তার সেই মাহমুদুর রহমানই হারিছ চৌধুরী অধিকারের ভিত্তিতে ভারতের সাথে সমস্যার সমাধান চায় বাম জোট দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে আ’লীগ-লন্ডনে মির্জা ফখরুল ঢাকা সফরে আসতে পারেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব দেশকে নতুন করে অস্থির করার চেষ্টা চলছে কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে : সুপ্রিম কোর্ট চিন্ময় ইস্যুতে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্বাগত জানায় যুক্তরাষ্ট্র কারাবন্দি ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ এখনো পলাতক ডিসেম্বর মাসে ১২ বার শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা সীমান্তে আমদানি রফতানি বন্ধ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে এলো ঢাকা মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের মাস্টার প্ল্যান পুনর্গঠন করা হবে হাইকমিশনে আক্রমণ কোনো সভ্য রাষ্ট্রের আচরণ নয়- নাহিদ সাগরে ইলিশ নেই দুশ্চিন্তায় জেলেরা পুরনো ইঞ্জিন ও কোচে বাড়ছে রেল দুর্ঘটনা

বছরজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ

  • আপলোড সময় : ২৯-১১-২০২৪ ০৯:২৬:৩৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৯-১১-২০২৪ ১০:২৫:০৯ অপরাহ্ন
বছরজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ
দেশে বছরজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলেছে। প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী এবং মৃত্যুর সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯ হাজার ৬০৩ জন এবং চলতি বছরের একই সময়ে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৭৫ জন। 
সাধারণত দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বর্ষার আগে শুরু হয়। মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কে ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে সারা বছরই কম-বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বছরই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গু ভাইরাস বাহিত মশা শীত-গ্রীষ্ম মানছে না, সারা বছরব্যাপী প্রজনন এবং বংশবিস্তার করছে। পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ না থাকার ফলে দেশে বছরব্যাপী ডেঙ্গু সংক্রমণ চলছে।
অতীতের বছরগুলোতে শহরের বাসা বাড়িতে আবাসিক ধরনের মশা (এডিস ইজিপটাই) ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটালেও, বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের বুনো মশাও (এডিস এলবোপিকটাস) ডেঙ্গুর বাহক হিসেবে কাজ করছে। গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটলেও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ না করায় ডেঙ্গু ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের, মার্চ মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩১১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের, এপ্রিলে আক্রান্ত হয়েছেন ৫০৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। 
মে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের, জুন মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯৮ জন এবং মৃত্যু হয়েছে আটজনের, জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ২৬৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের, আগস্ট মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ছয় হাজার ৫২১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। সেপ্টেম্বর মাসে ১৮ হাজার ৯৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৮৭৯ জন, মারা গেছেন ১৩৫ জন। নভেম্বর মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ হাজার ৭৮৬ জন, মারা গেছেন ১৬০ জন। 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেও মোটামুটি ডেঙ্গুর সংক্রমণ থাকবে। এ বছরের ডেঙ্গুর প্রকোপ আগামী বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত থাকবে।  বছরজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু বাড়বে এরকম পূর্ভাবাস আগে থেকেই ছিল। এবার বর্ষা একটু দেরিতে শুরু হয়েছে তাই ডেঙ্গুর প্রকোপও শুরু হয়েছে দেরিতে। ডেঙ্গু যে হারে বাড়ছে, সেটা বিপজ্জনক। আমরা জানি, যদি এডিস মশা প্রজননের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয় তাহলে ডেঙ্গু বাড়বে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বর্তমান উপদেষ্টা এবং সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক ডা. মো. মুশতাক হোসেন বলেন, বছরব্যাপী ডেঙ্গুর সংক্রমণের কারণ প্রথমত প্রাকৃতিক, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও বৃষ্টি এবং গরম অব্যাহত ছিল। বৃষ্টিপাতের পরেও ডেঙ্গু অন্তত দেড় থেকে দুই মাস থাকবে। শেষ বৃষ্টির পরে পানি জমা থাকা অবস্থায় শেষ যে মশা ডিম পারে, সেই ডিম থেকে পূর্ণ বয়স্ক মশা হয়ে কোনো ডেঙ্গুরোগীকে দংশন করে, ভাইরাস মশার শরীরে ডেভেলপ করে তারপর আবার কোনো মানুষকে দংশন করে ভাইরাসের ডেভেলপ করা, এই পুরো চক্রটি হতে প্রায় দেড় মাস সময় লাগে। তিনি আরও বলেন, আমাদের ঘরে বাইরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কোনো উন্নতি হয় নাই। জাতীয় ভিত্তিতে আমরা এমন কোনো অভিযান পরিচালনা করি নাই, যা ছিল তাই আছে। ময়লার ওপর মাঝে মাঝে কীটনাশক ছড়ানো হচ্ছে। কীটনাশক যেখানে ছিটানো হয়, সেখানের মশা বিকল হলেও আবার পাশের জায়গা থেকে মশা এসে সেই স্থান পূরণ করে দেয়। এসব কারণেই ডেঙ্গু বছরব্যাপী হচ্ছে। এখন তাপমাত্রা কমে গেলে মশা কমে যাবে, তবে একদম দূর হবে না। ডেঙ্গু লেগেই থাকবে হয়তো সংখ্যায় কমে যাবে।      
ডেঙ্গুর মৌসুম দীর্ঘায়ত প্রসঙ্গে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, আমরা আগেই বলেছি চলতি বছর ডেঙ্গুর মৌসুম দীর্ঘায়িত হবে। আমরা যে ফরকাস্টিং তৈরি করি, সেখানে এডিস মশার ঘনত্ব, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা মিলিয়ে করি। সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি,  ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু থাকবে। এই প্রকোপ আগামী বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত চলবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ২০০০ সাল থেকে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে। দীর্ঘ দুই যুগেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কোনো পরিকল্পনা গড়ে ওঠেনি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিকদের সমন্বয়ে সমন্বিত জাতীয় পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। সকলের সমন্বিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সামনের দিনগুলোতে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য