বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী) থেকে প্রদীপ কুমার সেন
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে সে সময় প্রকাশ্যে যে অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে সেগুলো উদ্ধার না হওয়ায় মানুষের চোখে মুখে এখন আরো আতংক দেখা যাচ্ছে।
বেগমগঞ্জ উপজেলায় চৌমুহনী পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়নে শেখ হাসিনা সরকার পতনের সময় স্বয়ংক্রিয় এবং দেশীয় সব ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে যেসব অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড ঘটনা হলো সে সব অস্ত্র গুলো উদ্ধার করা যায়নি। এরই মধ্যে আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের আলাইয়ারপুর বাহাদুপুর, ধীতপুর, মোশাকপুর, নেয়াজপুর, সুলতানপুর, রামপুর, একাব্বরপুর, মিয়াপুর, আমানউল্যাপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর, ভবভদ্রী, করিমপুর, খাঁনপুর, চন্দ্রগঞ্জ বাজার, মোহাম্মদপুর, কোয়ারিয়া, পটিকা, গৌবিন্দের খিল, কাছিহাটা, সর্দ্দার দিঘীর পাড়, মহেশপুর, জয়নারায়ণপুর, গোপালপুর, বসন্তেরবাগ, চাঁদকাশিমপুর, তুলাচারা, রেজ্জাকপুর, বেতুয়াবাগ, কালিকাপুর, তিতাহাজরা, জিরতলী ইউনিয়নের ফাজিলপুর, বারইচতল, বাবুপুর, মজুমদার হাট, জিরতলী বাজার, ছয়ানী ইউনিয়নের রুদ্রপুর, গঙ্গাবর, জাহানাবাদ, ভবানিজীবনপুর, জুগিখালী, ভুপতিপুর, তালিবপুর, তৈয়বপুর খালিশপুর, রাজগঞ্জ ইউনিয়নের আলাদিনগর, দিলিলপুর, আলী হাসিমপুর, বানাবাড়িয়া, টঙ্গিপাড়, বিজয় নগর, মাধব সিংহ, শ্রীধরপুর, মিরওয়ারিশপুর ইউনিয়নের কেন্দুরবাগ, মিরওয়ারিশপুর, লালপুর, আপানিয়া, দিঘীরজান, চৌমুহনী পৌরসভার করিমপুর, গনিপুরের হকার্স মার্কেট এলাকা, নাজিরপুর, হাজীপুর, কলেজ রোড, আলীপুর ভেজাল বাড়ির দরজা, কন্টাকক্টর মসজিদ এলাকায় অস্ত্র ব্যবহারকারীরা লুট, ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ, অপহরণের পর চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ যত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়েছে ঐ সব অস্ত্রগুলি এখনো উদ্ধার হয়নি।
ভোক্তভোগী লোকজন বলেন, ৫ আগস্টের আগের দিন থেকে আলাইয়ারপুর ইউনিয়নে ৬৯টির বেশি ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে থানায় কয়েকটি অভিযোগ দিলেও মামলা হিসেবে মামলা রুজু করা হয়নি। এরই মধ্যে ঐ ইউনিয়নের আলাইয়ারপুর, বাহাদুরপুর, সুলতানপুর, হরিভল্লবপুর এলাকায় যৌথ বাহিনী এক দিন অভিযান চালিয়ে কয়েক জনকে ধরলেও অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। এরা কয়েক জনই হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামী থাকলেও পরে আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। এ এলাকার বাহাদুরপুর বরন্দাজ বাড়ির জাহেরের ছেলে সোহেল, সফিয়াত উল্লা, ছেলে মানিক্যপুর হেঞ্জু চোরার বাড়ির ছোলেমানের ছেলে জাকের, নেয়াজপুর খালেক ডাঃ এর বাড়ির ইউসুফের ছেলে হাসানসহ ৩০/৫০ জনের সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী দিনে ও রাতে মানুষের বাড়ি গিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের লোকজন খুঁজতে গিয়ে মহিলাদের উপর নির্যাতন করলেও অনেকেই ইজ্জতের ভয়ে মুখ খোলে না এমনকি থানার মামলা করতে ভয় পায়। এখন ঐ সব এলাকায় মানুষ হতাশায় আছে।
আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, আমি নিজেই ভয়ে আছি। ইতিমধ্যে আমাকে বাড়িতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি আমাকে একটি গায়েবী মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আমি আদালত থেকে জামিনে এসেছি। পুলিশ কোন কাজ না করায় এমনকি আমাদের সহযোগিতা নিতেও রাজি হয়।
ইউনিয়ন বি.এনপি সভাপতি মীরজুমলা মিঠু বলেন, আমি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সকল সভা সমিতিতে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছি। এতে আমাকেও তারা টার্গেট করেছে। তাই আমিও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এলাকার শান্তি এবং জনগনের স্বার্থে আমি সবসময় তাদের পাশে থাকব।
আমানউল্যাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বি.এন.পি নেতা বাহারুল আলম সুমন বলেন, আমার এলাকায় শুধুমাত্র সাবেক চেয়ারম্যান আরিফের বাড়িতে সামান্য একটা ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। আওয়ামী লীগের নেতা হারুনের নিকট থেকে ১২ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে আবার ব্যবসা করছে এটা কানে শুনেছি চোখে দেখিনি। তবে সন্ত্রাসের সবসময় বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবো।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিটন দেওয়ান বলেন, আমি অল্প কয়েক দিন আগে যোগদান করেছি। এরই মধ্যে যৌথবাহিনীর সাথে পুলিশ আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর, মোশাকপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে কয়েকজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছি। তারা আদালত থেকে জামিনে আসলে আমরা তো কিছু করতে পারবো না। তবে অভিযান আরো চলতে থাকবে। কোন মহলের কাছে মাথা নত করবো না।
সস্ত্রাসীদের হাতে থাকা অস্ত্র উদ্ধারের জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও আইন শৃংখলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছে ভুক্তভোগী জনগণ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata