মৃত্যুর আগের দিন সপরিবারে গ্রামের বাড়ি নরসিংদী রায়পুরা উপজেলার আনোয়ারাবাদ গ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন জনি। কথা ছিল গত বুধবার আবার আসবেন। সপরিবারে ঠিকই আসলেন বাড়িতে তবে লাশবাহী গাড়িতে করে। সন্ধ্যায় লাশগুলো বাড়িতে আসার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রতিবেশীসহ স্বজনরা। গ্রামের বাড়িতে বেড়ানো শেষে গত সোমবার বিকেলে ভৈরবের বাড়িতে যান তারা। রাত্রিযাপন শেষে পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে বাসা থেকে কারো কোনো সাড়া শব্দ না পাওয়ায় প্রতিবেশীদের সন্দেহ হলে তারা পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙে চারজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। নিহত চারজনের মধ্যে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আনোয়ারাবাদ এলাকার মৃত গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে জনি বিশ্বাসের (৩২) লাশ ঝুলছিল ফ্যানের সঙ্গে। তার স্ত্রী নিপা রানী মল্লিকের (২৬) গলা কাটা লাশ পড়ে ছিল আর তাদের দুই সন্তান ছেলে ধ্রুব বিশ্বাস (৭) ও মেয়ে কথা বিশ্বাসের (৪) লাশ পড়ে ছিল খাটে। নিপা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। পুলিশের ও স্বজনদের ধারণা, স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যার পর জনি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। নিহত নিপা সরকার গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার আমতলীর ধিকদা গ্রামের নির্মল সরকারের মেয়ে। তিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। অন্যদিকে জনি বিশ্বাস নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আনারাবাদ গ্রামের গৌরাঙ্গ বিশ্বাসের ছেলে। চার সন্তানের মধ্যে জনি তৃতীয়। নিহতের মা শিখা রাণী বিশ্বাস বলেন, চার ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় জনি। ২০১৪ সালে বড় ভাই রনি বিশ্বাসের সঙ্গে পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে হয় মুক্তা রাণী সরকারের। এরপর রনির ছোট ভাই জনি ও মুক্তার ছোট বোন নিপা দুজন দুজনকে পছন্দ করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে দুই পরিবারে সম্মতিতে রনির বিয়ে তিন মাসের মাথায় জনি ও নিপার বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই চাকরির সুবাদে জনি পরিবার নিয়ে ভৈরবে একটি বাসা বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। সেখানে তিনি ওয়ার্কশপের কাজ করে সংসার চালাতেন। এভাবে চলতে চলতে তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি ছেলে ও মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। তার স্ত্রী আবারও সন্তান সম্ভবা। সবকিছু মিলিয়ে তারা ভালোই চলছিল। রোববার সপরিবারে বাড়িতে আসে খাওয়া দাওয়া করে পরদিন বিকেলে চলে যায়। গত বুধবার বাড়িতে ঘর করতে ও কীর্তন শুনতে আসার কথা ছিল। পরে মঙ্গলবার বিকেলে খবর পাই তারা সবাই মারা গেছে। এখন কি থেকে কি হয়েছে সেটা ভগবান ভালো বলতে পারবে। নিহতের বড় বোন মুক্তা রাণী সরকার বলেন, কোনো বিষয় নিয়ে হয়ত তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তখন জনি হয়তো রাগ কন্ট্রোল করতে না পরে আমার বোন ও বাচ্চাদের হত্যা করে নিজে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এখন পুলিশের তদন্ত ও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বাকিটা জানা যাবে। ভৈরব থানা ওসি শাহীন মিয়া জানান, বিষয়টি নিয়ে সিআইডিসহ পুলিশের বিভিন্ন বাহিনী তদন্ত করছে। তদন্ত ছাড়া কিছু বলা এখন সম্ভব না। তবে নিহতের বাড়ির দরজা ভেতর থেকে লাগানো ছিল। আমরা তদন্ত করছি এবং ময়নাতদন্ত রিপোর্টে কি আসে সেটারও অপেক্ষায় রয়েছি। এ ঘটনায় নিহত জনির মা বাদী হয়ে ভৈরব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
স্ত্রী-সন্তানদের হত্যার পর গলায় ফাঁস নেন জনি ধারণা স্বজনদের
- আপলোড সময় : ২৯-১১-২০২৪ ০৬:৩৫:১৯ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৯-১১-২০২৪ ০৬:৩৫:১৯ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ