যাত্রীদের ভোগান্তি
বেনাপোলে বাস ধর্মঘট অব্যাহত
- আপলোড সময় : ২৭-১১-২০২৪ ১০:১৩:৫৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৭-১১-২০২৪ ১০:১৩:৫৮ পূর্বাহ্ন
বেনাপোল প্রতিনিধি
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পঞ্চম দিনের মতো গতকাল মঙ্গলবারও দূরপাল্লার সব বাস চলাচল বন্ধ ছিল। গত শুক্রবার থেকে বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও ভারতফেরত অনেক যাত্রী বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে নাভারণ সাতক্ষীরা মোড় থেকে সাতক্ষীরা-ঢাকা রুটে চলাচল করা গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন। গত সোমবার থেকে সেটাও বন্ধ করে দিয়েছে বাস মালিক সমিতি এবং পরিবহন শ্রমিকরা। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যাত্রীদের বেনাপোল চেকপোস্টে স্থলবন্দর বাস টার্মিনালে না নামিয়ে দিয়ে গভীর রাতে কাগজপুকুর পৌর বাস টার্মিনালে জোরপূর্বক নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগে গত শুক্রবার রাত থেকে দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ রেখেছে মালিক সমিতি। বেনাপোল পরিবহন ম্যানেজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, প্রশাসন এবং পৌর বাস টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ দাবি না মানায় পরিবহন মালিকরা তাদের গাড়ি এই রুটে চালাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত সোমবার থেকে সাতক্ষীরা রুটেও দূরপাল্লার সব বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মালিক সমিতি। ঢাকা-সাতক্ষীরা রুটে চলাচলকারী নাভারণ বাস কাউন্টার ম্যানেজার বিদ্যুৎ বলেন, বেনাপোলের সমস্যার সমাধান না হওয়ায় সাতক্ষীরা থেকে দূরপাল্লার পরিবহনের সব বাস বন্ধ করে দিয়েছে বাস মালিক সমিতি। সমস্যার সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত আমরা আপাতত কোনও টিকিট বিক্রি করছি না। বেনাপোল চেকপোস্টে রয়েল কোচ বাস কাউন্টারের সহকারী ম্যানেজার মুকুল হোসেন বলেন, যাত্রী ভোগান্তি এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ না থাকার কারণে ঢাকার মালিকদের নির্দেশে ৫ দিন ধরে বেনাপোল রুটে কোনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে না। বাস মালিক সমিতির নির্দেশ পেলে আমরা পুনরায় বাস চলাচল শুরু করবো। জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মেনেই পরিবহন কর্তৃপক্ষ দিনের বাসগুলো পৌর বাস টার্মিনাল থেকেই ছাড়ছিল। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুবিধার কথা চিন্তা করে রাতের বাস চেকপোস্ট টার্মিনালে এসে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ফিরে যাচ্ছিল পৌর টার্মিনালে। কিন্তু ২২ নভেম্বর গভীর রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসের যাত্রীদের হঠাৎ করে পৌর বাস টার্মিনালে নামিয়ে নেওয়া হয়। চেকপোস্ট টার্মিনালে বাস প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখে মালিক সমিতি। ভারতফেরত পাসপোর্টযাত্রী কবির হোসেন বলেন, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় কারণে তাড়াতাড়ি ফিরতে হয়েছে। এখানে এসে দেখি বাস বন্ধ। আরেক বিপদ, হাতে টাকা পয়সাও কম। এখন ট্রেনে যশোর যাচ্ছি। দেখি, সেখান থেকে কীভাবে বাড়ি যাওয়া যায়। যশোর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন পাপ্পু বলেন, বেনাপোল চেকপোস্টে বন্দর ভেহিক্যাল টার্মিনাল চালু হওয়ায় কমে গেছে গাড়ির জট। বাস চলাচলে কোনও যানজট হয় না। ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী খালি ট্রাক একলাইনে না রেখে পাশাপাশি ৩-৪টি করে রেখে রাস্তার একপাশ পুরোটা দখল করে রাখে। আর এ জন্যই মূলত যানজটের সৃষ্টি হয়। দূরপাল্লার বা লোকাল কোনও বাসের কারণে যানজট হয় না। দূরপাল্লার যাত্রীদের নিরাপত্তা ও দুর্ভোগের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিবেচনার জন্য দাবি জানান তিনি। এদিকে, টানা ৫ দিন ধরে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারী যাত্রীরা পড়েছেন সীমাহীন ভোগান্তিতে। গন্তব্যে যেতে তারা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রেন ব্যবহার করছেন। এতে ভোগান্তি, সময় অপচয়ের পাশাপাশি খরচও বেশি হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করছেন। বেনাপোল চেকপোস্টে কথা হয় ভারতফেরত যাত্রী ঢাকার মেহেদী হাসান, নারায়ণগঞ্জে টিপু সুলতান, গাজীপুরের জামাল শেখ, কামাল হোসেন ও রবিন সাহার সঙ্গে। কামাল হোসেন বলেন, ভারত থেকে দেশে ফিরে এখন দেখছি দুর্ভোগের শেষ নেই। পরে তিন জন মিলে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে যশোর যাচ্ছি। সেখান থেকে বাস ধরে বাড়ি যাবো। যশোরের শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী নাজীব হাসান বলেন, কী কারণে তারা (পরিবহন মালিক-শ্রমিক) ধর্মঘট ডেকেছে, সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তাদের কোনোকিছু বলার থাকলে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করতে পারতো। তিনি বলেন, নতুন পৌর বাস টার্মিনালের নিরাপত্তার জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন, নারী-পুরুষের জন্যে পৃথক নামাজের স্থান, ব্রেস্ট ফিডিংয়ের জন্যে কর্নার সবকিছুই রয়েছে। আমরা বলেছি, পাসপোর্টযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্যে রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তারা সীমান্তে যাত্রী নামিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু কোনও বাস আমরা সেখানে থাকতে দেবো না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ