ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বঞ্চনার গল্প যেন অরণ্যেরোদন চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলে ৩ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিলেন কর্মচারীরা রাষ্ট্র সংস্কারে উপেক্ষিত নারী তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু-আইন উপদেষ্টা শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি প্রথমবারের মতো বিটিভির স্টুডিও থেকে হচ্ছে বাজেট ঘোষণা ঘাটতি কমানোর লক্ষ্য নিয়ে নতুন বাজেট আজ দুধ শুধু পণ্য নয় এটি সংস্কৃতির অংশÑ মৎস্য উপদেষ্টা রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টি পাহাড় ধসের ঝুঁকি সিলেটে টিলা ধসে একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু বিজিএমইএ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ‘ফোরাম’ প্যানেল বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ জাপা চেয়ারম্যানসহ ২৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা ঝিনাইদহে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত আহত ৪ কেএনএফের ইউনিফর্ম জব্দের ঘটনায় কারখানা মালিক রিমান্ডে মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই আরও ১১ জনকে পুশইন, মোট সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে নয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৬০ কিমি. বেগে ঝড়ের আভাস সিলেট-মৌলভীবাজারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ছাত্রবেশে সন্ত্রাসীরা শিক্ষাঙ্গন অচল করার পাঁয়তারা

  • আপলোড সময় : ২৬-১১-২০২৪ ১০:১৪:২৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৭-১১-২০২৪ ১২:০৪:৪০ পূর্বাহ্ন
ছাত্রবেশে সন্ত্রাসীরা শিক্ষাঙ্গন অচল করার পাঁয়তারা
* শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে কুচক্রী মহল শিক্ষাঙ্গনকে অচল করার পাঁয়তারা করছে  * ছাত্র সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশ অন্যদিকে চলে যাবে * একটি অবৈধ সমাবেশের মাধ্যমে ছাত্রবেশে সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে চায় * শিক্ষার্থীরা কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয় বরং পরস্পরের বন্ধু


প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চরম বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি নৈরাজ্য-সহিংসতা ও বিক্ষোভ হচ্ছে ঢাকায়। যখন-তখন ইচ্ছে হলেই রাস্তা বন্ধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। আবার কখনো কখনো পান থেকে চুন খসার মতো নিজ নিজ কলেজের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজধানীর উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা স্তরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা চলছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী দফায় দফায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করছে, রাজপথ দখল করে তারা নিজেদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে। এর মধ্যে রয়েছে যান চলাচল বন্ধ করা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, এবং সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করা। এই কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা মূলত এই আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয়। এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের সমন্বয়কদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও উসকানি। এতে রাজধানীর কলেজগুলোতে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে। তবে এসব ঘটনায় সবচেয়ে বেশি শঙ্কায় রয়েছেন ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক ও নগরে বসবাসরত প্রায় কোটি মানুষ। তবে রাজধানীসহ সারাদেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইস্যুতে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, এ বিশৃঙ্খলার পেছনে আসলে কারা কাজ করছে? কারা আন্দোলনকারীদের উস্কানি দিচ্ছে? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেন সহিংসতা থামানোর জন্য কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। সর্বশেষ গত সোমবার ‘মেগা মানডে’ নামে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। যেখানে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা হামলা চালিয়ে কলেজটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। এর আগে ‘সুপার সানডে’ কর্মসূচি ঘোষণা করে সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ তিনটি কলেজে হামলা চালানো হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। তবে সরকারের উপদেষ্টা এবং ছাত্র আন্দোলনের নেতারা মনে করছেন কেউ বা কিছু একে ইন্ধন দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অরাজক পরিস্থিতি, সৃষ্টিতে অন্য পক্ষের উসকানি রয়েছে। আবেগ সামলাতে না পেরে সহিংসতা ও নাশকতায় জড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তবে একটার পর একটা ঘটনা ঘটলেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আর অনাকাঙ্খিত ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনায় ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে অনেকটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন অভিভাবকরা।
জানা গেছে, গত ২০ ও ২১ নভেম্বর ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ সংঘর্ষে জড়ায়। এরপর ২৪ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ২৪ নভেম্বর ন্যাশনাল মেডিক্যালের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অবরোধ করলে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এদিন একদল শিক্ষার্থী পুরান ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এই হামলায় রাজধানীর ১৫টিরও বেশি কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন বলে অভিযোগ ওঠে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়েছে সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজে মামলা ও ভাঙচুর করে। এই হামলায় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন একাত্মতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের যেকোনও যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রদল সর্বদা একাত্মতা পোষণ করে। কিন্তু আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করলে তা কখনোই ছাত্রদল মেনে নেবে না। এছাড়াও ২৪ নভেম্বর রাতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে রাজধানীর ঢাকা কলেজের সঙ্গে ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর সংঘর্ষে দুই কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের আবার আক্রমণ করতে পারে এমন আতঙ্কে রয়েছে সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর আগে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধভাবে পদে বসে যাওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে টিকে থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি নিয়ন্ত্রণ রাখেনি সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর জের ধরেই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টিতে উসকানি দেয়া হয়েছে। সংঘর্ষে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরাই আহত হয়। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, তাদের দেড়শ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বেশ কয়েকটি সংগঠন ও সাধারণ মানুষ। তারা পত্রিকা দু’টিকে ইসলামের শত্রু ও ভারতের দালাল বলে দাবি করছে। এর আগে শুক্রবার, ডেইলি স্টারের সামনে তারা জুমার নামাজ আদায় করে। গত রোববার, প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে তারা নামাজ পড়ার পাশাপাশি ভোজের আয়োজনও করে। এরপর পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ ঘটে এবং ৪ জনকে আটক করা হয়। পরেরদিন সোমবারও তারা কাওরান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এখানেই শেষ নয়, কয়েকদিন ধরে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। তারা প্রায় প্রতিদিনই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করছে, ফলে নগরবাসী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এই আন্দোলনেও আওয়ামী লীগ এবং সরকারবিরোধী কিছু গোষ্ঠীর ইন্ধন থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বুধবার, একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা এই সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে অভিযান চালায়। সংঘর্ষের মাঝে পুলিশের লাঠিপেটায় অনেকেই আহত হন। এর আগে, ৭ কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করে সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। কয়েক দফা সড়ক অবরোধ করে চলা এই কর্মসূচি নগরবাসীর জন্য তীব্র ভোগান্তি সৃষ্টি করে। একই সময়ে, সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে কয়েকদিন ধরে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এরআগে বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে তাবলিগ জামায়াতের দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অনেকবার বলা হয়েছে শ্রমিকরা-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। শুধু শিক্ষার্থীরা না, বহু সংগঠন ঢাকা শহরে আন্দোলন করছে। তারা সড়ক আটকাচ্ছে। এগুলোর সমাধান কী করে হবে, আমি তো একা সমাধান করতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের আহ্বান করছিতোমাদের ন্যায্য দাবি আমার কাছে নিয়ে এসো, সেগুলো পূরণ করা হবে। অনেক দাবি ইতোমধ্যে থেমে গেছে। কারণ আমরা বলেছি, এগুলো ন্যায্য দাবি, আমরা সমাধান করবো। কিছু কিছু দাবি আছে, যেগুলো ন্যায্য না, সেগুলো আমরা মানবো না। ন্যায্য দাবি না হলেও রেললাইন অবরোধ করা হচ্ছে, যাত্রীদের আক্রমণ করা হচ্ছে। এগুলো করলে জনগণই তাদের বিরুদ্ধে যাবে। সেদিক থেকে আমরা সুবিধায় আছি। যারা অন্যায্য দাবি নিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়, তাদের প্রতিরোধ করবে, এমনও বলাবলি হচ্ছে।
অভিজিতের মৃত্যু ও ন্যাশনাল মেডিক্যালে হামলা: ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ২৪ নভেম্বর ন্যাশনাল মেডিক্যালের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এদিন দুপুরে রাজধানীর প্রায় ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের ফটক অবরোধ ও ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একইদিন ন্যাশনাল মেডিক্যালে হামলার পর পার্শ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও হামলা ও ভাঙচুর চালায় শিক্ষার্থীরা। সে সময় দুই কলেজেই স্নাতক প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলমান ছিল। এসময় দুই কলেজের শতাধিক পরীক্ষার্থী ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হন। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। সোহরাওয়ার্দী কলেজের মূল ফটকসহ ক্যাম্পাসে থাকা কলেজের মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেট কারসহ দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের ডিজিটাল নোটিশ বোর্ডটিও ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের নিচতলা থেকে পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় উঠে বাংলা, ইংরেজি বিভাগ ও অফিসরুমে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করে তারা। একই ভবনে অবস্থিত ইসলামিক স্টাডিজ এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগেও ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা। বাদ যায়নি পরীক্ষার হলে থাকা বেঞ্চ ও উপাধ্যক্ষের কার্যালয়ও। তৃতীয় তলায় অবস্থিত প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষণাগারে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এসময় গবেষণাগারে থাকা কঙ্কালটিকেও লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তী অবস্থা বেগতিক দেখে পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা আমাদের উপর হামলা করে। আমাদের সব কক্ষে ভাঙচুর করেছে। কলেজে শিক্ষকদের গাড়িও ভাঙচুর হয়েছে। পুরো কলেজ এখন ধ্বংসস্তূপ। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা আমরা দেখে বলতে পারবো। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বারবার সাহায্য চেয়েছি। কিন্তু তারা শুধু বলেছে, তারা ন্যাশনাল মেডিক্যালে আছেন। কয়েকজন পুলিশ এসেছিল, কিন্তু তারা সংখ্যায় কম ছিল। আমরা বারবার সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছি কিন্তু সেটা পাইনি। তবে পাল্টা অভিযোগ করেন ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, সেদিন তাদের আন্দোলন দমন করতে কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে করে তাদের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন জানান, আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যার বিচারের দাবিতে মিছিল করেছি। পুলিশ আমাদের সহযোগিতা না করে উল্টো মারধর করেছে। তাদের সঙ্গে এই দুই কলেজের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও যোগ দেয়। তবে এ বিষয়ে কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, আধিপত্য বিস্তার নয়, বাইরের কোনও উসকানি রয়েছে। উসকানিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা আবেগে জড়িয়ে পড়ছে সংঘর্ষে। সংঘর্ষের ঘটনায় আমাদের ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এদিকে সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজে হামলার ‘প্রতিশোধ’ নিতে পরদিন ২৫ নভেম্বর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে পাল্টা হামলা, ভাঙচুর ও শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়। এদিন সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছে। ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন দাবি করেছেন, রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলায় তাদের প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এমন করতে পারে আমরা ভাবিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সব ধ্বংস করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে কুচক্রী মহল কাজ করছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশ অন্যদিকে চলে যাবে।
বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিক্যালে সংঘর্ষ: ২৪ নভেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথাকাটির মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরদিনও ২৫ নভেম্বর প্রতিষ্ঠান দুটোর হলগুলোতে ছিল থমথমে পরিস্থিতি। তবে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা সূত্রে জানা যায়, দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। কয়েক দফায় সংঘর্ষের পর মাঝরাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একাধিক টিম।
‘পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা’ দেখছেন উপদেষ্টা নাহিদ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। বড় কোনো পরিকল্পনা না থাকলে একদিনে এতগুলো ঘটনা এটা তো কাকতালীয় নয়। আমরা মনে করছি, এখানে নানান পক্ষের পরিকল্পনা আছে। সরকার সফলভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম করুক এটা অনেকে হয়তো চাচ্ছে না। আমাদের যে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার, তারা তো নানানভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা মনে করি, পুলিশে বড় একটি পরিবর্তন এসেছে। প্রশাসনের স্থবিরতা কাটানোর জন্য প্রশাসনেও পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছি। এই বিষয়গুলো নস্যাৎ করতে আমাদের অনেক বেশি এসব ঘটনায় ব্যস্ত রাখার জন্য, সারা দেশের দৃষ্টি এদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কিনা আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। আমরা এটা তদন্ত করছি। দেশে বা দেশের বাইরে ইন্ধনে কারা জড়িত।
মোল্লা কলেজে ‘ছাত্রবেশে সন্ত্রাসী’ দেখছে পুলিশ: ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, এ ঘটনাকে আমরা দুর্ঘটনা বলবো না। একটি অবৈধ সমাবেশের মাধ্যমে ছাত্রবেশে সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে চায়। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা করেছে।
শিক্ষার শান্তির পরিবেশের আহ্বান নটরডেম কলেজ অধ্যক্ষের: দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান অস্থিরতার প্রেক্ষিতে শিক্ষার শান্তিময় ও সুষ্ঠু পরিবেশ চেয়েছে রাজধানীর নটরডেম কলেজ। সোমবার কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা নটর ডেম পরিবার দেশজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা এবং হামলা-প্রতিহামলার ঘটনার জন্য গভীর উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ কামনা করি, যেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত কয়েকদিনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো দ্রুত ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান প্রয়োজন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ এবং দায়িতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দায়িত্বশীল ও কার্যকর ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। নটরডেম কলেজ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করতে চায় যে, যদি আমাদের কোনো শিক্ষার্থী এসকল ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকে, তবে তাকে কলেজের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আমরা ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ বিজ্ঞপ্তিতে নটরডেম অধ্যক্ষ বলেন, হিংসা, রক্তপাত এবং ভাঙচুর কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না, শিক্ষার্থীরা কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয় বরং পরস্পরের বন্ধু। তাই, আমরা সবাইকে উদাত্ত আহ্বান জানাই আসুন, আমরা সবাই শান্ত থাকি এবং সবার প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখি।
বিশৃঙ্খলায় দেশ-বিদেশি ষড়যন্ত্রও রয়েছে: অনেকের ধারণা, বর্তমান সরকারের কিছু অংশ এসব আন্দোলনে সাহায্য করছে। দেশ-বিদেশি ষড়যন্ত্রও রয়েছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। এই পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নভাবে আন্দোলনকারীদের উস্কানি দেওয়া হচ্ছে, এবং এতে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকতে পারেন। এছাড়াও, ভারতীয় মিডিয়ায় গত কয়েকদিন ধরে সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যার মাধ্যমে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উস্কে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকেও এসব অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। কিছু কিছু কর্মসূচিতে শোনা যাচ্ছে শেখ হাসিনা সরকারের অনুসারীরা সরাসরি ইন্ধন দিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, মিত্ররা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে রাজপথে ছিল, তারা এখন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাইছে। তাদের অতিরিক্ত বিপ্লবী কর্মসূচি রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। তবে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করছেন, যারা সরকারের সুবিধা পাচ্ছে না, তারা এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স