ঢাকা , বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫ , ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
নিবন্ধন চাওয়া ১৪৪ দলই প্রাথমিক বাছাইয়ে অনুত্তীর্ণ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৩৭৫ বাক্সবন্দি মেশিন এখন চায়ের টেবিল সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার সংবাদ সম্মেলন নিয়ে পুলিশের ব্যাখ্যা ঐকমত্যে আসতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো প্রাণনাশের হুমকি দিল প্রতারক ৪ দফা দাবি জোরপূর্বক প্রত্যাগত ওমান প্রবাসী ফোরামের পুলিশ কল্যাণ তহবিল থেকে দেড় কোটি টাকার অনুদান পাবে ৩৮৯ জন বিমানবন্দর থেকে ৯৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠালো মালয়েশিয়া নির্বাচন কমিশনের ৫১ কর্মকর্তাকে বদলি গেটে হাঁটুপানি, ভোগান্তিতে রোগী-স্বজনরা জিয়ার অনুকম্পায় রাজনীতি করে এখন তার পুত্রকে টার্গেট করছেÑ রিজভী চাঁদাবাজির অভিযোগে ওসিসহ ৬ পুলিশ প্রত্যাহার পঞ্চবেকি বয়া নদীর আয়রন ব্রিজ মৃত্যুফাঁদ ময়মনসিংহে মুক্তিপণ দিয়ে মিললো শিশুর লাশ ৪ লাখ টন চাল কিনবে সরকার, বেসরকারিভাবে ৫ লাখ টনের অনুমতি কে কাকে লাল কার্ড দেখাবে, তা ঠিক করবে জনগণ-ডা. জাহিদ বাংলাদেশিদের মিসরের ভিসা দিতে নিষেধাজ্ঞা নেই : দূতাবাস ইইউ’র প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দল ঢাকা আসছে সেপ্টেম্বরে সংরক্ষিত আসন বিলুপ্তির সুপারিশের প্রতিবাদ মহিলা পরিষদের
মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিস

দৈনিক ৬০ টাকা মজুরির সোবহান এখন শত কোটি টাকার মালিক

  • আপলোড সময় : ২০-১১-২০২৪ ০১:০২:৩৯ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২০-১১-২০২৪ ০১:০২:৩৯ পূর্বাহ্ন
দৈনিক ৬০ টাকা মজুরির  সোবহান এখন শত কোটি টাকার মালিক
সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অস্থায়ী উমেদার আব্দুস সোবহান বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্য ও ব্ল্যাক মেইলিং করে এখন শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একাধিক বহুতল ভবন ও গাড়ী ব্যবহার করলেও ঘুষের টাকার মেশিন উমেদার পদেরই কাজ করছেন। বিগত  সরকারের শাসনামলে সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান ও আব্দুস সোবহান গোলাপের কর্মীর দলীয় কর্মীর পরিচয় ব্যবহার করে একক প্রভাব বিস্তার করে চালিয়েছেন নানামুখি অপকর্ম।  দৈনিক জনতার অনুসন্ধানে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত এই উমেদার আব্দুস সোবহান। আব্দুস সোবহান ২০১৪ সালে এই অফিসে দৈনিক হাজিরা-ভিত্তিক অস্থায়ীভাবে উমেদার পদে যোগ দেন। দৈনিক মজুরি ৬০ টাকা। ১০ বছর পর তার ও তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ শতকোটি টাকা। এই মজুরিতে ১০ বছর চাকরি করা সোবহান ও তার পরিবার রাজধানীতে বাড়ি, একাধিক প্লট-ফ্ল্যাট ও গাড়ির মালিক। তার গৃহিণী স্ত্রী ও মায়ের আয়কর নথিতে উল্লেখ আছে ১৫ কোটি টাকাসহ বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সোবহান, তার স্ত্রী ও মায়ের নামে ১০টির বেশি বাড়ি-প্লটের তথ্য উঠে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, ‘উমেদার’ পদটিই সোবহানের আলাদিনের চেরাগ। এ পদ ব্যবহার করে তিনি মোহাম্মদপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ, তদবির-বাণিজ্যের একটি চক্র গড়ে তুলেছেন। মালিক হয়েছেন জানা আয়ের বাইরে বিপুল সম্পদের। তার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেন প্রশাসন ও গণমাধ্যমের কয়েকজন কর্মীও। অপরদিকে  তার শ্যালক রাজিব এবং ভাগ্নে আয়নালসহ বেশ কয়েকজন মিলে গড়ে তুলেছেন এক বিশাল সিন্ডিকেট।
এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা সেবা নিতে আসা জমির মালিকদের জিম্মি করে ক্ল্যাক মেইলিং করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন  বলে অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের প্রধান ফটকের কেচি গেইটে বসানো হয়েছে দারোয়ান। দারোয়ান সাংবাদিকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উমেদার সোবহানের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। সরেজমিন অনুসন্ধানে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে দুপুর ১টায় এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, সোবহানের সম্পদশালী হওয়ার পেছনে আছে মোহাম্মদপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গড়ে ওঠা ঘুষের বিনিময়ে তদবির-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্ম। একাধিক তদন্তেও তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
আব্দুস সোবহান, তার স্ত্রী হালিমা ও মায়ের আয়কর নথিসহ দলিলে দেখা যায়, রাজধানীর আদাবরে সড়কের পাশে ২৪/৩ হোল্ডিং নম্বরের একটি সাততলা বাড়ির মালিক আব্দুস সোবহান। তার আয়কর নথিতে স্থাবর সম্পদ হিসেবে আদাবরের ১০ নম্বর সড়কে ৭১২/১৯/৬৬ নম্বর হোল্ডিংয়ে ৩ দশমিক ৫৯ কাঠা জমিতে ২৪টি ছাপরাঘর, ১০৩৪/৩/বি মোহাম্মদপুর সড়কের ১৭/বি, বি/এফ-এতে ৫ শতাংশ জমিতে ১৮টি ছাপরাঘর (আরএস নং ২৪০, এসএ খতিয়ান নং-৫৯), বাড্ডার সাঁতারকুলে ৫০ শতাংশ অংশীদারত্বে একটি ২ কাঠার প্লট (সিএস খতিয়ান নং ২৯) এবং ৬ শতাংশ জমির (এসএ নং ২৯৩) উল্লেখ রয়েছে।
নথি থেকে জানা যায়, আদাবরের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির ১১ নং সড়কের ৬১৭ নং হোল্ডিংয়ের ভবনটিতে সোবহানের তিনটি ফ্ল্যাট, বছিলা সিটিতে ১৫ কাঠার একটি প্লট, মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর মৌজায় ২০ কাঠার ও কাঁটাসুর মৌজায় ৯৬৫৪ নং দলিলমূলে ১৮ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। আদাবরের ৩ নম্বর সড়কের ৩২২ হোল্ডিংয়ের সিলিকন নামের ভবনের তৃতীয় তলায় একটি ফ্ল্যাটের মালিক আব্দুস সোবহান। ওই ফ্ল্যাটে থাকেন তার এক আত্মীয়, যিনি রাজধানীর অন্য একটি সাবরেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত।
আব্দুস সোবহানের নামে তিনটি মাইক্রোবাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। সোবহানের স্ত্রী ও মা আয়কর নথিতে তাদের ১৫ কোটি টাকা ও বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। অথচ তারা দুজনেই গৃহিণী। এ ছাড়া শাশুড়ি ও আত্মীয়দের নামেও সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে সোবহানের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও তার নিজ জেলা শরিয়তপুরে বিপুল পরিমান আবাদি জমি কিনেছেন উমেদার সোবহান। তার রয়েছে একাধিক মাইক্রোবাস, মিনিবাস ও প্রাইভেটকার। দূর্নীতি দমন কমিশনে একবার অভিযোগ উঠলেও অবৈধ টাকার প্রভাব খাটিয়ে দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে পার পেয়ে যান উমেদার সোবহান।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানিয়েছেন, এ ধরনের অভিযোগ পেলে দুদক যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক সোচ্চার। এসব বিষয়ে ও অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আব্দুস সোবহানের ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো জবাবদিহি নেই। এসব বিষয়ে দুদকের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স