* গাজীপুরের সড়কে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ৫ জন
* বেক্সিমকোর শ্রমিকরা অ্যামাজন কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়
* শ্রীপুরে কেএফএল গ্রুপের খানটেক্স ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকদের বিক্ষোভ
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় ভয়াবহ আগুন লেগেছে। আগুনে শ্রমিকপল্লির কমপক্ষে ২০টি কক্ষ পুড়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কারখানা খোলা রাখাকে কেন্দ্র করে বহিরাগত শ্রমিকরা কারখানাটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস দেরিতে ঘটনাস্থলে আসায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে আশুলিয়ার জিরানী নবী টেক্সটাইল এলাকার অ্যামাজন নিটওয়্যার লিমিটেড (আল আমিন ফ্যাক্টরি নামে পরিচিত) নামে কারখানায় এই ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও গাজীপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে মহানগরীর পানিশাইল এলাকায় ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এবং পরে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ জাড়িয়ে পড়েন। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জিরানী বাজার এলাকার এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গতকাল সকালে স্থানীয় অ্যামাজন ফ্যাক্টরিতে কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। গত কয়েকদিন ধরেই পার্শ্ববর্তী বেক্সিমকো কারখানায় শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। সোমবার স্থানীয় ডরিন নামে আরও একটি কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। পরে বেক্সিমকো কারখানার কয়েকশ শ্রমিক অ্যামাজন কারখানায় এসে হট্টগোল করে কাজ বন্ধ করে রাখতে বলেন। এ সময় অ্যামাজন কারখানার মালিক ও স্টাফরা বাধা দিলে বেক্সিমকো কারখানার এক শ্রমিকের মাথা ফাটিয়ে দেওয়াসহ কয়েকজনকে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে বেক্সিমকোর শ্রমিকরা অ্যামাজন কারখানায় ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। আগুন কারখানা থেকে আশপাশের শ্রমিক কলোনিতে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বললেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুপুর ১টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে না পৌঁছানোয় সবকিছু পুড়ে গেছে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছলে হয়তো এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না। সকাল ১১টায় আগুন লাগলেও তারা দুপুর পর্যন্ত এখানে আসেনি। কারখানার পাশাপাশি শ্রমিকপল্লির অনেক অসহায় শ্রমিকের মূল্যবান জিনিসপত্রসহ আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।
ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার প্রণব চৌধুরী বলেন, জিরানী এলাকায় একটি কারখানায় আগুনের ঘটনা ঘটেছে। আমরা দুটি ফায়ার ইউনিট নিয়ে অনেক আগেই রওনা হলেও পথে আন্দোলনরত শ্রমিকরা বাধা দিয়েছেন। যে কারণে সময়মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারিনি। দুপুর দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট। তবে ততক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
অপরদিকে, গত রোববার ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানাটি খুলে দেওয়া হলেও দুপুরের পর ছুটি দিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার নোটিশ দেখতে পান। কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে তারা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের জিরানী এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই সময়ে বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরাও একই স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন। এ সময় শ্রমিক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় কয়েকজন আহত হন। একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা সাভারের আশুলিয়ায় জিরানি বাজারের পাশে অ্যামাজন নিটওয়্যার নামের কারখানায় আগুন দেন।
এলাকাবাসী, পুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, বেক্সিমকোর শ্রমিকরা সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় নিরাপত্তার স্বার্থে আশপাশের ২০টি কারখানায় কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করে। কর্তৃপক্ষ গত ১ নভেম্বর থেকে পানিশাইল এলাকার ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল।
গাজীপুর শিল্পপুলিশ ২-র পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, বেক্সিমকোর কারখানার শ্রমিকরা বেতন ছাড়া সড়ক থেকে যেতে চাচ্ছেন না। বিষয়টির সমাধান করা উচিত। এখানে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে আশপাশের ২০টি কারখানায় গতকাল সোমবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, শ্রমিকরা পানিশাইল ও কলতাসুতি এলাকায় ঢুকে পড়ে লোকজনদের মারধর করেন। ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকাবাসী শ্রমিকদের ধাওয়া দেন। বেশ কিছু সময় ত্রিমুখী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। এ সময় ডরিন ফ্যাশন ও বেক্সিমকোর কিছু শ্রমিক পূর্ব কলতাসুতি এলাকার অ্যামাজন নিটওয়্যার পোশাক কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, শিল্পপুলিশ, থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে।
গাজীপুরের কাশিমপুর ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ আরিফুল ইসলাম বলেন, গতকাল সোমবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে উত্তেজিত শ্রমিকরা ওই পোশাক কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেন। ডিপিজেড ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও এখনও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
এদিকে গাজীপুরের শ্রীপুরে কেএফএল গ্রুপের খানটেক্স ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনসহ বিভিন্ন দাবিতে কাজ বন্ধ করে কারখানা অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করেছেন। গতকাল সোমবার সকাল ৮টায় তারা কারখানার প্রধান ফটকে প্রবেশ করে অ্যাসেম্বলি পয়েন্টে অবস্থান নেন। পরে উৎপাদন ফ্লোরে প্রবেশ না করে সেখানেই বিক্ষোভ করতে থাকেন। জানা গেছে, শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বারতোপা বাজারের পশ্চিমে এই কারখানায় শ্রমিকরা বেতন-ভাতাসহ অন্য বকেয়ার দাবিতে গত দুই দিন ধরে কারখানা অভ্যন্তরে আন্দোলন করে আসছেন। বিক্ষোভকারী শ্রমিক নয়নতারা, মৌসুমি, অহাম্মদ, বিপুল, মাজহারুলসহ অন্যরা জানান, প্রতি মাসের সপ্তম কর্মদিবসে বেতন দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কর্তৃপক্ষ অনিয়মিতভাবে ভেঙে ভেঙে বেতন দিচ্ছে। প্রতি মাসেই ২০ তারিখের পর আমাদের বেতন দেয়। এর মধ্যে শ্রমিকদের বেতন দিলেও সুপারভাইজার, ডিস্ট্রিবিউটর, মার্কারম্যানদের বেতন অর্ধেক অর্ধেক দিয়ে থাকে। লাইন চিফ, ইনচার্জ ও ম্যানেজারদের বেতন গত দুই মাস ধরে বকেয়া রয়েছে। কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসেই বেতন দেওয়ার তারিখ দিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। তারা আরও জানান, পারিবারিক জরুরি সমস্যার কারণে এক/দুইদিন ছুটি চাইলে ছুটি দেয় না, তখন অনুপস্থিত হলে বিনা করণে তাৎক্ষণিক চাকরিচ্যুত করে। কোনও ধরনের শ্রম আইন না মনে কারখানা মালিক শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করে। তাছাড়া গত কয়েক বছর ধরে অর্জিত ছুটি, টিফিন বিল, হাজিরা বোনাস, ইনসেনটিভ বোনাস দেয় না। স্টাফদেরকে গত দুই ঈদে অর্ধেক ঈদ বোনাস দিয়েছে। এ নিয়েও তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল লতিফ জানান, খানটেক্স ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা দুই দিন ধরে কারখানা অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করছেন। গতকাল সোমবার সকালে তারা কাজে যোগদান না করে অ্যাসেম্বলি পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন। কারখানায় শিল্প ও থানা পুলিশ অবস্থান করছে। কারখানার সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক (এজিএম) হুমায়ুন কবির বলেন, বৃহস্পতিবার আমরা কিছু শ্রমিকদের বেতন দিয়ে দিয়েছি। যারা আছে তাদেরকে বলছি, আগামী বৃহস্পতিবার দেবো। কিন্তু তারা এটা না মেনে আন্দোলন করতেছে। ব্যাংক থেকে টাকা দিচ্ছে না, টাকা তুলতে পারতেছি না। এ জন্য বেতন দিতে পারতেছি না। বুঝতে পারছেন, বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি। স্টাফদের দুই-তিন মাসের বেতন বকেয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, স্টাফদের বেতন ক্লিয়ার করা হয়েছে, কোনও বকেয়া নেই।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
শ্রমিক অসন্তোষে আগুন ও ভাংচুর
- আপলোড সময় : ১৮-১১-২০২৪ ১১:১৯:৩৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৮-১১-২০২৪ ১১:১৯:৩৬ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ