উৎপাদন কম দাবি ব্যাবসায়ীদের * অজুহাত মানতে নারাজ ক্রেতা
* দাম কমেছে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ এবং চায়না আদার
* আলু ও পেঁয়াজের দামও তুলনামূলক বেশি
* মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে
* মাছের দামে তেমন কোনও তারতম্য নেই
* মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত
আতাউর রহমান জুয়েল
বাজারে এসেছে পর্যাপ্ত শীতের সবজি। তবে এর প্রভাব পড়েনি দামে। এখনও সবজির দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। গত সপ্তাহের তুলনায় কয়েকটি সবজির দাম গতকাল শুক্রবার কমলেও বেশির ভাগ সবজির দাম বেড়েই চলেছে। বন্যার কারণে উৎপাদন কম, তাই নতুন সবজির দাম সেভাবে কমছে না-এমন অজুহাত ব্যাবসায়ীদের। অন্যদিকে, এসব অজুহাত মানতে নারাজ সাধারণ ক্রেতারা। তারা জানান, দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীদের অজুহাত সবসময় প্রস্তুতই থাকে। এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও হাসফাঁস কমেনি সাধারণ ক্রেতাদের। এদিকে মাছ, মাংস, আলু, পেয়াজ, চাল, ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম প্রায় আগের মতোই রয়েছে। আলু ও পেঁয়াজের দাম তুলনামূলক বেশি, কিছুটা কমেছে আদার দাম। মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। মাছের দামে তেমন কোনও তারতম্য নেই। মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজিতে লম্বা বেগুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, কাঁকরোলের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, দেশি শসার দাম বেড়েছে ২০ টাকা, করলার দাম বেড়েছে ২০ টাকা, ঢেঁড়সের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, দেশি পটলের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, চিচিঙ্গার দাম বেড়েছে ২০ টাকা, বাঁধাকপির (প্রতি পিস) দাম বেড়েছে ১০ টাকা।
যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার ঘুরে গতকাল শুক্রবার দেখা গেছে, বাজারে শিম কেজিতে ২০ টাকা কমে ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০-১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০-১২০ টাকা, শসা ৬০-১২০ টাকা, নতুন আলু ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। ভারতীয় টমেটো ১০ টাকা কমে ১৩০-১৪০ টাকা, কাঁচা টমেটো ১০০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০ টাকা, উচ্ছে ও করলা ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কাঁকরোল ১২০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মূলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০-১০০ টাকা, পটল ৮০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, ধনেপাতার দাম ৫০ টাকা কমে ২০০ টাকা কেজি, প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, লেবুর হালি বিক্রি হয়েছে ৩০-৫০ টাকা দরে। এদিকে মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৮০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে।
নয়াবাজারের ব্যাবসায়ী মশিউর বলেন, নতুন সবজি বাজারে আসা শুরু হয়েছে, দাম অনেকটাই কমে গেছে, আরও কমবে। নতুন সবজি ঠিকঠাক আসা শুরু করলেই আরও দাম কমে যাবে। সাধারণ ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোনও না কোনও অজুহাত তাদের থাকবেই। আরেক ক্রেতা রিপন মাহমুদ বলেন, কবে শেষ ৫০ টাকার নিচে সব সবজি কিনতে পেরেছি সেটা আমরা ভুলে গিয়েছি।
গত সপ্তাহের তুলনায় দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে। চায়না আদার দাম কমেছে ২০ টাকা। অপরদিকে ভারতীয় আদার দাম ২০ টাকা কমেছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ও বড় সাইজের পেঁয়াজ একই দামে বিক্রি হয়েছে। আর মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা করে। এছাড়া লাল আলু ৭০ টাকা, সাদা আলু ৭০ টাকা, বগুড়ার আলু ৮০ টাকা, দেশি রসুন ২৬০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ২৬০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
কেন কমছে না আলু-পেঁয়াজের দাম জানতে চাইলে ব্যাবসায়ী আবু জাফর বলেন, নতুন আলু-পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত এগুলোর দাম কমার সম্ভাবনা নেই। নতুনগুলো আসলেই এগুলোর দাম অনেকটা কমে যাবে। তিনি বলেন, যদিও এখন বাজারে ভারতীয় নতুন আলু পাওয়া যাচ্ছে, তবে সেগুলোর দাম এখন অনেক বেশি।
এছাড়া গতকাল বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৮০-২০৫ টাকা, কক মুরগি ২৯০-৩০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮৫-৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ছিল ১৪৪-১৪৫ টাকা, সাদা ডিম ১৪০-১৪৫ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগি দাম বেড়েছে ৭ টাকা, কক মুরগির দাম কমেছে ২ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম কমেছে ৩-১০ টাকা এবং দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। আর প্রতি ডজনে ফার্মের মুরগির লাল ও সাদা ডিমের দাম বেড়েছে ৪-৫ টাকা।
গতকাল মাছের দামে তেমন কোনও তারতম্য পরিলক্ষিত হয়নি। আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ মাছ ৮০০-১৭০০ টাকা, রুই মাছ ৩৫০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৩৫০-৫০০ টাকা, কালবাউশ ৪০০-৮০০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০-১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৬০০ টাকা, কৈ মাছ ২০০-৬০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা ৪৫০-৬০০ টাকা, বেলে ১০০০-১২০০ টাকা, বোয়াল ৮০০-১০০০ টাকা, কাজলী মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, শোল ৮০০-১০০০ টাকা, মেনি মাছ ৬০০-৭০০ টাকা, চিতল মাছ ৭০০-১০০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটারে খোলা সরিষার তেলের দাম কমেছে ১০ টাকা । ছোট মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪৫ টাকা, মাশকালাইয়ের ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৭৫ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ১১০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
