ঢাকার লালবাগ থানায় দায়ের করা একটি মামলায় লালমনিরহাটের বেশ কয়েকজন স্থানীয় নেতাকে আসামি করা হয়েছে। ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেরে সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে এই মামলাটি করা হয়েছে। আসামি পক্ষের দাবি, এ মামলা রাজনৈতিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানির উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এই ঘটনায় লালমনিরহাটের সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত ৬ আগস্ট ঢাকার লালবাগ এলাকায় সংঘর্ষের সময় নিহত হন শিক্ষার্থী শাহিনুর আলম। তিনি লালমনিরহাটের বড়বাড়ী এলাকার খেদাবাগ হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। এই ঘটনার পর শাহিনুরের ভাই মো. মাজেদুল ইসলাম ২৭ আগস্ট লালবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যার নম্বর ১০। মামলায় লালমনিরহাটের সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সাবেক পৌর মেয়র রেজাউল করিম স্বপনসহ ৭৩ জন স্থানীয় নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ জুন শাহিনুর ঢাকায় আসেন। এরপর থেকেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। ৪ আগস্ট সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলন দমাতে কারফিউ জারি করা হয়। আন্দোলনের সমন্বয়ক লংমার্চের ডাক দিলে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। সরকারের নির্দেশে লালমনিরহাট থেকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকায় অবস্থান নেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ঢাকায় এসে তারা (লালমনিরহাটের নেতাকর্মীরা) গোপন বৈঠক করে আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা করেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। কিন্তু লালবাগ এলাকায় পরদিনও দুর্বৃত্তরা সংঘর্ষ চালায়।
৬ আগস্ট ভোরে শাহিনুরকে লালবাগ এলাকায় এজাহারে উল্লেখিত ব্যক্তিরা গুলি করে হত্যা করে বলে দাবি করা হয়েছে। পরবর্তীতে শাহিনুরের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং লালমনিরহাটের বড়বাড়ী এলাকায় তার দাফন সম্পন্ন হয়।
তবে শাহিনুরের পিতা আব্দুল জাব্বার এক অঙ্গীকারনামায় লিখেছেন, তার ছেলে ঢাকায় একটি অটোরিকশা গ্যারেজে থাকতেন এবং অটো চালানোর কাজ করতেন। ৬ আগস্ট ফজরের নামাজ শেষে গ্যারেজে ফেরার সময় লালবাগ থানার সামনে পুলিশের গুলিতে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
আসামিপক্ষ বলছে, এই মামলা মিথ্যা এবং তাদের রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই এ অভিযোগ আনা হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, শুধুমাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সন্দেহে নির্দোষ ব্যক্তিদের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাদের দাবি, স্থানীয় বিএনপির এক নেতার ইন্ধোনেই এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
মামলার কারণে আসামিরা মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক চাপে আছেন। এই মামলার খরচ বহনে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং সামাজিকভাবে পরিবার ও পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অনেকেই স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন।
লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স এর পরিচালক রমজান আলী সুজন বলেন, আমাদের এলাকার অনেকেই রাজনীতি করেন না, তবুও তাদের নাম মামলায় জড়ানো হয়েছে, যা আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
মামলার বাদী মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, আমার ভাইকে হারিয়েছি, তার জন্য ন্যায়বিচার চাই। যারা এই নৃশংস ঘটনায় জড়িত, তাদের শাস্তি দাবি করছি।
লালবাগ থানার ওসে কেশনু মারমা জানান, মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত চলছে এবং ন্যায়বিচারের জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
এদিকে, অনেকেই তাদের নাম এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন। তারা এই ঘটনায় নিরপেক্ষ ও সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং সকল অভিযোগ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
লালমনিরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র রেজাউল করিম স্বপন বলেন, ৬ আগস্ট আমি লালমনিরহাটেই ছিলাম এবং সেখানেই দাপ্তরিক কাজ পরিচালনায় ব্যস্ত ছিলাম। ঢাকায় সংঘটিত ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এই মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং আমার নামে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে।
তার মত আরও অনেক আসামি দাবি করছেন, তারা ওই সময় ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন না।
আসামিদের দাবি, স্থানীয় বিএনপির একটি মহল তাদের রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে এই মামলা দায়ের করেছে।
লালমনিরহাট আদর্শ ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, মামলাটি আমাদের সম্মানহানি এবং রাজনীতিতে আমাদের অবস্থান দুর্বল করার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।
এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে লালমনিরহাটের সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা মামলায় অন্তর্ভুক্ত নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তি এবং প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি আসামিদের
ঢাকায় মামলা আসামি লালমনিরহাটের
- আপলোড সময় : ০৪-১১-২০২৪ ০৫:১৬:২৩ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৪-১১-২০২৪ ০৫:১৬:২৩ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ